ফিল্ম আর্কাইভের নতুন যাত্রা

আর্কাইভের ভেতরে সাজানো ফিল্ম ক্যান।  ছবি: আশরাফুল আলম
আর্কাইভের ভেতরে সাজানো ফিল্ম ক্যান। ছবি: আশরাফুল আলম
>
  • শাহবাগে বাংলাদেশ বেতার ভবনের একটি তলায় ছিল ফিল্ম আর্কাইভ।
  • এখন আগারগাঁওয়ের ১.১২ একর জমির ওপর সাততলা ভবনজুড়ে।
  • বেড়েছে সুযোগ-সুবিধাও।

‘ছুটির ঘণ্টা’ চলচ্চিত্রটির চিত্রনাট্য মেলে ধরলেন ফিল্ম আর্কাইভের এক কর্মকর্তা। তাকে সাজানো অসংখ্য চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য। শুধু চিত্রনাট্য নয়, নতুন ভবনে ছবি রাখার আধুনিক ভল্টে মিলবে মুখ ও মুখোশ-এর মতো দেশি ছবি। আছে ব্যাটেলশিপ পটেমকিন-এর মতো বিদেশি ধ্রুপদি ছবিও।

চলচ্চিত্রপ্রেমীদের জন্য এ এক সুখবর বটে! রাজধানীর শাহবাগে বাংলাদেশ বেতার ভবনের একটি তলায় ছিল ফিল্ম আর্কাইভ। এখন সেটি আগারগাঁওয়ের প্রশাসনিক এলাকায় ১.১২ একর জমির ওপর সাততলা ভবনজুড়ে। একেবারে ঝাঁ-চকচকে। চলচ্চিত্র সংরক্ষণের জন্য অত্যাধুনিক ভল্টের পাশাপাশি আছে ডুপ্লেক্স লাইব্রেরি, চলচ্চিত্র দেখার মিলনায়তনও। নতুন করে আর্কাইভের শুরু নিয়ে মহাপরিচালক শচীন্দ্রনাথ হালদার বলেন, আগে ছোট্ট একটি জায়গায় ফিল্ম আর্কাইভ ছিল। এখন বিশাল আয়তনজুড়ে। বেড়েছে সুযোগ-সুবিধাও। এখন একটাই কাজ-মানুষকে এর সঙ্গে যুক্ত করা। আর্কাইভ সম্পর্কে তাদের জানানো।

নতুন ভবন ঘুরিয়ে দেখান ফিল্ম অফিসার ফখরুল আলম। সেখানে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত চলচ্চিত্র ভল্টে আছে দেশি-বিদেশি ৩ হাজার ১৯৬টি চলচ্চিত্র। আধুনিক এই ভল্টে ঢোকার সময় পরে নিতে হলো শীতের বিশেষ পোশাক। বিভিন্ন তাপমাত্রায় ভল্টগুলোতে আছে পূর্ণদৈর্ঘ্য, স্বল্পদৈর্ঘ্য, প্রামাণ্যচিত্র ও সংবাদচিত্রের প্রিন্ট, ডিউপ নেগেটিভ ও নেগেটিভ। আছে স্টপ জেনোসাইড, নদী ও নারী, তিতাস একটি নদীর নামসহ দেশি নানা ছবি। পাশাপাশি আছে ভারতের চলচ্চিত্র দেবদাস, জাপানি ছবি রশোমনসহ বিদেশি ছবি। আর্কাইভের এই কর্মকর্তা জানান, গবেষণা ও অন্যান্য কাজের জন্য নীতিমালা অনুযায়ী ছবিগুলো ব্যবহার করা যায়।

এরপর আর্কাইভের ডুপ্লেক্স লাইব্রেরির দেখা মেলে। এখনো কাজ চলছে। সেখানে সারি সারি সাজানো চিত্রনাট্য ও অন্য নানা চলচ্চিত্রের নথি। সব মিলিয়ে এখন ৬৫ হাজার ৪০০ ডকুমেন্ট আছে। এর মধ্যে ৫০ হাজার ৪৩টিই দেশি-বিদেশি চলচ্চিত্রের বই। ২ হাজার ৫১৫টি চিত্রনাট্য এবং আরও বিভিন্ন চলচ্চিত্রসংক্রান্ত দলিল। আছে চলচ্চিত্রের পোস্টার নিয়ে বই। চিত্রালী, পূর্বাণীসহ চলচ্চিত্রসংক্রান্ত অন্যান্য পত্রিকার বিভিন্ন বছরের সংকলন। লাইব্রেরিয়ান আছমা আক্তার বলেন, ২০০ টাকা দিয়ে সদস্য হয়ে লাইব্রেরির বই ব্যবহার করা যাবে। তবে বাসায় নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

একটি কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, একজন কর্মচারী আলোর সামনে ছবির প্রিন্ট মেলে দেখছেন। কোনো সমস্যা আছে কি না, দেখে ঠিকঠাক করেন তিনি। আরও দেখা মেলে চলচ্চিত্র ল্যাবরেটরি, হাই রেজল্যুশন ডিজিটাল ফিল্ম স্ক্যানার, ফিল্ম রেস্টোরেশন ইউনিট, কালার কারেকশন ইউনিট, সাউন্ড রিপ্রডিউসার, নন-লিনিয়ার এডিটিং প্যানেলসহ চলচ্চিত্রসংক্রান্ত নানা কিছু।

দেখতে দেখতে পাক্কা দুই ঘণ্টা চলে যায়। ফখরুল আলম জানান, এখনো মিলনায়তন দেখা বাকি। ৩০০ ও ৫০০ সিটের দুটি আধুনিক মিলনায়তন আছে। আছে একটি সেমিনার কক্ষও। প্রতি বৃহস্পতিবার বিনা মূল্যে ছবি দেখানো হয়। যে কেউ দেখতে পারেন।

নতুন ভবনে সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি আছে কিছু সমস্যাও। বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের পরিচালক নিজামুল কবীর জানান, ফিল্ম আর্কাইভের এখন সমস্যা হলো, জনবল কম। পুরো কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় জনবল নেই। যন্ত্রপাতিরও অভাব আছে।

আর্কাইভের সব কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের পরই সব কাজ জোরালোভাবে শুরু হবে। খুব শিগগির হচ্ছে উদ্বোধন। চলে আসার সময় হয়ে যায়। উঠতে উঠতে মহাপরিচালকের একটি কথা কানে বাজে, ফিল্ম আর্কাইভে আধুনিকভাবে চলচ্চিত্র সংরক্ষণের সুযোগ আছে। নিজের কাছে রেখে দিলে নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর্কাইভে জমা দিয়ে চলচ্চিত্রটি সংরক্ষণের আহ্বান জানান তিনি।