বদলে যাওয়া টয়া

>

টয়া, ছবি: কবির হোসেন
টয়া, ছবি: কবির হোসেন

অনেক ‘খবর’ আছে মুমতাহিনা টয়ার। আছে কিছু গোপন খবর। সবই বলবেন তিনি—এমন ইঙ্গিত পেয়েই এক সকালে টয়ার বাসায় হাজির। বসার ঘরে মুখোমুখি হয়েছিলেন হাবিবুল্লাহ সিদ্দিক

‘আগারগাঁও সরকারি নিউ কলোনি’। মুমতাহিনা টয়ার পাঠানো খুদে বার্তায় বাসার ঠিকানা বলতে এতটুকুই। কলোনির মাঠে সকালবেলায় ক্রিকেট খেলছিল একদল কিশোর। ‘টয়ার বাসা কোন দিকে?’ বাক্য শেষ হওয়ার আগেই তাদের হাত তাক করল একটা চারতলা ভবন। সেটা মিলিয়ে খুব সহজেই পৌঁছানো গেল টয়ার বাসার দরজায়। দরজা খুলেই জানতে চাইলেন, ‘এত তাড়াতাড়ি কীভাবে এলেন?’ ত্বরিত উত্তর, লোকাল বাসে!

টয়া হেসে ফেললেন। আড্ডার জন্য প্রস্তুত হয়েই ছিলেন তিনি। বসার ঘরে বসতে বসতে বললেন, ‘আপনাকে একটি নতুন খবর দিই, আমার ছবিটা কিন্তু এ মাসেই মুক্তি পেতে পারে। এখন সেন্সরে জমা দেওয়া আছে।’ বলেই বসার ঘরের কোনার দিকে ইশারা করলেন। সেখানে একটা টেবিলের ওপর বাঁধাই করা টয়া অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র ‘বেঙ্গল বিউটি’র পোস্টার। ছবিতে টয়া অভিনয় করেছেন প্রবাসী অভিনেতা রাশান নূরের বিপরীতে। ছবিটি এরই মধ্যে সেন্সর বোর্ডে দেওয়া হয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক এগোলে এ মাসে দেশে ও দেশের বাইরে মুক্তি পাবে ছবিটি।

ছবিটি নিয়ে টয়ার একটাই মন্তব্য, ‘এটা ১৯৭১ সালের গল্প। কিন্তু যুদ্ধ ছাড়া একটা অন্য রকম ভালোবাসার গল্প দেখানো হয়েছে। ওই সময়টা ধরা হয়েছে।’

আমরা কথা ঘোরাই। টয়ার শুরুর সময়টা ধরতে চাই। ‘আমি কিন্তু নোয়াখাইল্লা।’ বাক্য শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে চেনা হাসিতে ঘর ভরিয়ে ফেলেন। তবে নোয়াখালীতে খুব বেশি থাকা বা যাওয়া হয়নি। এখন যেকোনো উৎসব বা পারিবারিক কোনো অনুষ্ঠানের সূত্রে যাওয়া হয়। তা ছাড়া ঢাকাতেই। কিন্তু বেড়ে ওঠা, কিশোরীবেলা সবটুকুই কেটেছে রাঙামাটির প্রকৃতির সঙ্গে। এই তথ্যের সঙ্গে যোগ করেন, ‘পাহাড়ের ওপর আমাদের একটা সুন্দর বাড়ি। আমরা পরিবারের সবাই মিলে মাঝেমধ্যে সেখানে বেড়াতে যাই।’

টয়ারা দুই বোন। এক বোনের বিয়ে হয়েছে। একটা বাচ্চাও আছে। সেই বাচ্চা হলো টয়ার সবচেয়ে বড় সমালোচক। খালামণি এটা কেন করছ, এটা ভালো হয়নি, এটা সুন্দর হয়েছে—এ–জাতীয় প্রশ্নবাণে আটকে ফেলে সে।

সেই সমালোচক বলি, দর্শকের কথা বলি, নিজের কাজ সম্পর্কে বেশ সচেতন টয়া। লাক্স সুপারস্টার থেকে বের হয়েছেন ২০১১ সালের শুরুতে। তারপর থেকে টুকটাক কাজ করতেন। কখনো বিজ্ঞাপন, নাটক বা টেলিছবি। তবে ২০১৬ সালের শেষ দিকে প্রকাশ পায় টয়ার নাচের ‘লোকাল বাস’ গানের মিউজিক ভিডিও। তারপরই বদলে যায় সব হিসাব–নিকাশ। গানটির ‘হিট’ তকমা লাগার পরপরই অনবরত মিউজিক ভিডিওর জন্য প্রস্তাব পেতে থাকেন টয়া। করেছেনও দু-তিনটি। কিন্তু সে অর্থে ‘লোকাল বাস’–এর জায়গা ছুঁতে পারেনি একটিও। আপাতত মিউজিক ভিডিওর জন্য ‘না’ সাইনবোর্ড ঝুলিয়েছেন। এখন নাটক করছেন নিয়মিত, বিজ্ঞাপনও। তবে সম্প্রতি ক্লোজআপ কাছে আসার গল্পে অভিনয় করা টয়ার কাছে একটা স্বপ্নপূরণ। ‘জানেন, ক্লোজ আপে কাজ করা আমার একটি স্বপ্নের মতো ছিল। খুব করে চাইতাম কাজটির জন্য কবে আমাকে ডাকবে। মানুষ খুব করে চাইলে সেটা পূরণ হয়। আমার হয়েছে।’

শুধু কাজ নয়, সম্পর্কের ব্যাপারেও বেশ সচেতন। কলেজজীবন শুরু করে একটি প্রেম হয়েছিল। কিন্তু মিডিয়ায় নিয়মিত কাজ করা মেনে নিতে পারেননি প্রেমিকপ্রবর। এখন অবশ্য একজনের সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ক আছে। সম্পর্কটা কত দূর যাবে, সেটা একটা চিন্তার ব্যাপার। বিয়েটা নিজের ও পারিবারিকভাবেই পছন্দ হবে, এমনটাই ইঙ্গিত দিলেন তিনি।

তবে টয়ার এখন পুরোদস্তুর প্রেম চলছে কাজের সঙ্গে। ‘যে চরিত্রে যখন ঢুকে যাই, তখন আসলে চরিত্র বা বিপরীত মানুষ দুটির সঙ্গেই প্রেম করি। ভালো কিছু করার জন্য পরিচালক ও সহ–অভিনয়শিল্পীর সঙ্গে প্রেম করি। এই প্রেম না থাকলে ঠিকঠাক কাজ করা কঠিন।’

টয়ার বাবা ব্যবসায়ী, মা স্কুলশিক্ষক। দুজন সফল। টয়া কি সফল? মাথা নাড়েন। বলেন, ‘মায়ের ও আমার সফলতা, সবকিছুর পেছনে আমার বাবার প্রচ্ছন্ন হাতটা আছে। মায়ায়–ছায়ার মতো ওই হাত না থাকলে এত কিছু সম্ভব হতো না। উনি নিজের ক্যারিয়ারের চেয়ে আমাদের নিয়ে বেশি ভাবতেন। এ কারণেই আমরা এখনো ঠিকঠাক আছি, ঠিকঠাক কাজ করতে পারছি।’

বাবা আর মায়ের ভালোবাসা নিয়ে আরও অনেক দূর যেতে চান টয়া।