হাসির টেলিছবিতে গল্পের বাস্তবতা অপরিহার্য

ক্রসিং টেলিছবিতে অভিনয় করেছেন জোভান ও নাদিয়া খানম
ক্রসিং টেলিছবিতে অভিনয় করেছেন জোভান ও নাদিয়া খানম

বিভিন্ন চ্যানেল নিজস্ব যে অনুষ্ঠানগুলো প্রচার করে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো উন্নয়ন ও পরিমার্জনের ক্ষেত্রে তেমন কোনো উদ্যোগ লক্ষ করা যায় না। তেমনি একটি অনুষ্ঠান বাংলাভিশনের ‘সৌন্দর্য কথা’। অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হয় প্রতি বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ১৫ মিনিটে। এ সপ্তাহে ১১ জানুয়ারি রাতে একই সময়ে অভিনেত্রী নোভার উপস্থাপনায় বাংলাভিশনে প্রচারিত হলো ‘সৌন্দর্য কথা’ অনুষ্ঠানটি।

অনুষ্ঠানে এবারও ছিলেন অভিনেত্রী ফারজানা চুমকী। উপস্থাপিকা নোভা তাঁর সঙ্গে সৌন্দর্যবিষয়ক বিভিন্ন আলাপ করেছেন। শীতের সৌন্দর্যচর্চা, পার্টিতে পছন্দের পোশাক, গয়না, রং ইত্যাদি বিষয়ে অভিনেত্রী চুমকী তাঁর নিজস্ব মত ও পছন্দের কথা তুলে ধরেন এ অনুষ্ঠানে। এককথায় বলা যায়, তাঁর পছন্দের মধ্যে ঐতিহ্যপ্রীতি এবং সুরুচিরই প্রকাশ ঘটেছে। এ ছাড়া ছিল প্রতিবারের মতোই একজন মেকআপ এক্সপার্টের প্রামাণ্য মেকআপ ও অভিমত। এবারে ছিল ব্রাইডাল মেকওভার এক্সপার্ট সাইমা রেজার উপস্থাপনা। তাঁর অভিমত ও বিবরণ ভালো লাগলেও যে প্রামাণ্য মেকআপটি তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থাপন করলেন, সেটি কিছুটা অস্বাভাবিক এবং অতি কৃত্রিম মনে হয়েছে। শেষে অতিথির ঝটপট উত্তর ও সৌন্দর্য টিপসের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি।

‘সৌন্দর্য কথা’ অনুষ্ঠানের পূর্বাপর এই বিন্যাস দর্শকদের কাছে এখন একঘেয়ে ও গতানুগতিক বলে মনে হয়। আমরা আগেও বলেছি, ছেলেদের সৌন্দর্য নিয়ে অনুষ্ঠানে কোনো বিষয়, বিবরণ বা টিপস নেই। অতিথি হিসেবেও অনুষ্ঠানে শুধু মেয়েদেরই ডাকা হয়, কোনো অভিনেতা বা গায়ককে ডাকা হয় না। ‘সৌন্দর্য কথা’ অনুষ্ঠানে কি ছেলেদের সৌন্দর্য নিয়ে কথা হতে পারে না? অনুষ্ঠানটি দেখে মনে হয় যেন ছেলেদের সৌন্দর্যচেতনা বা সৌন্দর্য সচেতনতার কোনো প্রয়োজন নেই। অনুষ্ঠানের এই একপেশে বিন্যাস আমাদের কাছে মোটেই সময়োপযোগী মনে হয়নি।

১২ জানুয়ারি শুক্রবার সকাল ৮টা ২০ মিনিটে নাহিদ আফরোজের উপস্থাপনায় এনটিভিতে প্রচারিত হলো সরাসরি গানের অনুষ্ঠান ‘ছুটির দিনের গান’। অনুষ্ঠানে শিল্পী ছিলেন চম্পা বণিক। সরাসরি প্রচারিত গানের অনুষ্ঠানগুলোর মাঝে ‘ছুটির দিনের গান’ অনুষ্ঠানটি ইতিমধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। অনুষ্ঠান চলাকালে দর্শকের অংশগ্রহণ দেখেই সেটা বোঝা যায়। শিল্পী চম্পা বণিক একটানা প্রায় দুই ঘণ্টা গান করেছেন। গানের ফাঁকে ফাঁকে শিল্পী হিসেবে তাঁর বেড়ে ওঠা, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা—এসব নিয়ে কথা বলেছেন। পাশাপাশি দর্শকদের ফোনের জবাব দিয়েছেন, তাঁদের পছন্দের গান শুনিয়েছেন। এককথায় বলা যায়, তিনি কথায় ও গানে দর্শকদের মন জয়ে সক্ষম হয়েছেন। আর সরাসরি প্রচারিত অনুষ্ঠানেই দর্শক ও শিল্পীর সেই সংযোগটি ঘটে থাকে। কাজেই এ ধরনের অনুষ্ঠান শিল্পীর নিজেকে প্রমাণের সবচেয়ে বড় সুযোগ।

চম্পা বণিক অনুষ্ঠান শুরু করেছেন নিজের গান দিয়ে—‘একা হওয়া ভেসে যাওয়া এ গান গাওয়া’। তারপর সার্থকভাবে একে একে মিতালী মুখার্জি, হৈমন্তী শুক্লা, চিত্রা সিং, লতা মঙ্গেশকর প্রমুখের গান গেয়েছেন। যেমন ‘ও গো বৃষ্টি আমার চোখের পাতা’, ‘আমি কি তোমার মতো এত ভালোবাসতে পারি’, ‘ঠিকানা না রেখে ভালোই করেছ বন্ধু’, ‘আমার চোখের জলের মাঝে’, ‘আষাঢ় শ্রাবণ মানে না তো মন’ ইত্যাদি গান তিনি করেছেন। তাঁর কণ্ঠ সুরেলা এবং আকর্ষণীয়। তবে আরও দু–চারটি তাঁর নিজের গান করা উচিত ছিল। প্রত্যেক শিল্পীরই মনে রাখা উচিত, নিজেকে দর্শকের সামনে তুলে ধরার ও প্রমাণ করার জন্য নিজের গানের বিকল্প নেই। কারণ, দিনশেষে নিজের গান দিয়েই একজন শিল্পীকে টিকে থাকতে হয়। আশাকরি শিল্পী চম্পা বণিক ভবিষ্যতে এ বিষয়ে যত্নবান হবেন।

সবশেষে টেলিছবি ক্রসিং। অনন্য ইমন পরিচালিত এ টেলিছবি প্রচারিত হলো ১১ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে মাছরাঙা টিভিতে।

ছবির গল্পটি সংক্ষেপে এ রকম—সেজান ও আদিবা প্রেমিক জুটি। ছবির শুরুতেই ঝগড়ার মধ্য দিয়ে তাদের ব্রেকআপ হয়ে যায়। তারপর সেজান ভালোবাসে মিথিলাকে আর আদিবা ভালোবাসে পাবলোকে। মাঝে তাদের পূর্ব প্রেমের অনুঘটকের দায়িত্ব পালন করে আদিবার মা। মায়ের সামনে আদিবা ও সেজান পরস্পর পরস্পরকে দোষারোপ করে। তারা একে অপরকে সন্দেহ করে, ঝগড়া করে, তারপর আদিবার মায়ের মধ্যস্থতায় আবার তাদের মিল হয়। এরপর তারা বারবার কাছে আসে আবার দুজন দুজনকে সন্দেহ করে দূরে সরে যায়। আদিবা ফেসবুক ফ্রেন্ডের সঙ্গে দেখা করে, কিন্তু এক দিনও সহ্য করতে পারে না। এদিকে সেজানও একজন বক্সার মেয়ের সঙ্গে মিশে যায়, কিন্তু বেশিক্ষণ সহ্য করতে পারে না। এভাবে নানা নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে শেষে আবার ব্রেকআপ করতে গিয়ে কী বুঝে দুজন ফিরে এসে পরস্পর পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে। এভাবেই শেষ হয় টেলিছবি ক্রসিং।

এককথায় মন্তব্য করলে বলব, পুরো ছবিতে এত দুর্বল গল্প, চিত্রনাট্য ও সংলাপ যেন এক ঘণ্টা ধৈর্য ধরে দেখাটাও দর্শকের জন্য কষ্টকর। বর্তমান সময়ে ছেলেমেয়েদের ঠুনকো প্রেমই ক্রসিং টেলিছবিটির বিষয়। নির্মাতা হয়তো এ প্রেমকে কেন্দ্র করে হাসির ছবিই বানাতে চেয়েছেন, কিন্তু তা শেষ পর্যন্ত হয়ে গেছে হাস্যকর। বড় কারণ, নির্মাতা ছবির গল্পটিকে বাস্তবসম্মত করে তুলতে পারেননি। কারণ তাঁরা হয়তো অনুধাবন করতে পারেননি, হাসির নাটক বা টেলিছবিতেও গল্পের বাস্তবতা অপরিহার্য। এ ছাড়া অধিকাংশ নতুন অভিনেতা-অভিনেত্রী নিয়ে নির্মাণ করেছেন ছবিটি, কিন্তু তাঁদের অভিনয় প্রতিভাটি বের করে আনতে পারেননি। তা ছাড়া ক্রসিং নামকরটিও আমাদের কাছে সার্থক বা আকর্ষণীয় মনে হয়নি। বরং ছবির থিমের সঙ্গে মিলিয়ে চমৎকার বাংলা শব্দেও সার্থক নামকরণ হতে পারত।