বেসুরো গান শুনতে শুনতে মানুষের কান এখন নষ্ট

গতকাল শনিবার ছিল রবীন্দ্রসংগীতের বিশিষ্ট শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার ৬১তম জন্মদিন। দিনটি উপলক্ষ করেই কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা
রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা

বিশেষ দিনটি সকাল থেকে কীভাবে কাটালেন।

সকালে চ্যানেল আইতে ‘গানে গানে সকাল শুরু’ অনুষ্ঠানে গানের মাধ্যমেই শুরু করি। গান চলাকালে ভক্ত-শ্রোতা, শুভানুধ্যায়ী সবার ফোন শুভেচ্ছা তো ছিলই। বাড়িতেও অনেকে এসেছেন, আমার স্কুলের ছেলেমেয়েরা, অনেক পুরোনো বন্ধু সবার ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, ভক্তি ও সম্মান—অনেক কিছুই পেলাম। এখনো পাচ্ছি। বিকেলে আমার স্কুল ‘সুরের ধারা’র আয়োজন ‘পৌষ মেলা’য় ছিলাম।  

রবীন্দ্রসংগীত নিয়ে সামনে কী পরিকল্পনা রয়েছে আপনার?

সামনে ‘সুরের ধারা’র ২৫ বছর পূর্তি। এ নিয়ে আমরা বড় করে একটি আয়োজন করব, এটা শুধু সুরের ধারাকে নিয়ে নয়। রবীন্দ্রনাথের গান নিয়ে যাঁরা আছেন, তাঁদের সবাইকে নিয়ে এটা করব। এর বাইরে পুরো অনুষ্ঠানের গানগুলো রেকর্ডিং করে রাখব।

আপনার নতুন কোনো অ্যালবাম করেছেন?

দুটি অ্যালবামের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। একটি পঞ্চ গীতিকবির গানের অ্যালবাম, অন্যটি ফোক গানের। যেখানে আছে কাঙাল হরিনাথ, শাহ আবদুল করিম, রাধারমণ, আমিন পাগলা, হাসন রাজার গান।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের ওপর বিশ্বভারতীর একটি কপিরাইট আইন ছিল। দেখা গেছে, এই আইন উঠে যাওয়ার পর অনেকেই রবীন্দ্রনাথের গানের মূল সুর, গায়কি আর আধুনিক যন্ত্রানুষঙ্গ ব্যবহার করে স্বাধীনভাবে রেকর্ড করেছেন। সিনেমায় ব্যবহার করেছেন।

হ্যাঁ। একটা চেষ্টা হয়েছে। উল্টাপাল্টা যন্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু যাঁরা প্রকৃত রবীন্দ্রপ্রেমী, সাধারণ শ্রোতা; তাঁরা এটা গ্রহণ করেননি, গ্রহণযোগ্য হয়নি। ফলে এ ধরনের প্রচেষ্টা সফল হয়নি।

সম্প্রতি বিভিন্ন অনলাইন, ইউটিউবের মাধ্যমে আমরা দেখেছি, কলকাতার বেশ কয়েকজন জনপ্রিয় শিল্পী মিলে আমাদের জাতীয় সংগীতটি করেছেন। যেখানে মূল গানের কথা-সুরে কিছু পরিবর্তন লক্ষ করেছি। অনেকের এ নিয়ে আপত্তিও রয়েছে। আপনি কি দেখেছেন, শুনেছেন গানটি?

হ্যাঁ শুনেছি। এখানে কথা আছে। আমরা যেটা আমাদের জাতীয় সংগীত বলছি, যেটা সমর দাস অর্কেস্ট্রেশন করেছিলেন, গান হিসেবে যেটা স্বরলিপি, সেই অর্কেস্ট্রেশনে ওটা অনুসরণ করা হয়নি। আর কলকাতার শিল্পীরা ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি রবীন্দ্রসংগীত হিসেবে গেয়েছেন, এর মূল সুরকে ঠিক রেখে। গানের কথা অবশ্য দু-একটা এদিক-সেদিক হয়েছে। তবে আমি বলব, সমর দাসের করা আমরা যে জাতীয় সংগীত গাই, ওটাই অনুসরণ করব।

রবীন্দ্রসংগীত প্রসারে আমাদের প্রচারমাধ্যমগুলো কী ভূমিকা রাখতে পারে?

প্রচারমাধ্যমগুলো কেবল রবীন্দ্রসংগীতই নয়, শুদ্ধ সংগীত প্রচারে একটা বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে। বেসুরো গান শুনতে শুনতে মানুষের কান এখন নষ্ট। এখন কোনো অডিশন বোর্ড নেই। যার যত যোগাযোগ আছে, দেখা যায় সে–ই সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে, গানবাজনাটা এখন এই পর্যায়ে চলে গেছে। মনিটর করার যেন কেউ নেই। তাই প্রচারমাধ্যমগুলো দর্শকের সামনে শুদ্ধতা বিচার করে যোগ্য শিল্পীকেই যেন উপস্থাপন করে, এদিকে নজর দিতে হবে।

সাক্ষাত্কার: কবির বকুল