'ভালোবাসা দিবস' চ্যানেলগুলোর জন্য ভালো উপলক্ষ

সায়েন্সের মেয়ে আর্টসের ছেলে নাটকের দৃশ্যে আফরান নিশো ও মেহ্‌জাবীন
সায়েন্সের মেয়ে আর্টসের ছেলে নাটকের দৃশ্যে আফরান নিশো ও মেহ্‌জাবীন

১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে সারা দিন সব চ্যানেল প্রচার করেছে বিশেষ অনুষ্ঠান। আর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করেছে নাটক। আমাদের এবারের আলোচনা ভালোবাসা দিবসের নাটক। বাংলাভিশনে রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে ৩টি গল্প নিয়ে ‘ক্লোজআপ কাছে আসার গল্প’ শিরোনামে প্রচার করেছে পরপর ৩টি নাটক। এই নাটকগুলো নিয়ে যে অনেক উচ্চাশা ছিল, এরও প্রমাণ মিলেছে তাদের প্রচার–প্রচারণার ধরন দেখে।

প্রথম নাটকের গল্পটি ছিল খায়রুল হাসানের লেখা মাবরুর রশীদের পরিচালনায় আমি তোমার গল্প হব। অভিনয় করেছেন মুমতাহিনা টয়া, তৌসিফ মাহবুব প্রমুখ। টয়া একজন ওয়েডিং প্ল্যানার আর তৌসিফ পেশাদার ফটোগ্রাফার। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দুজনের সাক্ষাৎ, কাজের সূত্রে ভুল–বোঝাবুঝি এবং বিরোধ দিয়ে গল্প শুরু। অতঃপর আড়ালে দুজনকেই দুজনের ভালো লাগা। তারপর আপস এবং কাছে আসা। কাছে আসার মুহূর্তে তৌসিফ জানতে পারে, টয়ার একটি ছোট্ট মেয়ে আছে। তা নিয়ে আসে দ্বন্দ্ব ও বিচ্ছেদ। শেষে সব ভুল–বোঝাবুঝির অবসান হয় যখন টয়া জানায়, মেয়েটি দুর্ঘটনায় পিতৃ–মাতৃহারা তার বোন আর দুলাভাইয়ের সন্তান। পরে দুজনের ভুল ভাঙে এবং ভালোবাসা চূড়ান্ত রূপ পায়।

এককথায় বলা যায়, সংক্ষিপ্ত পরিসরে বৃহৎ গল্প এবং গল্পটি চমৎকার। চিত্রনাট্য, পরিচালনা ও অভিনয়—সবই মনে দাগ কাটার মতো। তবে নাটকে গল্পের বিস্তারে তৌসিফের মুখ দিয়ে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যে ধারাবিবরণী দেওয়া হয়েছে, তা নাট্যগুণকে কিছুটা ক্ষুণ্ন করেছে বলে মনে হয়। বর্ণনাটি অনেকটা প্রামাণ্যচিত্রের মতো মনে হয়েছে।

দ্বিতীয় গল্পটি ছিল রফিকুল ইসলামের রচনা ও শাফায়েত মনসুরের পরিচালনায় শহরে নতুন গান। অভিনয় করেছেন রোজী সিদ্দিকী, সাবিলা নূর, মনোজ কুমার প্রমুখ। নাটকের শুরুতেই দেখানো হয়েছে, সাবিলা নূরের একটি উৎসবে বিদেশ যাওয়াকে কেন্দ্র করে জটিলতা। যার জন্য অনেকটাই দায়ী পাশের ফ্ল্যাটের যুবক মনোজ। সাবিলা ক্ষুব্ধ ও আবেগপ্রবণ হয়ে মনোজের সঙ্গে অস্বাভাবিক দুর্ব্যবহার করে বসে। অতঃপর মায়ের কাছে সে জানতে পারে, মনোজ বাক্‌শক্তিহীন এক দুর্ভাগা। তারপর থেকে দেখা দেয় মনোজের প্রতি সাবিলার দুর্বলতা। এরপর মনোজ যতই উপেক্ষা করে তাকে, সাবিলা ততই আকৃষ্ট হয়। শেষে অনেক সাধনার মধ্য দিয়ে সাবিলা মনোজের আস্থা অর্জন করে। পরস্পর পরস্পরের কাছে আসে।

গল্পটি সুন্দর, কিন্তু অতি আবেগময়। কেন না, সাবিলার মতো একটি মেয়ে বাক্‌হারা মনোজর প্রতি সহানুভূতিশীল হতে পারে, ভালোওবাসতে পারে, কিন্তু তাকে নিয়ে ঘর বাঁধতে পারে, এটা দর্শকের পক্ষে বিশ্বাস করা কঠিন। বাস্তবে হয়তো এটা হতেই পারে, কিন্তু এত বড় ঘটনা গল্পে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা মোটেই সহজ নয়। মনোজ বাক্‌শক্তিহীন শুনেই সাবিলা তার প্রেমাসক্ত হয়ে পড়ল না দেখিয়ে বিষয়টি আরও যুক্তিপূর্ণ করে তোলা উচিত ছিল।

তৃতীয় ও শেষ গল্পটি ছিল এ কে এম মাহফুজুল আলমের রচনা ও রুবায়েত মাহমুদের পরিচালনায় তবুও ভালোবাসি। অভিনয় করেছেন সিয়াম আহমেদ, সাফা কবির প্রমুখ। বাগদান ভেঙে দিয়ে অভিনেত্রী সাফা কবিরের সঙ্গে পরিচালক সায়েমের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠার গল্প তবুও ভালোবাসি। বিজ্ঞাপন তৈরির পর সাফাকে ভালোবেসে পরিচালক সিয়াম শুরু করে চলচ্চিত্র নির্মাণ। ছবির শুটিংয়ে সাফার জন্য চিত্রনাট্য বা সংলাপ কিছু নেই। সিয়ামের বিবরণ অনুযায়ী, তাদের দুজনের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের সংলাপ দিয়ে শুটিং করতে করতে সাফা বুঝে ফেলে সিয়াম আসলে তাকে ভালোবাসে। তারপর সে–ও জড়িয়ে যায়।

গল্পটি নাটকে উপস্থাপিত হয়েছে বিমূর্ত আঙ্গিকে। ফলে সাধারণ দর্শকের কাছে হয়েছে বেশ দুর্বোধ্য। তবে চিত্রনাট্য, সংলাপ ও অভিনয় ভালো ছিল। বলা যায়, তিনটি নাটকই বিষয় বৈচিত্র্যের দিক থেকে ছিল অভিনব, সংলাপের দিক থেকে যথাযথ এবং অভিনয় ও নির্মাণের দিক থেকে আকর্ষণীয়।

এবার ভালোবাসা দিবসে একটি মজার টেলিছবি প্রচারিত হয়েছে এটিএন বাংলায় রাত ১০টা ৫৫ মিনিটে। নাম সায়েন্সের মেয়ে আর্টসের ছেলে। সৈয়দ জিয়া উদ্দিনের রচনায় পরিচালনা করেছেন হাবিব শাকিল। অভিনয়ে আফরান নিশো, মেহ্‌জাবীন প্রমুখ।

টেলিছবির নামকরণ শুনেই বোঝা যায়, বিষয়বস্তুটি আকর্ষণীয়। মাতৃহারা ধনীর দুলালি রুশনার দুই গৃহশিক্ষক মেহ্‌জাবীন সায়েন্সের মেয়ে ও আফরান আর্টসের ছেলে। রুশনার পরিচর্যার ক্ষেত্রে তাদের দুজনের বিপরীতমুখী চিন্তা ও আচরণের মাধ্যমেই লেখক ও নির্মাতা ফুটিয়ে তুলেছেন সায়েন্স ও আর্টসের চিরন্তন দ্বন্দ্ব। এই দ্বন্দ্ব থেকেই প্রথমে দুজনের মধ্যে বিরোধ, অতঃপর দুজনের প্রতি দুজনের ভালো লাগা, কাছে আসা এবং শেষে একে অন্যের কাছে আত্মসমর্পণ। সব মিলিয়ে টেলিছবিটি ছিল বেশ উপভোগ্য।

তারপরেও দর্শকের কাছে দু-একটি বিষয় অমীমাংসিতই মনে হয়েছে। যেমন, মেহ্‌জাবীনকে যেভাবে দেখানো হয়েছে, মনে হয়েছে সে নিজ পরিবারের সঙ্গে থাকে, অথচ পরিবার দেখানো হয়নি। মাহবুব ও রুশনার প্রেমের বিষয়টি না আনলেই ভালো হতো। আর শেষে সায়েন্সের মেয়ে ও আর্টসের ছেলের পারস্পরিক আত্মসমর্পণ ঠিক আছে, কিন্তু সংলাপটি ঠিক নেই। সায়েন্সের মেয়ে আর্টসের ছেলেকে সাহস জোগাবে, এটা কি ঠিক? বরং তাকে বাস্তবতা শেখাবে বা যুক্তিবাদী করবে বললে গ্রহণযোগ্য হতো।