শেষ দিনে কোহিনূর কিংবদন্তি

বাংলা একাডেমিতে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী ঢাকা লিট ফেস্টের শেষ দিন গতকাল সকালে কোহিনূরের কিংবদন্তি শোনালেন স্কটিশ ইতিহাসবিদ উইলিয়াম ডালরিম্পল l ছবি: প্রথম আলো
বাংলা একাডেমিতে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী ঢাকা লিট ফেস্টের শেষ দিন গতকাল সকালে কোহিনূরের কিংবদন্তি শোনালেন স্কটিশ ইতিহাসবিদ উইলিয়াম ডালরিম্পল l ছবি: প্রথম আলো

বাণিজ্য প্রসারের নামে পশ্চিমা ঔপনিবেশিক দেশগুলো যেসব দেশকে উপনিবেশ বানিয়েছিল, সেখানকার ধনসম্পদ তারা নিয়ে গিয়েছিল নিজেদের দেশে। ১৮৫১ সালের লন্ডনের গ্রেট এক্সিবিশনে ব্রিটিশদের নিয়ে যাওয়া সেসব সম্পদের অনেকগুলো প্রদর্শিত হয়। তার মধ্যে একটি ছিল ভারতের কোহিনূর হীরা। তিন দিনব্যাপী ঢাকা লিট ফেস্টের শেষ দিন সকালে কোহিনূরের কিংবদন্তি শোনালেন স্কটিশ ইতিহাসবিদ উইলিয়াম ডালরিম্পল।

ভারতীয়দের কাছে কোহিনূর ছিল স্বর্গীয়, জাদুকরি রত্ন। আর পশ্চিমে এটি ঐশ্বর্যের প্রতীক। ষোড়শ শতাব্দীতে এটি খচিত ছিল ময়ূর সিংহাসনে, মোগল বাদশা শাহজাহানের সিংহাসন ছিল সেটি। ডালরিম্পল বলেন, ১৭৩৯ সালে পারস্যের (বর্তমান ইরান) সম্রাট নাদের শাহ দিল্লি দখল করেন। কোহিনূরসহ ময়ূর সিংহাসনটি পারস্যে নিয়ে যান। এতে একটি অমূল্য চুনিও ছিল। রত্ন দুটি সিংহাসন থেকে খুলে নাদের শাহ দুই বাহুতে পরে থাকতেন। কিন্তু মাত্র আট বছর পরেই নাদের শাহকে হত্যা করা হয়। তাঁর আফগান দেহরক্ষী আহমাদ শাহ কোহিনূর নিয়ে চলে আসেন কান্দাহারে। স্থাপন করেন নিজের সাম্রাজ্য।

আহমাদ শাহের উত্তরসূরিরা সাম্রাজ্য রক্ষা করতে পারল না। অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে লাহোরের শিখ রাজা রণজিৎ সিংয়ের কাছে হেরে যাওয়ার পর কোহিনূরও হাতছাড়া হলো। রণজিৎ সিংয়ের শাসনের প্রতীক হলো কোহিনূর।
১৮১০ সালে রণজিতের রাজ্যে পা পড়ল ইংরেজদের। রণজিতের ব্যক্তিত্ব, সামরিক ও শাসন ক্ষমতার প্রশংসায় তাঁরা পঞ্চমুখ। কিন্তু রণজিতের মৃত্যুর পর ইংরেজ ও শিখদের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। ইংরেজরা পাঞ্জাব দখল করে নেয়। ডালরিম্পল বলেন, নাবালক রাজা দিলীপ সিংকে রাজত্ব ফেরত দিতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির লর্ড ডালহৌসি একটি শর্ত দেন। শর্ত অনুযায়ী, কোহিনূর যায় রানি ভিক্টোরিয়ার কাছে। এখন ব্রিটেনের রানির মুকুটে আছে কোহিনূর।

নারী, শিল্প ও রাজনীতি
ব্রিটিশ অভিনেত্রী ও সাহিত্যিক এসথার ফ্রয়েড, ভারতীয় অভিনেত্রী নন্দনা সেন, অস্ট্রেলিয়ার লেখক বিগোয়া চোয়ল ও বাংলাদেশি লেখক সাদাফ সায্‌ ‘নারী, শিল্প ও রাজনীতি’ নিয়ে
এক আলাপে বসেন। সঞ্চালনায় ছিলেন ব্রিটিশ সাংবাদিক ও লেখক বি রাওলাট। নারী শিল্পী ও সাহিত্যিক হিসেবে অসহিষ্ণুতা ও সন্ত্রাসের পরিস্থিতিগুলো কীভাবে সামনে হাজির হয়, নিজ নিজ দেশের প্রেক্ষাপটে তা তুলে ধরেন বক্তারা।

প্রামাণ্যচিত্রে জন বার্জারের জীবন
অস্কারজয়ী ব্রিটিশ অভিনেত্রী টিলডা সুইনটন পরিচালিত ছবি দ্য সিজনস ইন কান্সি: ফোর পোর্ট্রেটস অব জন বার্জার। বুকারজয়ী ব্রিটিশ সাহিত্যিক ও শিল্প সমালোচক জন বার্জারের ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্রটি। প্রদর্শনের আগে জন বার্জার সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু কথা বলেন টিলডা। পাঠ করেন বার্জারের লেখা ও ভাষণ থেকে কিছু অংশ।

কথায়, পাঠে ঠাকুরবাড়ির মেয়েরা

ডটারস অব জোড়াসাঁকো বইটি নিয়ে আলোচনা করেন বইটির লেখক অরুণা চক্রবর্তী। ঠাকুরবাড়ির নারীদের নিয়ে বলতে গিয়ে বললেন রবীন্দ্রনাথের ব্যক্তিজীবনের ব্যর্থতার কথা। অরুণা বলেন, রবীন্দ্রনাথ কবি হিসেবে যতটা সফল, বাবা হিসেবে ততটাই ব্যর্থ। তবে মেয়েদের জন্য তাঁর ভালোবাসার কমতি ছিল না।

অ্যাডোনিসের কবিতা শুনতে ভিড়

এ বছর ঢাকা লিট ফেস্টের প্রধান আকর্ষণ আরব কবি অ্যাডোনিস। বর্তমান পৃথিবীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই কবি বৃহস্পতিবার উৎসবের উদ্বোধন করেন। পরদিন শুক্রবার মঞ্চে নিজের কবিতা পড়ে শোনান তিনি।

বেশ কয়েকবার নোবেল সাহিত্য পুরস্কারের মনোনয়নের ছোট তালিকায় আসা অ্যাডোনিস চেয়ার ছেড়ে উঠে এলেন। মাইক্রোফোনের সামনে আরবিতে পড়লেন নিজের দুটি কবিতা। কবিতার ভাষা না বুঝলেও দর্শক-শ্রোতারা শুনলেন, কবির আবৃত্তিভঙ্গি থেকে ঝরে পড়ছে দ্রোহ।
তিনি শেষ করার পর লিট ফেস্টের পরিচালক সাদাফ সায্ ইংরেজিতে পড়ে শোনালেন অ্যাডোনিসের দুটি কবিতা। সেগুলো ছিল জেরুজালেমের কাহিনি নিয়ে কবির আল কুদস্‌ গ্রন্থের ‘ইমেজেস-৫’ ও ‘ইমেজেস-৬’।

সমাপনী ও ডিএসসি পুরস্কার
গতকাল সমাপনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে সম্মানজনক সাহিত্য পুরস্কার ডিএসসি পুরস্কার। এবার দ্য স্টোরি অব আ ব্রিফ ম্যারেজ উপন্যাসটির জন্য এ পুরস্কার পান শ্রীলঙ্কার সাহিত্যিক অনুক অরুদপ্রগাসম। সে সময় মঞ্চে ছিলেন ডিএসসি সাহিত্য পুরস্কারের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক সারিনা নারুলা ও অন্য বিচারকেরা। পুরস্কারের সম্পূর্ণ অর্থ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য কাজ করা প্রতিষ্ঠানকে দান করে দিচ্ছেন শ্রীলঙ্কার এই তরুণ সাহিত্যিক।
এরপর লিট ফেস্টের তিন পরিচালক সাদাফ সায্, কাজী আনিস আহমেদ ও আহসান আকবর মঞ্চে উঠে সবাইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। সবশেষে গত কান চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা ছবির লড়াইয়ে থাকা ওকচা ছবিটি প্রদর্শিত হয়।