স্টেজের গান আবার কী?

>
ফাহমিদা নবী
ফাহমিদা নবী
• ফাহমিদা নবীর গানের অ্যালবাম ‘ভুল করে ভালোবেসেছি’।
• এনেছে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন।
• বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এই অ্যালবামের প্রকাশনা অনুষ্ঠান হয়।

সংগীতশিল্পী ফাহমিদা নবীর নতুন গানের অ্যালবাম ‘ভুল করে ভালোবেসেছি’। এনেছে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন। এ প্রতিষ্ঠান থেকে আসা এটি তাঁর দ্বিতীয় অ্যালবাম। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ধানমন্ডির বেঙ্গল বইয়ে এই অ্যালবামের প্রকাশনা অনুষ্ঠান হয়। এরপর আজ শুক্রবার বিকেলে অ্যালবাম আর গানের প্রসঙ্গে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেন তিনি।

অ্যালবামের নাম ‘ভুল করে ভালোবেসেছি’ কেন?
মানুষ ভালোবাসবেই এটা সত্যি। ভালো না বেসে কেউ থাকতে পারে না।

তাহলে ‘ভুল করে ভালোবেসেছি’ কেন বললেন?
নেতিবাচক অর্থে বলিনি। আমি বলেছি, ভুল করে হলেও যেন আমরা একে অপরকে ভালোবাসি। কারণ, ভালোবাসা ছাড়া কোনো মানুষ থাকতে পারে না। ভুল করে হোক, ঠিক করেই হোক, সবাই যেন ভালোবাসে—আমি এটাই বলতে চেয়েছি। যে ভালোবাসে, সে ভালোই বাসে। এই ভালোবাসা না থাকলে সমাজ তার সৌন্দর্য হারাবে। আমরা দেখি, একটি সম্পর্কে দূরত্ব বাড়লেও আবার তা কমিয়ে কাছে আসার চেষ্টা করে, সম্পর্ক ভাঙলে গড়ার চেষ্টা করে।

এখন তো সবাই সিঙ্গেল আর তিন গান দিয়ে ইপি প্রকাশ করছে। আপনি নিজেও কয়েকটি একক গান প্রকাশ করেছেন। এবার আটটি গান দিয়ে অ্যালবাম প্রকাশ করেছেন।
আমি তো অনন্তকাল বেঁচে থাকব না, অস্তিত্ব হিসেবে থাকবে আমার কাজ—যা আমাকে বাঁচিয়ে রাখবে। একক গান কেউ চাইলে সংগ্রহ করে রাখতে পারে না, একটি ক্যাসেট কিংবা সিডিতে গান প্রকাশ করা সম্ভব হলে তা থেকে যায়। আর গান যদি দর্শকের হৃদয় ছুঁয়ে যায়, তাহলে তো কথাই নেই। সেই ভাবনা থেকে কিছু ভালো গান মানুষের সংগ্রহে রাখার জন্য এই অ্যালবাম প্রকাশ। বেঙ্গল ফাউন্ডেশন থেকে ‘ভুল করে ভালোবেসেছি’ আমার দ্বিতীয় অ্যালবাম। এ প্রতিষ্ঠান থেকে প্রকাশিত আমার প্রথম অ্যালবাম ‘দুপুরের একলা পাখি’।

এখন অনেকেই বলেন, এটি স্টেজের গান।
আরে, এ কথা তো আমাকেও প্রায়ই শুনতে হয়। আমাকে অনেকে বলেন, আপা আপনার জন্য একটি স্টেজের গান তৈরি করেছি। আমি ভাবি, স্টেজের গান আবার কী? গান হচ্ছে মানুষের সুখ-দুঃখের কথামালা, সমাজের অসংগতির কথা তুলে ধরা। মন ভালো করার জন্য গান। সেসব ভেবে এই অ্যালবামে আটটি গান গেয়েছি মন ভালো করার জন্য। গান দিয়ে দর্শককে আনন্দ দিতে চাই, ভালোবাসতে চাই।

এখন অনেকেই গানের চেয়ে এর ভিডিও তৈরিতে বেশি মনোযোগী হচ্ছেন। ভিডিও তৈরিতে অনেক টাকা খরচ করছেন।
আমি বেশি কিছু বলতে চাই না। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি কথা বলব, তিনি বলেছিলেন, ‘তোমায় গান শোনাব’। তিনি কিন্তু বলেননি, তোমায় গান দেখাব। তাই বলব, গান শোনানোর দিকে মনোযোগী হতে হবে সবাইকে, দেখানোর দিকে নয়।

এখন আবার সবাই গানের ভিউ নিয়ে খুব মাতামাতি করছেন। কেউবা এই ভিউকে গানের মানদণ্ড মনে করছেন।
এসব ভিউটিউর দিকে মনোযোগী না হয়ে গানের চর্চায় মন দিন। এ নিয়ে সময় অপচয় করার কোনো মানে হয় না। যে গান দেখার, সে গান বেশি দিন টিকে থাকে না। কিন্তু যে গান শোনার, তা টিকে থাকে যুগ-যুগান্তরে। যে শিল্পীর বেশি দিন সুন্দরভাবে কাজ করার ইচ্ছে আছে, তাঁদের এসব নিয়ে ভাবা ঠিক হবে না। ইদানীং কাগজে না লিখতে লিখতে কি-প্যাডে বা মুঠোফোনে লেখালেখি করার ফলে দেখা গেছে অনেকেরই হাতের লেখা খারাপ হয়ে গেছে। তেমনি চর্চা বাদ দিয়ে একজন শিল্পী ভিউ গণনা করার মিশনে নামলে গানের কিছুই থাকবে না।

গানের অবস্থা কেমন মনে হচ্ছে?
এখন বেশির ভাগ শিল্পী খুব অস্থির। সবাই ভালো গান তৈরির প্রতিযোগিতার চেয়ে এর আশপাশের নানা কিছু নিয়ে বেশি ব্যস্ত। মূল কাজ গান থেকে কিছুটা সরে গেছে। আমি ধীরে চলতে পছন্দ করি। এ নিয়ে আমাকে অবশ্য অনেক কথা শুনতে হয়। আমি ওসব নিয়ে ভাবি না।

গানের ভবিষ্যৎ কেমন মনে হচ্ছে?
কোনো কিছুর পরিবর্তন হয় না। শুধু রূপান্তর ঘটে। আজ যা কিছু ঘটছে, এসব আবার ফেরত আসবে। আবার মানুষ গান শুনবে, মানুষ কিন্তু একসময় ঠিকই শিকড়ের দিকে ফিরবে।