ছবিতে আমি কোনো বার্তা দিই না

>

অনুরাগ কাশ্যপ
অনুরাগ কাশ্যপ

চোখে-মুখে তাঁর রাত জাগার ক্লান্তি স্পষ্ট। প্রচণ্ড ব্যস্ততার মধ্যেও কথামতো সাক্ষাৎকার দিলেন তিনি। তবে সাক্ষাৎকার ঠিক নয়, হলো নিছকই আড্ডা। ইরোজ ইন্টারন্যাশনাল অফিসে প্রযোজক-পরিচালক-অভিনেতা অনুরাগ কাশ্যপের সঙ্গে এই আড্ডায় প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধি দেবারতি ভট্টাচার্য। আগামী ১২ জানুয়ারি মুক্তি পেতে চলেছে তাঁর পরিচালিত ছবি মুক্কাবাজ। স্বাভাবিকভাবে আড্ডার শুরুতে উঠে এল অনুরাগের আসন্ন ছবির কথা।

সাধারণত আপনি প্রেমের ছবি বানান না। কিন্তু ‘মুক্কাবাজ’ প্রেমের ছবি। নিজের চিরাচরিত ধারার বাইরে গিয়ে ছবি বানালেন কেন?

আমি শুরু থেকেই লাভ স্টোরি নিয়ে কাজ করছি। তবে একটু অন্য রকম। এবারও অন্য ধারার ভালোবাসার ছবি বানিয়েছি। দেখুন, খুব ভালো লাগবে। আর প্রেমের ছবি অনেক বেশি শক্তিশালী। প্রেমের ছবির মাধ্যমে অনেক কিছু বলা যায়।

আপনি প্রথম কখন বুঝতে পারলেন যে প্রেম কী?

৪৮ বছর বয়সে এসে বুঝতে পেরেছি প্রেম কী। এত দিন পর্যন্ত শুধুই ছুটে বেড়াচ্ছিলাম।

প্রেমের পরিভাষা বলতে আপনি কী বোঝেন?

শুধু আমি নই, আজ পর্যন্ত কেউই বিষয়টা উদ্ধার করতে পারেনি। তাহলে এত প্রেমের ছবি হতো না। তবে আমার চোখে সুফি রোমান্টিক ব্যক্তিটি হলো ইমতিয়াজ আলী। ও সারাক্ষণ নানা জায়গায় ঘুরে বেড়ায়। আর ইমতিয়াজ সব থেকে কম প্রেমে পড়ে। জানি না ও কিসের খোঁজে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ইমতিয়াজকে আপনি পার্টিতে দেখবেন না। এমনকি মুম্বাইতে পাবেন না। আমার মনে হয় ইমতিয়াজ এবার রোমে পাকাপাকিভাবে থেকে যাবে।

শুনেছি, আপনি বারবার প্রেমে পড়েন। কী রকম নারী অনুরাগ কাশ্যপের পছন্দ?

 ‘গার্ল নেক্সট ডোর’-এ আমার সমস্যা আছে। এ ধরনের মেয়েদের আমি একদম পছন্দ করি না। আমি শক্তিশালী ও সাহসী মেয়েদের পছন্দ করি। তাই আমার ছবির মেয়েরা অনেক বেশি শক্তিশালী। তাঁদের দেখে আমার মধ্যে প্রেম জন্মায়। আমি সেই সব মেয়ের প্রেমে পড়ি, যারা কারও ওপর নির্ভরশীল নয়। আর আমার কোনো ইগো সমস্যা নেই। দরকার হলে আমি তার জন্য কফি বানাব, রান্না করব। আমি সমস্যায় পড়লে তার কাছে সাহায্য চাইতেও কুণ্ঠাবোধ করব না।

 ‘মুক্কাবাজ’ ছবির নায়িকা জোয়া হুসেন বলিউডে এক নতুন মুখ। লক্ষ্ণৌর মেয়ে জোয়াকে নির্বাচন করার কারণ কী?

জোয়ার একটা শর্ট ফিল্ম দেখে ওকে পছন্দ করি। ও খুবই শক্তিশালী অভিনেত্রী।

আপনি তো বিজ্ঞানী হতে চেয়েছিলেন। হলেন পরিচালক—

হ্যাঁ, পরিচালনা ছাড়া কিছু ভাবতে পারি না। তবে পরিচালক না হলে হয়তো খানসামা হতাম।

রান্নাবান্না করতে কি ভালোবাসেন?

হ্যাঁ, রান্না করতে ভালোই লাগে। ছোটবেলা থেকেই রান্না করতে ভালোবাসি।

অনুরাগ কাশ্যপের সিগনেচার ডিশ কী?

হা হা হা, (সশব্দে হেসে)। মাটন দোপেঁয়াজা আর পালং গোস্ত। মাটন দোপেঁয়াজার বিশেষত্ব হলো, এই খাবারটা রান্না করার সময় এতটুকু জল পড়ে না। পুরো রান্নাটা পেঁয়াজে হয়। আমার বাবা এই রান্নাটা শিখিয়েছেন। আর পালং গোস্ত আমি দিয়া মির্জার মায়ের কাছ থেকে শিখেছি। দিয়ার বাড়িতে গিয়ে পদটা খেয়ে দারুণ লাগে। তখনই ওর মায়ের কাছে রেসিপি চাই।

‘মুক্কাবাজ’ ছবির ট্রেলার লঞ্চের সময় বলেছিলেন যে আপনি এখনো বেনারসের ঘাটে শুয়ে থাকেন। আপনি কি সাধারণ জীবনযাপনে বিশ্বাসী?

আমি আমার একটা ছবিতে মাত্র রিসোর্টে ছিলাম। বাকি ছবিতে সাদামাটা লজে থাকতাম। আমি নিজের কাজ নিজে করতে বেশি পছন্দ করি। নিজের কফি বানানোর মেশিন সঙ্গে থাকে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমি ভীষণই নাক উঁচু। আমার জুতোর খুব শখ। অত্যন্ত দামি দামি জুতো পরি। আসলে আমার বাবা ছোটবেলায় বাটা কোম্পানির একটা জুতো কিনে দিতেন। আর যতক্ষণ না পর্যন্ত জুতটা ছিঁড়ে যাচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি নতুন জুতো কিনে দিতেন না। এ কারণেই হয়তো নতুন নতুন জুতো কিনতেই থাকি। কফির ক্ষেত্রেও আমার খুব বাছবিচার। কফি যেমন গন্ধ শুঁকে খাই, মনের মতো না হলে কফি খাই না।

আমির খান এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে ছবি হিট হলে তার ক্রেডিট পরিচালক এবং গল্প লেখকের। আবার ছবি ফ্লপ হলেও তার দায়ভার তাঁদেরই।

পুরোপুরি একমত নই। আমার মনে হয় কোনো সিনেমা হিট হলে তার দাবিদার হন অভিনয়শিল্পীরা। সব প্রশংসা তাঁদের কপালেই জোটে। তখন পরিচালকের নামই কেউ নেয় না। আর ছবিটি ফ্লপ হলে তার দায়ভার চাপিয়ে দেওয়া হয় পরিচালকের কাঁধে। সেখানে অভিনেতার দোষ কেউ দেখতে পায় না।

‘মুক্কাবাজ’ ছবির ট্রেলার মুক্তির সময় বলেছিলেন যে আমাদের দেশে খেলাধুলায় মেডেলের থেকে ওই সম্পর্কীয় ছবির সংখ্যা বেশি। পরিচালক কবির খান আপনার সঙ্গে একমত হন। তবে উনি মনে করেন খেলোয়াড়দের প্রেরণা জোগাতে খেলাধুলা বিষয়ে মুভি বানানো প্রয়োজন। আপনি কী মনে করেন?

আমিও একমত। মনে করি খেলোয়াড়দের প্রেরণা জোগানো প্রয়োজন। তবে আমরা কেউ একটা মেডেল জিতলেই তাঁকে ঘিরে উন্মাদনা দেখাই। তাঁকে নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ছবি বানাতে শুরু করে দিই। এসব বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। কারণ সেই খেলোয়াড় এসব কিছুর পর নিজের জীবনের লক্ষ্যটাই হারিয়ে ফেলেন। সানিয়া মির্জার বিয়ের পর তাঁকে ঘিরে একই রকম পাগলামো শুরু হয়েছিল। মেয়েটা আর খেলতেই পারল না। মাঝখান থেকে টেনিসটাই সানিয়া ভুলে গেল। সানিয়া কী পরছে, সানিয়া কী খাচ্ছে তা নিয়েই সবাই ব্যস্ত।

বিরাট-আনুশকার বিয়ে নিয়ে তো বাড়াবাড়ি হচ্ছে। বিরাটও কি এই পাগলামোর শিকার হতে চলেছেন?

না, না, বিরাট একদম ব্যতিক্রম। ও মিডিয়াকে হ্যান্ডেল করতে জানে। বিরাট নিজের কাজের প্রতি ফোকাস।

আপনাকে সামাজিক মাধ্যমে খুব একটা দেখা যায় না। এই প্রযুক্তির যুগে প্রযুক্তি থেকে দূরে কেন?

আমার তো মনে হয় মোবাইল বস্তুটা যত নষ্টের গোড়া। শুধু শুধু সময় নষ্ট করে। আমি খুব একটা ফোনে থাকি না। ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছি। ছবি মুক্তির আগে পিআরদের কথামতো টুইটারে নানান পোস্ট করি। ছবি মুক্তির সঙ্গে সঙ্গে আবার গায়েব হয়ে যাই। আমার ফোনের পেছনে সময় নষ্ট না করে বই পড়তে ভালো লাগে। রোজ এক ঘণ্টা করে সাঁতার কাটি। আর কিছু না থাকলে ঘুমাই। এখন সবুজ মাঠে গিয়ে খেলার মজাটাই হারিয়ে যাচ্ছে। মাঠের জায়গায় শুধুই বহুতল।

শেষ কী ছবি দেখেছেন?

ছবি দেখার সময় হয় না। তবে আজ এখনই আমার বন্ধুর সিনেমা ব্রাইট দেখতে যাব। তাই এবার উঠতে হবে।

কিন্তু অনেক কথা তো এখনো বাকি—

আবার পরে আড্ডা দেওয়া যাবে। আমাকে এখনই ফিনিক্স মিলে ছুটতে হবে। আর বুঝতেই পারছেন কতটা দূর যেতে হবে। হাতে একদম সময় নেই।

ঠিক আছে, শেষ প্রশ্ন, ‘মুক্কাবাজ’-এর মাধ্যমে আপনি কী বার্তা দিতে চেয়েছেন?

সাধারণত আমি ছবির মাধ্যমে কোনো বার্তা দিই না। এবার আপনি ছবিটা দেখে বলবেন কী বার্তা দিয়েছি। আমি আপনার কাছ থেকে পরে শুনব।