নতুন পথে তাসকিন!

>

ঢাকা অ্যাটাক ছবিটির মুক্তির পর অনেকটাই নায়ক-নায়িকাকে পেছনে ফেলে ছবির জিসান চরিত্রটি আলাদা করে লুফে নিয়েছেন দর্শক। রাতারাতি তারকা বনে যান জিসান চরিত্রের তাসকিন রহমান। দেশে তো বটেই, দেশের বাইরে ১৭টি দেশের ৫১টি শহরে সাড়া ফেলেছে ছবিটি। সবখানেই তাসকিনের অভিনয়ের জয়জয়কার! এই নব্য তারকাকে নিয়ে লিখেছেন শফিক আল মামুন

তাসকিন রহমান
তাসকিন রহমান

কথার শুরুতেই তাসকিন জানিয়ে রাখলেন, জীবনটা অনেকখানিই বদলে গেছে। ঢাকা অ্যাটাক ছবিটি মুক্তির পর দেশ-বিদেশে তাঁর অগণিত ভক্ত-দর্শক। তাঁকে ঘিরে ভক্তদের মজার মজার কর্মকাণ্ড—কত যে কথা! নতুন একাধিক ছবিতে কাজের প্রস্তাবও পাচ্ছেন তিনি। সেই তালিকার মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজের যদি একদিন ছবিতে অভিনয় করতে সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া থেকে ঢাকায় এসেছেন। তাঁর সব খবর নিয়ে কথা বলতে সম্প্রতি প্রথম আলো কার্যালয়ে আড্ডায় বসেছিলেন তাসকিন।

তার আগে কারওয়ান বাজারের খোলা রাস্তায় যখন তাঁর ফটোসেশন চলছিল, তখন আরও একবার টের পাওয়া গেল তাসকিনের দর্শকপ্রিয়তা।

অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করলেও এই শহরে তাঁকে নতুন পথিক ভাবেননি পথচারীরা। ‘ওই যে দেখো দেখো, ঢাকা অ্যাটাক-এর জিসান।’ পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় একজন আরেকজনকে বলছিলেন। ছবি তোলা শেষে পথচারীদের কেউ কেউ প্রিয় অভিনেতার সঙ্গে সেলফিও তুললেন।

বদলে যাওয়া জীবন

আড্ডার শুরুতেই প্রথমে জানতে চাইলাম, এই যে আচমকা জীবনটা বদলে গেল। কেমন লাগে? তাসকিন বলেন, ‘ভালো লাগে। রাস্তায় বেরোলে অনেকেই কাছে এসে কথা বলতে চান, সেলফি তোলেন। অনেক সময় জোরজবরদস্তি করে আপ্যায়নে বাধ্য করেন।’

অস্ট্রেলিয়ায় দুই মেয়ে ভক্তের কাণ্ডের কথা বলতে গিয়ে এই অভিনেতা বলেন, ‘একজন হাত কেটে আমার নাম লিখেছেন। আরেকজন তো ঘাড়ের নিচে আমার নাম লিখে ট্যাটু করেছেন। তাঁর ছবি তুলে আমাকে পাঠিয়েছেন। তাঁদেরসহ সবাইকে অনুরোধ করছি, এ রকম আবেগী না হওয়াই ভালো। কারণ, ভক্তদের আমি শ্রদ্ধা করি।’

যেভাবেঢাকা অ্যাটাক’–

ছবির শুটিংয়ের বেশ কয়েক মাস আগে থেকে জিসান চরিত্রের জন্য সাক্ষাৎকার নেওয়া হচ্ছিল। আদি ছবির পরিচালকের পরামর্শে তাসকিনের সাক্ষাৎকার নেন ঢাকা অ্যাটাক-এর পরিচালক দীপকংর দীপন। ‘সৌভাগ্যক্রমে আমি তখন ঢাকায়। হঠাৎ করে এক সন্ধ্যায় পরিচালক দীপন ভাই আমাকে ডাকলেন। সাক্ষাৎকার নিলেন। টিকে গেলাম,’ বলেন তাসকিন। শুটিংয়ের আগে চরিত্রটির জন্য কেমন প্রস্তুত নিয়েছিলেন? তাসকিন বলেন, ‘মাস খানেক ধরে চরিত্রটি নিয়ে গবেষণা করেছি। চরিত্রটির মধ্যে ঢুকতে যে সময় লেগেছে, বের হতে আরও বেশি সময় লেগেছে।’

ছবির একটি স্মরণীয় দৃশ্যের কথা বলতে গিয়ে তাসকিন বলেন, ছবির শেষে গুলিতে জিসানের মারা যাওয়ার দৃশ্যটি নিয়ে টেনশন ছিল তাঁর। কারণ, দৃশ্যটি এনজি করা যাবে না। তা না হলেও নতুন করে আবার কস্টিউম, মেকআপ নিতে হবে। চারপাশে উৎসুক জনতা দৃশ্যটি দেখছেন।

তাসকিন বলেন, ‘গুলি লাগার পর আমার অভিনয়ের জায়গাটা এমন ছিল যে চারপাশের লোকজন খানিকটা ভড়কে গিয়েছিলেন। তারা ভেবেছিলেন সত্যি মারা গেলাম নাকি। এক টেকেই দৃশ্যটি ওকে হয়। পরে উঠে দাঁড়ালে চারপাশের লোকজন হাততালি দিয়েছেন। এটি আমার জন্য বড় পাওয়া।’

অভিনয়ের শুরুটা যেভাবে...

বয়স তখন ৮-৯ বছর হবে। অভিনয় ও গানে দুই বিভাগেই বাংলাদেশ টেলিভিশনের নতুন কুড়ি পুরস্কার পেয়েছিলেন তাসকিন। গান, অভিনয়, ছবি আঁকার ব্যাপারে তাঁর দারুণ আগ্রহ ছিল ছোটবেলা থেকেই।

তাসকিন বলেন, ‘ছবি আঁকা, গান কিংবা অভিনয় শিখতে আমার কোনো শিক্ষক দরকার হয়নি। একান্ত ইচ্ছাশক্তি দিয়েই এসব করে এসেছি।’ শিশুশিল্পী হিসেবে বাংলাদেশ টেলিভিশনের কিছু নাটকে অভিনয় করলেও চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয় করেন ১৯৯৫ সালে। হৃদয় আমার ছবিতে আমিন খানের ছোটবেলার চরিত্রে। এরপর ২০০২ সালে লেখাপড়া করতে অস্ট্রেলিয়া চলে যান। মাঝে কিছু টেলিছবির কাজও করেন। তবে বড় হয়ে ২০১৪ সালে প্রথম অভিনয় করেন আদি ছবিতে। পরপর ২০১৫ সালে মৃত্যুপুরী, ২০১৬ সালে অপারেশন অগ্নিপথ। একই বছর ঢাকা অ্যাটাক। মজার ব্যাপার হলো সবশেষে যে ছবিটিতে কাজ করেছেন, সেই ঢাকা অ্যাটাক মুক্তি পেয়েছে আগে।

নতুন পথে তাসকিন

একদিকে চাকরি, অন্যদিকে অভিনয়ের নেশা। অনেক সময়ই দুটি জিনিস একসঙ্গে করতে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলার অবস্থা হয়েছে তাসকিনের। শুটিংয়ের জন্য হঠাৎ হঠাৎ অস্ট্রেলিয়ার সরকারের চাকরি থেকে ছুটি নিয়ে বাংলাদেশে আসতে বেগ পেতে হয়েছে, এখনো হচ্ছে। তাই পেশা বদলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। বেছে নিচ্ছেন অভিনয়।

তাসকিন বলেন, ‘দেখুন, অনেক মানুষ আছে যাঁদের জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করতেই সারা জীবন চলে যায়। আমার সৌভাগ্য যে আমি কম বয়সেই আমার লক্ষ্য নির্ধারণ পেরেছি।’

তবে অভিনয় নিয়ে উন্মাদনা থাকলেও ছবি আঁকা কিংবা গান গাওয়ায় ছেদ পড়েনি তাঁর। অস্ট্রেলিয়ায় বসে সমানতালে ছবি আঁকেন, গান করেন। অস্ট্রেলিয়ার সিডনির ওয়েলসে নিজের করা দুটি ওয়াল পেইন্টিংয়ের প্রদর্শনীও করেছেন। ওখানকার একটি রক ব্যান্ড দলের ভোকাল হিসেবে আছেন তিনি।

তাসকিন বলেন, ‘ছবি আঁকা, গান—দুটিই আমার ছোটবেলার সম্পদ। শখের কাজ। তবে অভিনয়ই আমার আসল জায়গা। অভিনয়ের মধ্য দিয়ে নিজের ক্ষুধা মেটাতে পারি। নিজের ভেতরকার শৈল্পিকতা মানুষের সামনে তুলে ধরা যায়।’