আমাকে ডাকতেন 'শিমু' নামে

বেগম মমতাজ হোসেন
বেগম মমতাজ হোসেন

গত ২৮ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন নাট্যকার বেগম মমতাজ হোসেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনের জনপ্রিয় নাটক সকাল সন্ধ্যা শুকতারারনাট্যকার ছিলেন তিনি। সকাল সন্ধ্যা নাটকে শিমু চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন অভিনেত্রী আফরোজা বানু। প্রয়াত এই নাট্যকারকে স্মরণ করেছেন তিনি।

আমরা থাকতাম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাফ কোয়ার্টারে। আমরা যখন বেড়ে উঠি, তখন মমতাজ আপা ছিলেন উদয়ন স্কুলের প্রিন্সিপাল। তা ছাড়া আমার সহপাঠী লাকীর বড় বোন ছিলেন মমতাজ আপা। ওই সময় থেকেই চিনতাম। সকাল সন্ধ্যা নাটকে অভিনয় করার আগে ওনার লেখা বাচ্চাদের একটা নাটকে অভিনয় করেছিলাম। এই মুহূর্তে নামটা মনে নেই। ওই নাটকে অভিনয় করতে গিয়ে মমতাজ আপার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। সকাল সন্ধ্যা করতে গিয়ে দেখলাম এটা তাঁরই চিত্রনাট্য। ওই সময় যেটা হতো, আমাদের নাটকের মহড়া এবং রেকর্ডিংয়ের সময় উনি উপস্থিত থাকতেন। অনেক দৃশ্য নিজে দেখিয়ে দিতেন। অনেক সময় বড় বড় সংলাপ পরিবর্তন ও ছোট করে দিতেন। শুধু তা-ই না, নাটকটির শুটিংয়ের জন্য দুটি বাড়ির দরকার পড়েছিল। তখন তো এত শুটিং বাড়ি ছিল না। তিনি ধানমন্ডি ও গুলশানের দুই ছাত্রের মা-বাবার সঙ্গে কথা বলে দুটি বাড়ি ম্যানেজ করে দিয়েছিলেন। সেখানেই সকাল সন্ধ্যারশুটিং হয়। প্রিন্সিপাল থাকার ফলে স্কুলের সবার সঙ্গেই ভালো সম্পর্ক ছিল আপার।

আফরোজা বানু অভিনেত্রী
আফরোজা বানু অভিনেত্রী

আমি যখন সকাল সন্ধ্যায়শিমু চরিত্রে অভিনয় করি, তখন থেকেই তিনি আমাকে শিমু নামে ডাকা শুরু করেন। এরপর আর কখনো আমার আসল নামে ডাকেননি। তারপর আমি তাঁর লেখা বেলা-অবেলা নামে আরেকটি নাটকে অভিনয় করেছিলাম। তাঁর নাটক হয়তো করা হয়নি। কিন্তু উনি আমাকে প্রায়ই বলতেন, ‘আমার সব নাটকের নায়িকা হবি তুই।’

বেশি নাটকে কাজ না করলেও শিমু চরিত্র করে আমি তৃপ্ত। কারণ ওই সময় মানুষ এই চরিত্রকে ভীষণ পছন্দ করেছিলেন। আমি রাস্তায় বের হলেই সেটা টের পেতাম। অনেক মা আমাকে জড়িয়ে ধরে বলত, আমার ছেলের বউটা তোমার মতো হলো না কেন?

এ সবই সম্ভব হয়েছে মমতাজ আপার গুণে। অনেকেই জিজ্ঞেস করেন মমতাজ আপার নাটকের বিশেষত্ব কী? আমি বলব, ওনার নাটকের সংলাপ এবং চেনা চরিত্রের গল্প। সবাই নাটক দেখে চরিত্রগুলোকে আপন ভাবত। তাঁর মতো নাট্যকার আমাদের মাঝ থেকে চলে যাওয়া মানে অপূরণীয় ক্ষতি। তাঁর প্রতি আমার বিনম্র শ্রদ্ধা।