ব্যান্ড ভাঙার বছর

জলের গানের সঙ্গে আর মঞ্চে উঠবেন না কনক আদিত্য (বাঁয়ে)
জলের গানের সঙ্গে আর মঞ্চে উঠবেন না কনক আদিত্য (বাঁয়ে)

এমনিতে সময়টা ভালো যাচ্ছে না। তেমন কোনো নতুন গান, অ্যালবামের দেখা নেই। কনসার্টও কমে গেছে। এ বছর সেই যেন ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ ঢাকার ব্যান্ডসংগীত ভুবনে। একের পর এক ব্যান্ডদলে ভাঙন লেগেছিল। বলা যায়, ২০১৭ সালকে ব্যান্ড ভাঙনের বছর বলা যায়। জনপ্রিয় বেশ কয়েকটি ব্যান্ডের ভাঙন ও সদস্য বদল ছিল উল্লেখযোগ্য।

অর্থনৈতিক দ্বন্দ্বে মাইলসে ভাঙন
দেশের অন্যতমে জনপ্রিয় গানের দল মাইলসের ফাটল ধরে, ফিসফিস শুরু হয় এপ্রিল থেকেই। বেশ কিছু কনসার্টে গানের অন্যতম সদস্য শাফিনকে ছাড়া অংশ নিয়েছে মাইলস। এদিকে মাইলসের মালিকানা শাফিন আহমেদের নিজস্ব দাবি করে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন শাফিন। নোটিশে কাউকে অভিযুক্ত করা না হলেও মাইলস নাম ব্যবহার করে কেউ যেন গান করতে না পারেন তার জন্য ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইন মোতাবেক মাইলস ব্যান্ডের মালিকানা নিজের নামে করে নিয়েছেন শাফিন। তিনি দাবি করেন, মাইলস ব্যান্ড এখন ‘মাইলস ব্যান্ড লিমিটেড’-এর সম্পত্তি। যার একক অধিকার শুধু শাফিন আহমেদের। গত ১৫ নভেম্বর কোম্পানি আইনে নিবন্ধিত হয় মাইলস। হামিন আহমেদের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ এনে শাফিন বলেন, অন্তত ছয়টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে হামিন আহমেদ ব্যক্তিগত স্বাক্ষর দিয়ে মাইলসের নামে টাকা তুলেছেন। আমি প্রাপ্য টাকা চাইতে গেলে তার কোনো সদুত্তর দেননি হামিন আহমেদ। তা ছাড়া মানাম আহমেদ, হামিন আহমেদসহ ব্যান্ডের অন্য সদস্যরা বিভিন্ন জায়গায় আমার সম্পর্কে নেতিবাচক কথা বলে বেড়াচ্ছেন। তাই নিবন্ধনের মাধ্যমে এবার মাইলসকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিলাম। তাঁরা চাইলে এখানে থাকতে পারেন। অন্যদিকে ব্যান্ডের অপর চার সদস্য শাফিনের সঙ্গে আর গান করবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। মাইলস শাফিনের একার নয় বলে দাবি করেন হামিন আহমেদ।

শিরোনামহীন ছেড়ে তুহীনের ‘আভাস’
হুট করেই খবরটা সামনে আসে। গত ৬ অক্টোবর শিরোনামহীন ব্যান্ডের অন্যতম ভোকালিস্ট তুহীন ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে ব্যান্ড থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এরপর শেখ ইশতিয়াক নামের নতুন একজনকে নিয়ে শিরোনামহীন নতুন লাইনআপ সাজায়। শিরোনামহীনের জনপ্রিয় গানগুলো কারও ব্যক্তিগত নয়, দলের সম্পদ বলে মন্তব্য করেন ব্যান্ডের অপর সদস্য জিয়া। তিনি বলেন, ‘শিরোনামহীনের গান যদি কেউ নিজের গান বলে প্রচার করে কিংবা কনসার্টে গায়, তাহলে আমরা তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব।’ তুহীন দল ছাড়ার পর শিরোনামহীনের বর্তমান লাইনআপে রয়েছেন জিয়াউর রহমান (বেজ গিটার), কাজী আহমাদ সাফিন (ড্রামস), দিয়াত খান (লিড গিটার), রাসেল কবীর (কি-বোর্ড), শেখ ইশতিয়াক (ভোকাল)।
পরে বিজয় দিবসে ‘আভাস’ নামের নতুন ব্যান্ড করার ঘোষণা দেন তুহীন। নতুন এই ব্যান্ডের বর্তমান লাইনআপে আছেনÑ লিড—সুমন, বেস—রাজু, ড্রামস—রিঙ্কু, কি-বোর্ডস—শাওন, ভোকাল—তুহীন। আগামী জানুয়ারিতে নতুন গান প্রকাশ করবে ‘আভাস’। ফেব্রুয়ারি থেকে নিয়মিত কনসার্ট করবে। ‘আভাস’ ব্যান্ডের পাঁচ সদস্যের তিনজনই ব্যান্ড অবসকিউরের সঙ্গে যুক্ত। তাঁরা হলেন রাজু, রিঙ্কু, শাওন।

তার মানে অবসকিউরেও ভাঙন
অবসকিউরে ব্যান্ডের তিন সদস্যের ‘আভাস’-এ যোগ দেওয়ার বিষয়টিকে ভালোভাবে নেননি এই ব্যান্ডের প্রধান ও কণ্ঠশিল্পী সাঈদ হাসান টিপু। তিনি বলেন, ‘ওরা ভেবেছিল অবসকিউরে বাজাবে আবার অন্য ব্যান্ডে গিয়ে খ্যাপ মারবে। দুই ব্যান্ড থেকেই রোজগার হবে। কিন্তু আমার ব্যান্ডের কিছু নিয়ম আছে, নীতি আছে। অবসকিউরে ধান্দাবাজি চলবে না। তাদের সঙ্গে আমার কোনো মনোমালিন্য নেই। গানের চেয়ে আয়ের দিকটাই তাদের কাছে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। গানের প্রতি সম্মানবোধ এখনো তৈরি হয়নি। তাদের প্রতি আমার শুভকামনা রইল। এরই মধ্যে অবসকিউর ব্যান্ডে কি-বোর্ডে যোগ দিয়েছেন বিনোদ আর বেস গিটারে ফয়সাল। শিগগিরই নতুন ড্রামার যুক্ত হচ্ছেন।

ওয়ারফেইজ ছাড়লেন কমল
১৯৮৪ সাল থেকে ব্যান্ড ওয়ারফেইজের গিটার কাঁধে নিয়ে মঞ্চ মাতিয়েছেন ইব্রাহিম আহমেদ কমল। গত ২০ ডিসেম্বর কমল তাঁর ফেসবুক ফ্যান পেজে এক স্ট্যাটাসে বলেন, যাঁরা হেভি মেটাল গান করেন তাঁদের এক্সটিম শারীরিক ফিটনেস দরকার হয়। অ্যাথলেটরা ইনজুরিতে পড়লে যেমন তাঁদের পর্যাপ্ত চিকিৎসা ও বিশ্রাম নিতে হয়, হেভি মেটালে যাঁরা গান করেন, তাঁদের অবস্থা একই রকম। ২০১০ সালে আমি গুরুতর ইনজুরিতে আক্রান্ত হই, যা এখনো আছে। চিকিৎসকেরা আমাকে পুরো বিশ্রামে থাকতে বলেছেন।

কনক নেই জলের গানে
শোনা যাচ্ছিল, কনক আদিত্য চলে গেছেন দল ছেড়ে। একদিন কনকই জানালেন ফেসবুকের মাধ্যমে, জলের গান থেকে সরে গেছেন তিনি। কিন্তু সেখানেই বলেছেন, নতুনদের মাধ্যমেই বেঁচে থাকবে জলের গান।