ভয়টা সব সময়ই একটু বেশি

>
মেরিল স্ট্রিপ
মেরিল স্ট্রিপ

২০০৮ সালে মুক্তি পেয়েছিল মামা–মিয়া। দশ বছর পর, ২০১৮ সালে চলচ্চিত্রটির সিক্যুয়াল মামা–মিয়া! হিয়ার উই গো অ্যাগেইন নিয়ে আসতে চলেছে মামা–মিয়ার পুরো টিম। আরও অনেকের মতো এখানে অভিনয় করেছেন মেরিল স্ট্রিপ। সম্প্রতি এ উপলক্ষে বেভারলি হিলসে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন তিনি। দ্য পোস্ট-এরসেই সাক্ষাৎকার অবলম্বনে আজ প্রথম আলোর পাঠকদের জন্য থাকল এই আয়োজন।

টম হ্যাংকস, স্টিভেন স্পিলবার্গ এবং আপনার রসায়ন পর্দায় দেখতে দর্শকদের অপেক্ষা করতে হয়েছে প্রচুর। কিন্তু কেন?

টম মামা–মিয়াতে আমার বস ছিল, প্রযোজক ছিল চলচ্চিত্রটির। সত্যি বলতে গেলে, আমি টমের চাইতে সাত বছরের বড়। তাই হয়তো এমনটা হয়েছে। আর স্টিভেনের ব্যাপারটা বলতে গেলে বলতে হবে, সে নারীপ্রধান চলচ্চিত্র খুব কম নির্মাণ করেছে। তবে হ্যাঁ, চাইলে হয়তো কাজ করা যেত আগেই।

এ ধরনের একটি চরিত্রে অভিনয় করাটা বেশ সাহসিকতার। গত কয়েক মাসের এই কাজটুকু বাদে আমরা এ নিয়ে তেমন কোনো উদ্যোগ কেন দেখিনি?

গত কয়েক যুগে ব্যাপারগুলোতে পরিবর্তন এসেছে। আর সেটা এসেছে বলেই পর্দায় আমরা এবার সেটাকে দেখাতে পারছি। ক্ষমতা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার থেকে দেশের অনেকগুলো গোষ্ঠীকে সরিয়ে রাখাটা কোনো কাজের কথা নয়। আমি খুশি যে পরিবর্তন আসছে এবং এমন একটা স্টিভেন এই ব্যাপারে কাজ করছে, যখন রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং আরও নানা দিকে যুক্তরাষ্ট্র বদলাচ্ছে।

ফ্রান্সের নতুন রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল ম্যাখোঁ স্ত্রী মোটেও ‘ট্রফি ওয়াইফ’ নন। তিনি বেশ শক্তিশালী ভূমিকা পালন করেন। সেদিক দিয়ে মেলানিয়া ট্রাম্পকে তুলনা করলে সহানুভূতি কাজ করে কি?

আমার এমন কারও জন্য সহানুভূতি জন্ম নেয়, যে নিজের বর্তমান অবস্থানে কখনোই আসতে চায়নি। কেউকে টেনে এমন কোনো অবস্থানে বসিয়ে দেওয়া, যেটা সে পছন্দ করে না। কিছু দায়িত্ব দিয়ে দেওয়া, যেটা তার কখনো করার ইচ্ছে হয়নি। এই ব্যাপারটির ক্ষেত্রে সহানুভূতি হয় বৈকি।

মুভিতে টম হ্যাংকস আপনার কথার ওপরে কথা বলছিলেন। বাস্তব জীবনেও কি কেউ এভাবে আপনার মুখের ওপরে কথা বলার চেষ্টা করতে পারে?

হ্যাঁ, সবাই করতে পারে। সব সময়ই করতে পারে।

নিজের কোন অভ্যাসটি নিয়ে আপনি বিরক্ত? কোন অভ্যাসটি বাকি সবাইকেও বিরক্ত করে দেয়?

বিরক্তিকর অভ্যাস? (হাসি) আমি দেরি করা পছন্দ করি না। কারও সঙ্গে দেখা করার কথা থাকলে ঠিক সময়ে পৌঁছাই। আর কেউ আমাকে দেরি করিয়ে দিলে প্রচণ্ড রেগে যাই।

বর্তমানে গণমাধ্যমগুলো অংশীদারদের কাছে দায়বদ্ধ থাকে। ফলে খবর, খবরের সত্যতা, এতগুলো চ্যানেল ও পত্রিকা ভিড় করে এবং মানুষ দ্বিধায় পড়ে যায় তথ্যের যথার্থতা নিয়ে। সরকারি উদ্যোগ থাকলে, যেমনটা আমার দেশ সুইজারল্যান্ডে জনগণ রেডিও ও টেলিভিশনে অর্থ প্রদান করে, তেমন কিছু হলে কি গণমাধ্যম আর স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারত বলে আপনি মনে করেন? এই ব্যাপারটির কি কোনো সমাধান আছে?

আমি আসলেও জানি না এই সমস্যার কোনো সমাধান আছে কি না। তবে এটা জানি, সরকার গণমাধ্যমকে অর্থ প্রদান করলে ভয় থাকে যে একটা সময় সরকার সবকিছু নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করবে। তা ছাড়া, বর্তমানে টুইটার, নানা রকম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভিড়ে সত্যি খবর খুঁজে পাওয়াটা আসলেও কঠিন। অনেক সময় সত্যি খবরকেই মিথ্যা ভেবে অনেকে পাশ কাটিয়ে যায়। ব্যাপারটি দুঃখজনক।

মামা–মিয়া ছবির দৃশ্য
মামা–মিয়া ছবির দৃশ্য

আপনি তো গান শুনতে ভালোবাসেন। গান কি কোনোভাবে অভিনয় করতে, আরও ভালোভাবে চরিত্রের ভেতরে প্রবেশ করতে আপনাকে সাহায্য করে?

হ্যাঁ, প্রতিটি নতুন কাজের আগেই আমি নিজের একটু জায়গা তৈরি করে ফেলি। আর সেটা করি নতুন গান শোনার মাধ্যমে। নতুন কোনো গান আমাকে নতুন কাজ শুরু করার অনুভূতি দেয়। এই চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে অবশ্য সেটার দরকার পড়েনি। কারণ, এখানে ক্যাথরিন গ্রাহাম ছিলেন। তাঁর জাদুকরি কণ্ঠই যথেষ্ট ছিল।

আপনি আগেও সাহসী অনেক নারী চরিত্রে অভিনয় করেছেন। আপনার কি মনে হয়, সম্প্রতি নারীদের প্রতি যৌন হয়রানির যে অভিযোগ উঠেছে, সেটার প্রভাব অস্কার ও হলিউডে পড়বে?

আমি আশা করব শুধু অস্কারে বা হলিউডে নয়, এই ব্যাপারটি যেন এর বাইরেও সবাইকে প্রভাবিত করে; আমেরিকা এবং সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।

মা হিসেবে সন্তানদের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কেমন?

আমার তিনটি মেয়ে ও একটি ছেলেসন্তান আছে এবং আমাদের সম্পর্ক খুব সহজ ও ভালোবাসাময়। আমি আমার পেশাগত জীবন থেকে ওদের বাইরে রাখার চেষ্টা করি সব সময়।

২০০৮ সালের পর ২০১৮তে আবার একই চলচ্চিত্রের সঙ্গে। কেমন লাগছে?

হ্যাঁ, দশ বছর পর আবার। কিন্তু খুব ভালো লাগছে। আমার খুব কম সময়ের কাজ আছে এবারের চলচ্চিত্রে। মাত্র এক সপ্তাহ কাজ করেছি আমি। তবে হ্যাঁ, এই এক সপ্তাহেও অনেক মজা করেছি।

এমন কোনো চরিত্রে কাজ করার আগে কি আনন্দ, উত্তেজনা বা ভয় কাজ করে? শুটের আগে কীভাবে প্রস্তুত করেন নিজেকে?

হ্যাঁ, আমার ভয়টা সব সময়ই একটু বেশি। আর আমি এই অনুভূতির সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছি। তবে হ্যাঁ, এভাবেই আমি আমার অনেক অভিজ্ঞতা জড়ো করেছি এবং আরও অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চাই।

lহলিউড ফরেন প্রেস অ্যাসোসিয়েশনের

সদস্য হিসেব সাক্ষাৎকারটি

নিয়েছেন মুনাওয়ার হোসেন পিয়াল

অনুবাদ: সাদিয়া ইসলাম