উদীচীর জাতীয় সাংস্কৃতিক সম্মেলন শুরু

বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী আয়োজিত জাতীয় সাংস্কৃতিক সম্মেলনে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রা শহীদ মিনার থেকে বের হয়ে টিএসসি দিয়ে শাহবাগ হয়ে আবার শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। ছবি: প্রথম আলো
বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী আয়োজিত জাতীয় সাংস্কৃতিক সম্মেলনে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রা শহীদ মিনার থেকে বের হয়ে টিএসসি দিয়ে শাহবাগ হয়ে আবার শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। ছবি: প্রথম আলো

শুরু হলো বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী আয়োজিত জাতীয় সাংস্কৃতিক সম্মেলন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তিন দিনব্যাপী এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রবীণ কৃষক নেতা লোকশিল্পী আবুল হাশিম।

উদ্বোধনী পর্বের শুরুতেই জাতীয় সংগীত ও সংগঠন সংগীত পরিবেশন করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের শিল্পীরা। এর পরপরই একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা শহীদ মিনার থেকে বের হয়ে টিএসসি দিয়ে শাহবাগ হয়ে আবার শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। সারা দেশ থেকে আগত উদীচীর শিল্পী-কর্মীরা শোভাযাত্রায় নেচে-গেয়ে আনন্দে মাতেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক সভাপতি সৈয়দ হাসান ইমাম, গোলাম মোহাম্মদ ইদু ও কামাল লোহানী।

শোভাযাত্রা শেষে শুরু হয় উদ্বোধনী সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। ‘জীবন খুঁজে পাবি’ শিরোনামের এ পরিবেশনাটি গ্রন্থনা করেছেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার। নির্দেশনা দিয়েছেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহসাধারণ সম্পাদক সংগীতা ইমাম আর সংগীত পরিচালনা করেছেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহসভাপতি হাবিবুল আলম। এ পরিবেশনায় কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের দৈনন্দিন জীবনসংগ্রামের চিত্র তুলে ধরা ছাড়াও দেশে চলমান সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদ তুলে ধরা হয়।

বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী আয়োজিত জাতীয় সাংস্কৃতিক সম্মেলন শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তিন দিনব্যাপী এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রবীণ কৃষক নেতা লোকশিল্পী আবুল হাশিম। ছবি: প্রথম আলো
বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী আয়োজিত জাতীয় সাংস্কৃতিক সম্মেলন শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তিন দিনব্যাপী এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রবীণ কৃষক নেতা লোকশিল্পী আবুল হাশিম। ছবি: প্রথম আলো

এরপর শুরু হয় আলোচনা পর্ব। উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহসভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমানের সভাপতিত্বে এ পর্বের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন জামসেদ আনোয়ার। এতে আলোচনায় অংশ নেন সৈয়দ হাসান ইমাম, বর্তমান সহসভাপতি মাহমুদ সেলিম এবং উদীচীর উপদেষ্টামণ্ডলীর অন্যতম সদস্য ও বাংলাদেশের সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম। এ পর্বটি সঞ্চালনা করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহসাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে।

আলোচনার পর শুরু হয় উদ্বোধনী দিনের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এ পর্বের শুরুতেই সিলেট অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী ধামাইল গান পরিবেশন করেন উদীচীর দক্ষিণ সুনামগঞ্জ সংসদের শিল্পীরা। এরপর সুনামগঞ্জের দিরাই শাখার শিল্পীরা পরিবেশন করেন লোকগান। গণসংগীত নিয়ে মঞ্চে আসেন উদীচী চাঁদপুর জেলা সংসদের শিল্পীরা। এরপর মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণা করেন উদীচী মৌলভীবাজার জেলা সংসদের শিল্পীরা। তাঁদের পরিবেশনার পর ছিল নড়াইলের নড়াগাতি শাখার শিল্পীদের পরিবেশনা। দিনাজপুরের শিল্পীরা আদিবাসী বিয়ের গান গেয়ে মঞ্চ মাতান। আর প্রথম দিনের সবশেষ পরিবেশনা ছিল উদীচী সিলেট জেলা সংসদের নাটক ‘ভানুবিলের লড়াই’। এ পর্বটি সঞ্চালনা করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহসাধারণ সম্পাদক সংগীতা ইমাম ও সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কংকন নাগ।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত উদীচীর তিন দিনব্যাপী এ সম্মেলনে সারা দেশ থেকে উদীচীর শিল্পী-কর্মীরা নিজ নিজ অঞ্চলের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ভান্ডার নিয়ে অংশ নিচ্ছেন। প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে পরিবেশিত হচ্ছে আবহমান বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যবাহী নানা পরিবেশনা। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উদীচীর প্রায় ৫০টি জেলা ও শাখার শিল্পীরা ঐতিহ্যসমৃদ্ধ লোকসংস্কৃতির পরিবেশনা নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন এই সম্মেলনে। তিন দিনের এই সম্মেলনে পরিবেশিত বাংলার লোকজ ঐতিহ্যের গৌরবোজ্জ্বল স্মারক পরিবেশনার মধ্যে রয়েছে গম্ভীরা, গাজির গান, অষ্টক, ধামাইল, জারি গান, পালা গান, গণসংগীত, লোকগীতি, আদিবাসী নৃত্য, নৃত্যালেখ্য, গীতি-আলেখ্য, নাটক, মূকাভিনয়, আবৃত্তি প্রভৃতি। নতুন প্রজন্মের কাছে বাংলা সংস্কৃতির ঐতিহ্য ও ইতিহাস পৌঁছে দেওয়ার প্রত্যয়ে আয়োজিত হতে যাচ্ছে এই সাংস্কৃতিক সম্মেলন। বিভিন্ন জেলা ও শাখার পরিবেশনা ছাড়াও রয়েছে দেশীয় বাদ্যযন্ত্রের প্রদর্শনীর আয়োজন। যেখানে প্রায় ৪০টি দেশীয় বাদ্যযন্ত্র প্রদর্শিত হচ্ছে। রয়েছে আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও বইয়ের দোকান।