শিল্পী অধৈর্য হলে শিল্পের অশ্রদ্ধা হয়

২১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে চয়নিকা চৌধুরীর পরিচালনায় মাছরাঙা টিভিতে প্রচারিত হলো টেলিছবি কী আছে সেই খামে। এটি তাঁর ৩৫০তম নির্মাণ।

টেলিছবিটির গল্প একটি অফিসের ঘটনা নিয়ে। বস শহীদুজ্জামান সেলিমের অনৈতিক প্রস্তাবে সম্মত না হওয়ায় দেবলীনাকে বরখাস্ত করা হয়। সে চাকরি হারিয়ে ভেঙে পড়ে। তার পাশে এসে দাঁড়ায় সহকর্মী মিলন। সে একটি মুখবন্ধ খাম নিয়ে বসকে গিয়ে বলে, দেবলীনার বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহার করা না হলে এই খামের সব গোপন নথি ফাঁস করে দেবে। বস প্রথমে শক্ত থাকলেও পরে নিজের শত অপকর্মের কথা ভেবে দুর্বল হয়ে যায়। এর মধ্যে সে কৌশল হিসেবে মিলনকে ভয় দেখায়, তার প্রেমিকার মাধ্যমে লোভ দেখায়, কিন্তু কিছুতেই কাজ না হলে বস শেষমেশ নত হয় এবং দেবলীনার বরখাস্ত আদেশ ছিঁড়ে ফেলে। এরপর তাদের শর্ত মোতাবেক বস নিজের অপরাধ স্বীকার করে এবং সবার কাছে ক্ষমা চায়। এরপর দুজন জানায়, তার মতো বসের অধীনে আর চাকরি নয়। শেষে বসের মধ্যেও একটা অনুশোচনা আসে।

টেলিছবিতে পাশাপাশি যথেষ্ট সচেতনতামূলক সংলাপ ও দৃশ্য সংযোজন করা হয়েছে, যা প্রশংসনীয়। তবে প্রশংসার পাশাপাশি ছোটখাটো দু-একটি দুর্বলতার আছে, যেমন অতিনাটকীয়তা। বাস্তবে আমাদের সমাজের বসরা এত দুর্বল হয় না, এত অসতর্কও হয় না, এত সহজে পরাজিতও হয় না। তবু শেষে বলব, ক্ষমতাধর বসের বিরুদ্ধে এই প্রতিবাদ এবং বসের পরাজয় দেখতে ভালোই লেগেছে।

২০ ডিসেম্বর রাত ৮টা ১৫ মিনিটে তানিয়া আহমেদের কাহিনি ও পরিচালনায় আরটিভিতে প্রচারিত হলো নাটক তুমি আমি পাশাপাশি। এতে অভিনয় করেছেন পূর্ণিমা, মাহফুজ আহমেদ, শিল্পী সরকার, সুজাত শিমুল, জাকারিয়া প্রমুখ।

নাটকের গল্পটি সংক্ষেপে এ রকম: মাহফুজ ও পূর্ণিমা স্বামী-স্ত্রী। দুজন দুই ভুবনের তারকা শিল্পী। মাহফুজ অভিনয়ে আর পূর্ণিমা নৃত্যে। হঠাৎ নাটক নির্মাতা সুজাত শিমুল তাদের দুজনকে জুটি বানিয়ে একটি নাটকের শুটিং শুরু করে। দুজন একত্রে কাজ করতে এসে পূর্ণিমা অনুভব করে, মাহফুজ সহশিল্পীদের প্রতি যতটা অন্তরঙ্গ, ব্যক্তিগত জীবনে তা নয়। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। দূরত্ব বাড়ে। তারপর একসময় সে চলে যায় মায়ের কাছে। পরে অভিমান কমে এলে মাহফুজ তার শাশুড়ির সহায়তায় পূর্ণিমার অজান্তে তার জন্মদিনের এক জাঁকজমক আয়োজন করে। পূর্ণিমা অভিভূত হয়ে অভিমান ভুলে মাথা রাখে মাহফুজের কাঁধে।

এক বাক্যে নাটকটিকে পরিচ্ছন্ন ও আকর্ষণীয় বলা যায়। সংলাপ, চিত্রায়ণ এবং মাহফুজ ও পূর্ণিমার অভিনয় সবই সুন্দর। তারপরও যেন মনে দাগ কাটতে পারে না, কারণ মাহফুজ পূর্ণিমার মাঝে যে দ্বন্দ্ব দেখানো হয়েছে, তা মনে হয়েছে আরোপিত। পূর্ণিমার উপলব্ধিকে লেখক ও নির্মাতা যথার্থ বা যুক্তিপূর্ণ করে তুলতে পারেননি। এ কারণে তা দর্শক মনেও কোনো রেখাপাত করতে পারেনি। আরটিভিতেই, ২১ ডিসেম্বর রাত ১১টা ৩০ মিনিটে প্রচারিত হয়েছে সরাসরি গানের অনুষ্ঠান ‘মিউজিক স্টেশন’। শিল্পী ছিলেন বাদশা বুলবুল ও বুশরা শাহরিয়ার। দুজনকে বলা যায় দুই প্রজন্মের। দুজন প্রায় দুই ঘণ্টারও অধিক একটানা গান করেছেন। এর মাঝে আবার প্রচারিত হয়েছে আরটিভি সংবাদ। সরাসরি গানের মাঝে এমন সংবাদ প্রচার আমাদের কাছে কিছুটা বিষদৃশ মনে হয়েছে। বাদশা বুলবুলের পরিবেশনা ছিল প্রাণবন্ত ও আকর্ষণীয়। তিনি দেশের গান, নিজের গান ও অন্যান্য শিল্পীর জনপ্রিয় গান করেছেন। পাশাপাশি বুশরা শাহরিয়ারকেও মনে হয়েছে অনেক সম্ভাবনাময়। তাঁর বয়স কম, কিন্তু ইতিমধ্যে তিনি গান করার পাশাপাশি, গান রচনা, সুর সংযোজনসহ নানামুখী প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। তাঁর কণ্ঠ ও পরিবেশনা ছিল আন্তরিক। তবে বেশ কিছু গানে মাঝে মাঝেই সুরের সমস্যা মনে হয়েছে। বিশেষ করে শেষের দিকে যখন তিনি অন্যের জনপ্রিয় গানগুলো করছিলেন। তাঁর গান শুনে আমাদের মনে হয়েছে তিনি অনেক গুণী, অনেক সম্ভাবনাময় ঠিকই, তবে গণমাধ্যমে এ ধরনের অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য এখনো তাঁর পুরোপুরি সময় হয়নি। আরও প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। একজন শিল্পীর জন্য ধৈর্যের বিকল্প নেই। তাঁর তো সামনে এখনো অনেক সময় পড়ে আছে। আশা করি শিল্পী বিষয়টি আন্তরিকতার সঙ্গে ভেবে দেখবেন।

এটিএন বাংলায় ‘সেন্স অব হিউমার’ প্রচারিত হলো ২৩ ডিসেম্বর রাত ১১টায়। এটি ছিল এ বছরের শেষ অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন নাজিম শাহরিয়ার জয়। আমরা আগেও বলেছি, জয়ের উপস্থাপনায় যে হিউমার সেন্স ও উপস্থিত বুদ্ধিমত্তা, তা সত্যিই অনুষ্ঠানের নামকরণকে করেছে সার্থক ও দ্যুতিময়।

এদিন অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন লেখক ও নির্মাতা সুমন আনোয়ার এবং অভিনয়শিল্পী মৌসুমী হামিদ। উপস্থাপক জয় তাঁদের দুজনের কর্মক্ষেত্র, পেশাদারিত্ব থেকে শুরু করে তাঁদের ব্যক্তিজীবন, প্রেম, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা—একে একে সবই তুলে এনেছেন দর্শকের সামনে।