ব্যবসাসফল ছবিতেও লোকসান!

আয়নাবাজি ছবির দৃশ্যে নাবিলা ও চঞ্চল চৌধুরী
আয়নাবাজি ছবির দৃশ্যে নাবিলা ও চঞ্চল চৌধুরী
>
  • অমিতাভ রেজা বলেছেন, ‘আয়নাবাজি’ ছবিটি করে তিনি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।
  • একই ধরনের কথা ‘ঢাকা অ্যাটাক’ ছবির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানেরও।
  • আবদুল আজিজ বলেন, ‘ছবিগুলো থেকে বিনিয়োগ উঠে মুনাফা হয়েছে।’

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে পরিচালক অমিতাভ রেজা বলেছেন, ‘আয়নাবাজি’ ছবিটি করে তিনি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। ছবিটি থেকে এখনো বিনিয়োগ ফেরত আসেনি। একই ধরনের কথা এসেছে সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত ছবি ‘ঢাকা অ্যাটাক’-এর প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও। ২০১৬ ও ২০১৭ সালের সবচেয়ে আলোচিত ও ব্যবসাসফল দুটি ছবির পরিচালক ও প্রযোজকেরা এমন কথা বলার পর স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, এসব ছবি থেকেও যদি লগ্নি ফেরত না আসে, তবে ভালো ছবি তৈরি হবে কী করে?

অমিতাভ রেজা জানান, ছবির নির্মাণ, মার্কেটিং পলিসি, আলাদা করে গানের মিউজিক ভিডিও তৈরি-সব মিলে খরচ হয়েছে প্রায় ২ কোটি টাকা। কিন্তু প্রযোজকেরা এখন পর্যন্ত ফেরত পেয়েছেন ১ কোটি ৫০ লাখ টাকার মতো। এই নির্মাতা বলেন, ‘প্রথমে ১৯টি হলে ছবিটি মুক্তি পায়। দ্বিতীয় সপ্তাহে আরও ৭৫টি হলে ছবিটি ওঠে। ভালো ব্যবসাও করে। কিন্তু এই ৭৫টি হলের কয়েকটি ছাড়া বাকি হলগুলো এখনো টাকা দিচ্ছে না। প্রায় দেড় বছর হয়ে গেল, এসব হলের কাছে এখনো প্রায় ৭০ লাখ টাকা পাওনা আছে।’

একই কথা ‘আয়নাবাজি’ ছবির প্রযোজক জিয়াউদ্দিন আদিলেরও। তিনি বলেন, ‘ঢাকার বাইরের হলগুলোর এ ধরনের সমস্যা বেশি। তারা বিভিন্ন অজুহাতে বকেয়া টাকা দিচ্ছে না। হিসাবের গরমিল তো আছেই।’ এই প্রযোজক বলেন, প্রেক্ষাগৃহে দর্শকের সঠিক সংখ্যা জানার জন্য তিনি কিছু লোক নিয়োগ করেছিলেন। তাঁদের হিসাবে, পুরো সময়টায় প্রায় ৩০ লাখ দর্শক ছবিটি দেখেছে।

ঢাকা অ্যাটাক ছবিতে আরিফিন শুভ ও মাহিয়া মাহি
ঢাকা অ্যাটাক ছবিতে আরিফিন শুভ ও মাহিয়া মাহি

আদিলের দাবি, মুক্তির পর যে আনুষঙ্গিক খরচ হয়, সেগুলো বাদ দিয়ে টিকিটপ্রতি প্রযোজকের গড়ে ৯ টাকা করে পাওয়ার কথা। তাহলে প্রযোজক পাবেন ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। কিন্তু অসম বিপণনব্যবস্থার কারণে প্রযোজক প্রতারিত হচ্ছেন। প্রেক্ষাগৃহ থেকে ছবির টাকা ফেরত আসার পথে একটা বড় অঙ্কের টাকা হারিয়ে যাচ্ছে। টাকা আটকে থাকার কথা স্বীকার করলেন আয়নাবাজি ছবির পরিবেশক খোরশেদ আলমও। তিনি বলেন, অনেকগুলো হল থেকে বড় অঙ্কের বকেয়া টাকা প্রযোজক এখনো পাননি।

একই অবস্থা ২০১৭ সালের সবচেয়ে ব্যবসাসফল ছবি ‘ঢাকা অ্যাটাক’-এর বেলায়ও। মুক্তির পর দেশ-বিদেশে ব্যাপক আলোড়ন তোলে ছবিটি। ঢালিউডের মানুষের মুখে ছবিটির ব্যবসাসফল হওয়ার খবর শোনা যায়। কিন্তু আসল ঘটনা উল্টো। ঢাকা অ্যাটাক ছবির বিনিয়োগের টাকাও নাকি ফেরত আসেনি এখনো। ছবির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান স্প্ল্যাশ মাল্টিমিডিয়ার একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

স্প্ল্যাশ মাল্টিমিডিয়ার পক্ষ থেকে বলা হয়, ৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে এ পর্যন্ত ১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ফেরত পেয়েছেন তাঁরা। আর মাত্র ৯ লাখ টাকা প্রেক্ষাগৃহের কাছে বকেয়ার হিসাব আছে। লোকসান প্রায় ১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। ব্যবসাসফল ছবির তকমা পেয়েও বিনিয়োগের টাকা ফেরত না পাওয়ার জন্য বুকিং এজেন্ট, হল মালিক ও পরিবেশককে দায়ী করেছে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানটি।

ছবির পরিবেশক অভি কথাচিত্রের সত্ত্বাধিকারী জাহিদ হাসান বলেন, এ পর্যন্ত দেশের প্রায় আড়াই শ প্রেক্ষাগৃহে ঢাকা অ্যাটাক প্রদর্শিত হয়েছে। এখনো ঢাকার দুটি হলে চলছে। এ পর্যন্ত প্রায় নেট ৮ কোটি টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছে। মুক্তির আনুষঙ্গিক খরচ বাদে এখান থেকে প্রযোজকের পাওয়ার কথা ২ কোটি ২০ লাখ টাকার মতো। তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে প্রযোজক প্রায় ২ কোটি টাকা পেয়েছেন। বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে বকেয়া পড়ে আছে প্রায় ২০ লাখ টাকা। আস্তে আস্তে পাওয়া যাবে টাকাগুলো।’

দেশের বাইরেও বাংলা ভাষাভাষী দর্শকের কাছেও জনপ্রিয়তা পেয়েছে ঢাকা অ্যাটাক। ছবির পরিচালক দীপংকর দীপন বলেন, ‘১৭টি দেশের ৫১টি শহরে ছবিটি দেখানো হচ্ছে। এটি বাংলা ছবির বিরাট অর্জন।’ তিনি বলেন, শুধু দেশের বাইরে থেকেই প্রায় ৪০ লাখ টাকা আসবে। আমার জানামতে, পুরো টাকা চলে এলে দেশ-বিদেশ মিলিয়ে প্রযোজকের লাভ হওয়ার কথা। তবে টাকাটা পৌঁছাতে কিছু সময় লাগছে।

অন্যদিকে স্প্ল্যাশ মাল্টিমিডিয়া জানিয়েছে, বাইরে এতগুলো দেশে সিনেমাটি দেখানো হলেও এ যাবৎ মাত্র সিঙ্গাপুর থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকার হিসাব পাওয়া গেছে।

এভাবে ব্যবসাসফল ছবিতেও প্রযোজকের লোকসান প্রসঙ্গে প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, ‘ছবি মুক্তির জন্য পরিবেশক প্রতিষ্ঠান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বড় ও অভিজ্ঞ পরিবেশক দিয়েই ছবি মুক্তি দেওয়া উচিত। তা না হলে প্রযোজকেরা এ সমস্যা থেকে কখনোই মুক্তি পাবেন না।’

তবে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়ার অভিজ্ঞতা ভিন্ন। নিজেদের প্রযোজিত ছবির পরিবেশনা করেন তাঁরাই। তাঁদের ‘শিকারি’, ‘নবাব’, ‘বাদশা’, ‘বস ২’-যৌথ প্রযোজনার এই চারটি ছবিই ভালো ব্যবসা করেছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান আবদুল আজিজ। তিনি বলেন, ‘ছবিগুলো থেকে বিনিয়োগ উঠে মুনাফা হয়েছে।’