'ওরা কারও পাপের ফসল না'
আপনি দেশে এসেছেন কবে?
কয়েক দিন হলো। এবার এসে কাউকে জানাতে চাইনি। ছবির কোনো কাজও হাতে রাখিনি। সময়টা পরিবারের সঙ্গেই কাটাচ্ছি।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আপনার অভিনীত ‘গেরিলা’ ছবিটি দেশের অনেকগুলো প্রেক্ষাগৃহে বিনা টিকিটে দেখানো হচ্ছে।
এটা খুব ভালো উদ্যোগ। আগে তো দেশের বিভিন্ন স্থানে মাঠে প্রজেক্টরের মাধ্যমে সব দর্শকের জন্য ছবির প্রদর্শনীর আয়োজন করা হতো। এখন দেশের প্রেক্ষাগৃহগুলোয় বিনা টিকিটে ছবি দেখানোর যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, আমি তাকে সাধুবাদ জানাই। এর ফলে তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হবে। নতুন প্রজন্মের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশে এটি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। আমি প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে দর্শকদের সঙ্গে ‘গেরিলা’ দেখব। চলুন, সবাই মিলে সিনেমা দেখি।
‘গেরিলা’ ছবিটি নিয়ে কিছু বলুন।
‘গেরিলা’ আমার একটি উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র। মুক্তিযুদ্ধের ‘শিল্প দলিল’ হিসেবে ছবিটি এরই মধ্যে সবার কাছ থেকে স্বীকৃতি পেয়েছে। আমি ‘গেরিলা’ ছবিতে নিজেকে উজাড় করে অভিনয় করেছি। আমার বাবা ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। ছবিতে অভিনয় করার সময় মনে হতো, আমি বাবার মতো অকুতোভয় এক গেরিলা যোদ্ধা। সে এক অনন্য অনুভূতি।
আপনি তো কলকাতায় খুবই ব্যস্ত। সেখানে কবে যাচ্ছেন?
আগামী দু-এক দিনের মধ্যেই যাওয়ার কথা আছে।
নতুন বছরের শুরুতে কোন ছবিতে অভিনয় করবেন?
বাংলাদেশের ‘ভাওয়াল সন্ন্যাসী মামলা’ নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করছেন কলকাতার পরিচালক সৃজিত মুখার্জি। এই ছবিতে ‘ভাওয়াল সন্ন্যাসী’ রমেন্দ্র নারায়ণের বোনের চরিত্রে অভিনয় করব। ছবির গল্পে একটি ঐতিহাসিক ব্যাপার আছে। ছবির নাম ‘এক যে ছিল রাজা’। চিত্রনাট্য লিখেছেন সৃজিত নিজেই। এতে রাজকুমার রমেন্দ্র নারায়ণের চরিত্রে অভিনয় করবেন টালিগঞ্জের যিশু সেনগুপ্ত। জানুয়ারি মাসের গোড়ার দিকে ছবিটির শুটিং শুরু হবে।
এরপর আপনার কোন ছবিটি মুক্তি পাবে?
কাছাকাছি সময়ে দুই দেশে আমার দুটি ছবি মুক্তি পাবে। বাংলাদেশে আগামী ৫ জানুয়ারি মুক্তি পাবে সাইফুল ইসলাম মাননু পরিচালিত ‘পুত্র’ আর ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ১২ জানুয়ারি ‘আমি জয় চ্যাটার্জি’। ‘আমি জয় চ্যাটার্জি’ থ্রিলার ছবি। ‘গোয়েন্দা শবর’ সিরিজের দ্বিতীয় চলচ্চিত্র। পরিচালক মনোজ মিশিগান। নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন আবির চট্টোপাধ্যায়। আবির আর আমি এর আগে ‘আবর্ত’, ‘রাজকাহিনী’ ও ‘বিসর্জন’ ছবিতে অভিনয় করেছি। ‘আমি জয় চ্যাটার্জি’ আমাদের চতুর্থ ছবি।
এবার ‘পুত্র’ ছবিটি নিয়ে কিছু বলুন।
স্পেশাল চাইল্ডদের (অটিস্টিক শিশু) নিয়ে ছবির গল্প। সমসাময়িক খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি সমস্যা। সত্য ঘটনা অবলম্বনে ছবির কাহিনি, চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেছেন হারুন রশীদ। তথ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের প্রযোজনায় চলচ্চিত্রটির সার্বিক তত্ত্বাবধানে আছে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেড। এখানে সবার জন্য কিছু বার্তা আছে, আবার বিনোদনও আছে। দর্শকদের অনুরোধ করব, আপনারা অবশ্যই হলে গিয়ে ছবিটি দেখুন। ছবিটি সবার দেখা খুব প্রয়োজন। সবাইকে বলব, যে পরিবারে এ ধরনের ছেলেমেয়ে আছে, তাদের অবস্থানে গিয়ে নিজে অনুভব করুন। তাহলে সবাই বুঝতে পারবেন।
অটিস্টিক শিশুদের সঙ্গে কাজের জন্য নিজেকে কীভাবে প্রস্তুত করেছেন?
এই ছবিতে কাজ করতে গিয়ে আমি এ ধরনের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে মেশার সুযোগ পেয়েছি। তাদের কাছ থেকে দেখেছি। এই সমস্যা নিয়ে পড়াশোনা করেছি। তাদের কীভাবে পরিচালনা করতে হয়, তার ওপর প্রশিক্ষণ নিয়েছি। ওদের খুব কষ্টের জীবন। এ ধরনের সন্তানদের নিয়ে তাদের বাবা-মা কতটা অসহায় থাকেন, তাদের পরিচালনা করা সহজ ব্যাপার না, তাদের বয়ঃসন্ধিকালে কী ধরনের সমস্যা হয়—সবকিছু অবর্ণনীয়। অনেক দিন আগে প্রথম আলোতে দুটি অটিস্টিক মেয়ে আর তাদের মায়ের গল্প প্রকাশিত হয়েছিল। আমি ওদের স্কুলে গিয়েছিলাম। সেই সব অভিজ্ঞতা বলে বোঝানো সম্ভব না। উপলব্ধি করতে হবে।
এখন তো অটিস্টিক শিশুদের নিয়ে অনেক কাজ হচ্ছে।
হ্যাঁ, সরকার এগিয়ে এসেছে। একসময় মনে করা হতো, এ ধরনের শিশু বাবা-মায়ের পাপের ফসল। প্লিজ, এ ধারণা একদম ভুল। ওরা কারও পাপের ফসল না। আমার, আপনার যেমন নানা অধিকার আছে, তেমনি ওদেরও আছে। আসুন, আমরা সবাই এই বিশেষ শিশুদের পাশে দাঁড়াই।