'তরুণ নির্মাতা বেড়েছে, দর্শকও বেড়েছে'

আহমেদ মুজতবা জামাল
আহমেদ মুজতবা জামাল

শুরু হচ্ছে ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। ১২ জানুয়ারি বিকেলে এই উৎসব উদ্বোধন করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ষোড়শ এই উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেখানো হবে তুরস্কের পরিচালক কাজিম ওজের ‘জার’ সিনেমাটি। এবার উৎসবের নানা কিছু নিয়ে আজ বুধবার দুপুরে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেন উৎসব পরিচালক আহমেদ মুজতবা জামাল।

ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের এবারের আয়োজন নিয়ে বলুন।
আমরা সব সময় মানসম্মত একটি আয়োজনের চেষ্টা করি। বলতে পারেন, অন্য বছরে যে মান বজায় রেখেছিলাম, পরের বছর যেন তার চেয়ে আরও ভালো করতে পারি, তার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা থাকে। এবার প্রদর্শন-ব্যবস্থার উন্নয়নের চেষ্টা করছি। দেশে ও দেশের বাইরে অতিথি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অনেক ভাবনাচিন্তা করতে হয়েছে। নারীদের যে সম্মেলন করি, সেখানে আরও ভালো বক্তা আনার চেষ্টা করেছি।

নারী নির্মাতাদের সিনেমা প্রদর্শনের পাশাপাশি নারীদের জন্য আলাদা সম্মেলন করার ক্ষেত্রে কী ভাবনা কাজ করেছে?
যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, ইরানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অনেক নারী নির্মাতাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। উৎসব ১৫ বছর পার করলেও নারী নির্মাতাদের সম্মেলন শুরু করেছি তিন বছর আগে। আমরা দেখেছি, নারী নির্মাতারা এই সম্মেলনের ব্যাপারে খুব আগ্রহী। শুধু তা-ই নয়, নারীদের এই সম্মেলন উৎসবের অন্যতম অর্জন বলেও মনে করছেন সবাই। আমার মতে, নারীদের সম্মেলন উৎসবের সবচেয়ে বড় সৌন্দর্যও। আমাদের ঢাকা চলচ্চিত্র উৎসবের বিভিন্ন বিভাগ আছে। নারী নির্মাতা বিভাগে সিনেমা দেখাতে দেখাতে মনে হলো, একটি নতুনত্ব আনা যায় কীভাবে? পেশাদার নারী নির্মাতাদের মধ্যে পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে সম্পর্ক আরও মজবুত করা যায় কীভাবে? সবকিছু ভেবে মনে হলো, একটা সম্মেলন হলে ভালো হয়। তাই করা।

শুধুই নতুনত্ব?
একটা বিষয় খেয়াল করলে দেখবেন, বাংলাদেশে নারী চলচ্চিত্র নির্মাতা খুব কম। পুরুষদের মধ্যে তরুণ সিনেমা নির্মাতা যতটা আছে, নারীরা সে তুলনায় একেবারেই কম। অথচ আমাদের নারীরা অর্থনৈতিকভাবে অনেক অবদান রাখছেন। সমাজের অন্যান্য ক্ষেত্রে তাঁরা যেভাবে অবদান রাখছেন, চলচ্চিত্রে সে তুলনায় নেই বললেই চলে। নারীদের সম্মেলন করার পেছনে এই কারণটি কাজ করেছে। আমরা এই সম্মেলনের একটা ভালো সাফল্য পাচ্ছি।

এবার উৎসবে কতগুলো সিনেমা দেখানো হবে?
এবার উৎসবে ৬৩টি দেশের ২১৪টি সিনেমা দেখাব আমরা। জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তন, কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের মিলনায়তন, আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো ঢাকা, রুশ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র আর স্টার সিনেপ্লেক্স—এই পাঁচটি প্রেক্ষাগৃহে সিনেমাগুলো দেখতে পাবেন দর্শক।

উদ্বোধনী প্রদর্শনীতে তুরস্কের সিনেমা দেখাচ্ছেন কেন?
এটা তেমন কিছু নয়। আমরা কিন্তু বাংলাদেশের ‘আন্ডার কনস্ট্রাকশন’ সিনেমা দিয়েও উৎসব উদ্বোধন করেছি। এমন একটি আন্তর্জাতিক উৎসবে ধরাবাঁধা কোনো নিয়ম নেই। তবে এমন উৎসবের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকতার কথা মাথায় রাখতে হয়। গত বছর আমরা দেখিয়েছি ‘থ্রি থাউজেন্ড নাইন’। একটি আন্তর্জাতিক উৎসবে দেশের বাইরের অনেক অতিথি থাকেন। এত বড় আয়োজনে সব অতিথির কথা ভেবেই উদ্বোধনী প্রদর্শনীর কথা ভাবতে হয়। আমরা এখন পর্যন্ত বহু দেশের সিনেমা দিয়ে উৎসব চালু করেছি। কিন্তু তুরস্কের সিনেমা দিয়ে কখনো করা হয়নি, তাই এবার করছি। আর সিনেমাটিও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রশংসিত হওয়ার মতো।

ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের সূচনা কীভাবে হয়েছিল?
আমরা সব সময় বলি, আমাদের দেশের মানুষকে নান্দনিক চলচ্চিত্র দেখিয়ে মননশীল দর্শক হিসেবে গড়ে তুলব, যাঁরা আলোকিত সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখবেন। তাই তো আমরা স্লোগান হিসেবে রেখেছি, ‘নান্দনিক চলচ্চিত্র, মননশীল দর্শক ও আলোকিত সমাজ’। ১৯৯২ সাল থেকে শুরু হওয়া এই উৎসবের মাধ্যমে তা কিছুটা হলেও করতে পেরেছি। এ উৎসবের কারণে তরুণ নির্মাতা বেড়েছে, দর্শকও বেড়েছে অনেক। চলচ্চিত্রের স্কুল হয়েছে। মোস্তফা সরয়ার ফারুকী আর আবু শাহেদের মতো নির্মাতারা একসময় এ উৎসবে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছেন। আজ তাঁরাই বিশ্বজয় করছেন। সামনে এ উৎসবের আরও অনেক ইতিবাচক প্রভাব আমরা দেখব।