নির্বাচন কমিশন নিয়ে প্রাণবন্ত বিতর্ক করেছি

হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ
হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ

হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। দেশে বিতর্কচর্চাকে এগিয়ে নিতে নিরলস কাজ করছেন। সম্প্রতি তাঁর সঞ্চালনা ও পরিচালনায় ‘ইউসিবি পাবলিক পার্লামেন্ট’ অনুষ্ঠানের গ্র্যান্ড ফাইনাল অনুষ্ঠিত হলো। এই আয়োজন নিয়ে আজ কথা বলেছেন তিনি। জানালেন, এই গ্র্যান্ড ফাইনাল অনুষ্ঠান ২৬ জানুয়ারি বেলা ১১টা ০৫ মিনিটে এটিএন বাংলায় প্রচারিত হবে।

‘ইউসিবি পাবলিক পার্লামেন্ট’ প্রতিযোগিতা সম্পর্কে জানতে চাইছি।
অনেক আগে থেকেই টেলিভিশনে বিতর্ক অনুষ্ঠান পরিচালনা করছি। গত ২০ বছরে ‘ভাষা দিবস বিতর্ক’, ‘স্বাধীনতা দিবস বিতর্ক’, ‘কন্যাশিশু দিবস বিতর্ক’, ‘মাদকবিরোধী বিতর্ক’, ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিতর্ক’, ‘অভিবাসী দিবস বিতর্ক’, ‘দুর্নীতিবিরোধী বিতর্ক’, ‘নির্বাচনী বিতর্ক’, ‘ক্যাম্পাস পার্লামেন্ট’, ‘ইয়ুথ পার্লামেন্ট’সহ অনেকগুলো বিতর্ক প্রতিযোগিতা সফলভাবে আয়োজন করেছি। সর্বশেষ ২০১৭ সালে ইউসিবি পাবলিক পার্লামেন্ট বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করি। এই প্রতিযোগিতায় দেশের সরকারি-বেসরকারিসহ ৩২টি বিশ্ববিদ্যালয় অংশগ্রহণ করে। প্রতিযোগিতার প্রথম, দ্বিতীয়, কোয়ার্টার ফাইনাল ও সেমি ফাইনাল পর্বে উত্তীর্ণ হয়ে ১৩ জানুয়ারি গ্র্যান্ড ফাইনালে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি একে অপরের মুখোমুখি হয়। ফাইনালে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।

এ ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজনের ব্যাপারে আগ্রহী হলেন কেন?
এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমসাময়িক বিষয়ে সংসদীয় ধারার বিতর্ককে সম্পৃক্ত করা। দেশের ৩২টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছে। এবার আয়োজনের প্রতিটি ছায়া সংসদই ছিল গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চেষ্টা করেছি সমসাময়িক বিষয়গুলো সামনে নিয়ে আসতে। আমি বলব, এ কাজে আমরা সফল হয়েছি। আমরা দেখেছি প্রতিটি ইস্যুতেই তুমুল বিতর্ক হয়েছে। বিতর্কের মধ্য দিয়ে ভালো ভালো পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা উঠে এসেছে। গ্র্যান্ড ফাইনালে কিন্তু আমরা নির্বাচন কমিশনের প্রতি জনগণের আস্থা নিয়ে প্রাণবন্ত বিতর্ক করেছি। এখানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।

টেলিভিশনে ‘পার্লামেন্ট ধারার বিতর্ক’ আয়োজনের ব্যাপারে কী উদ্দেশ্য ছিল?
কয়েক বছর ধরে পার্লামেন্ট ধারার বিতর্ক করছি। শুধু করেছি তা নয়, প্রতিটি আয়োজনই খুব সফল হয়েছে। এখানে দেশের নামী কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অংশ নিয়েছে। এর আগে ক্যাম্পাস পার্লামেন্টে দেশের শীর্ষ সব কটি সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অংশগ্রহণ করেছিল। এই ধারার বিতর্ক আয়োজনের মূল লক্ষ্য হলো গণতন্ত্রের প্রতি তরুণ সমাজকে আগ্রহী করে তোলা। নতুন প্রজন্মের চিন্তার সঙ্গে আমরা মিলিয়ে দেখতে চেয়েছি, যাঁরা দেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাঁদের ভাবনার কতটা মিল রয়েছে। এখানে আমরা সত্যিই তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং অন্যদের চিন্তার সেতুবন্ধ করতে চেয়েছি।

এটিএন বাংলার ‘ইউসিবি পাবলিক পার্লামেন্ট’ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে অতিথিরা
এটিএন বাংলার ‘ইউসিবি পাবলিক পার্লামেন্ট’ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে অতিথিরা

আপনি তো ‘ইলেকশন ডিবেট’ করেছেন?
হ্যাঁ, ওটা ছিল আমাদের আরেকটি বড় আয়োজন। মূলত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আমরা এই বিতর্ক প্রতিযোগিতা শুরু করেছিলাম। ওটা ছিল চমৎকার আয়োজন, যেখানে আমাদের তরুণেরা প্রাণ খুলে নিজের ভাবনা ও মতামত তুলে ধরেছে। আমি মনে করি ‘ইলেকশন ডিবেট’ বেশি বেশি হওয়া প্রয়োজন। এ ধরনের ডিবেট যত হবে, তত বেশি মানুষের অধিকারের বিষয়গুলো প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠবে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আমাদের ইচ্ছা আছে ভিন্ন ধরনের ডিবেট আয়োজন করার। আশা করছি, গণতন্ত্রের বিকাশে সমস্যা আর বাধানগুলো কোথায় লুকিয়ে আছে, তা এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে তুলে ধরা সম্ভব হবে।

বিতর্কচর্চার সঙ্গে তারুণ্যকে কীভাবে দেখছেন?
বিতর্কচর্চা, অনুশীলন হলো সমাজের আয়না। সমাজে যেকোনো বিষয় নিয়ে যত বেশি বিতর্ক হবে, তাতে সমাজ, রাষ্ট্র বেশি লাভবান হবে। সমাজের সব ক্ষেত্রে একধরনের জবাবদিহি বাড়বে। প্রথাগত ভাবনা থেকে তরুণ প্রজন্মের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটবে। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে মূল্যবোধ, দেশপ্রেম, সদিচ্ছা তৈরি হবে। আসলে সমাজ-রাষ্ট্রে কী হচ্ছে, কেন হচ্ছে, তা জানার অন্যতম মাধ্যম হলো বিতর্ক। যেখানে নানা মতের সম্মিলন ঘটে। যেখানে কেবলই যুক্তি দিয়ে বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়। যেখানে আবেগের চেয়ে বাস্তবতার আলোকে বিষয়গুলো প্রাধান্য পায়। বিষয়গুলোকে কেবলই তথ্য-উপাত্ত দিয়ে গভীরভাবে তুলে ধরতে হয়। বিতর্কচর্চার যত প্রসার ঘটবে, তত দ্রুত সমাজ, রাষ্ট্র বদলে যাবে। আর এই বদলানোর বড় কারিগর হচ্ছে তারুণ্য। এ ক্ষেত্রে পাবলিক পার্লামেন্ট জাতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানটি সমাজের দর্পণ হিসেবে কাজ করছে।

টিভির জন্য বিতর্ক নিয়ে নতুন কী ভাবছেন?
আমি এই একটি মাধ্যম ব্যবহার করেই রাজনৈতিক দলসহ রাষ্ট্র পরিচালনাকারীদের জবাবদিহি তৈরি করতে চেষ্টা করছি। তবে পাঠ্যপুস্তকে বিতর্ক অন্তর্ভুক্ত না হওয়াটা দুঃখজনক। এটি হলে বিতর্ক আরও জনপ্রিয় হতো। বিতর্ককে জনপ্রিয় করার জন্য কিছু উদ্যোগ সরকারের পক্ষ থেকে গ্রহণ করতে হবে। বিতার্কিকদের জন্য ‘বিতর্কশালা’ করতে হবে।