গ্যারি ওল্ডম্যান দর্শন

>
বাফটা হাতে গ্যারি ওল্ডম্যান
বাফটা হাতে গ্যারি ওল্ডম্যান

গোল্ডেন গ্লোবের পর বাফটা পুরস্কারও পেলেন হলিউড অভিনেতা গ্যারি ওল্ডম্যান। ডার্কেস্ট আওয়ার ছবিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলের ভূমিকায় অভিনয় করে এসব পুরস্কার পেলেন ওল্ডম্যান। সামনে পেতে পারেন অস্কারও।

প্রথমটায় তাঁকে দেখে একটুখানি ধাক্কার মতো লাগল। ভু সিনেমা হলের পর্দায় তখন ছবি শেষ। টাইটেল উঠছে ডার্কেস্ট আওয়ার ছবির। এর মধ্যেই কোন ফাঁকে মঞ্চে হাজির তিনি। চোখে কালো ফ্রেমের চশমা। টানটান হাঁটার ভঙ্গি। রীতিমতো ধারালো চেহারা। কথা বলছেন ঝকঝকে ভরাট গলায়। এই মানুষটাই কি এতক্ষণ খানিক কুঁজো হয়ে হাঁটছিলেন ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের সরু করিডরে! কথা বলছিলেন জড়িয়ে। চুরুট ফুঁকছিলেন ধুমসে?

বিশ্বাস করা মুশকিল। মাস তিনেক আগে, সেদিন ছিল ডার্কেস্ট আওয়ার ছবির বিশেষ প্রদর্শনী। শুধু ইউকে রাইটার্স গিল্ড সদস্যদের জন্য বরাদ্দ। বিশেষ আকর্ষণ ছবি শেষে ছবির অভিনেতা গ্যারি ওল্ডম্যান, নির্মাতা জো রাইটসহ মুখ্য কলাকুশলীদের উপস্থিতি।

ব্রিটেনের জাতীয়তাবাদী ছবি দেখার ইচ্ছে বেশি ছিল না। কিন্তু গ্যারি ওল্ডম্যান স্বয়ং হাজির থাকবেন। আসবেন এই ছবির লেখক-পরিচালকও। এসব বড়সড় মানুষের কাজের কথা শুনতে নিশ্চয়ই মন্দ লাগবে না, সেই লোভেই যাওয়া। স্বাভাবিকভাবেই চিত্রনাট্যের কৌশল আর দু-চারটা প্রশ্ন বাদ দিয়ে সেদিনের আলাপচারিতায় মূল বিষয় ছিল গ্যারি ওল্ডম্যানের এই আমূল বদলে যাওয়া। আর নির্মাতা হিসেবে তাঁর চ্যালেঞ্জ কী—এজাতীয় দু-চারটা গুরুগম্ভীর আলাপ নির্মাতা জো রাইটের সঙ্গে।

সাংবাদিকসুলভ কোনো প্রশ্ন করা সমীচীন হবে কি না বুঝতে পারছিলাম না। গিল্ডের নতুন সদস্য হওয়ার একটা জড়তা তো আছেই। কিন্তু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে মানুষটাকে দেখা আটকাবে কে। আর স্বভাব না যায় মলে! আশপাশে কেউ ছবি তুলছে না। তাতে কী! আমি তুলব না তুলব না করেও টুক করে একটা ছবি তুলেই ফেললাম মুঠোফোনে।

তখনো অবশ্য জানি না, চোখের সামনে বসে হালকা পা নাচাচ্ছেন যে মানুষটা, খানিক চোখ কুঁচকে, পানির বোতলে চুমুক দিতে দিতে সামনে বসা আমাদের দেখছেন যিনি, তিনিই হতে যাচ্ছেন এ বছরে হলিউড অ্যাওয়ার্ড মৌসুমের সবচেয়ে আলোচিত চরিত্র।

চরিত্রের প্রয়োজনে নিজেকে বদলে ফেলা সিনেমায় নতুন কিছু নয়।

কিন্তু ডার্কেস্ট আওয়ার ছবিতে গ্যারি ওল্ডম্যান যেটা করেছেন, সেটা স্রেফ বদলে যাওয়ার চেয়ে অনেক বেশি কিছু।

ডার্কেস্ট আওয়ার ছবিতে গ্যারি ওল্ডম্যান
ডার্কেস্ট আওয়ার ছবিতে গ্যারি ওল্ডম্যান

বাতাসে এখনো চুরুটের গন্ধ

১৯৪০ সাল-পরবর্তী ঘটনা। কঠিন এক সংকটের মুখে ব্রিটেন। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নাম প্রস্তাব করা হয়েছে উইনস্টন চার্চিলের। বুড়ো মানুষটা চুরুটের ধোঁয়ায় খকখক করে কাশতে কাশতে সেই খবর শুনেছেন। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কোনো উত্তেজনা আপাতদৃষ্টিতে তাঁকে স্পর্শ করেনি। খেয়ালি আর বদরাগী এই মানুষ কীভাবে হিটলারের মতো ভয়ংকর লোকের মোকাবিলা করলেন, কীভাবে তাঁর অবিশ্বাস্য কৌশলে ডানকার্কে আটকে পড়া হাজারো ব্রিটিশ সেনার জীবন রক্ষা হলো—এসব তথ্য মিলবে ইতিহাসের পাতায়। যা মিলবে না সেটা গ্যারি ওল্ডম্যানের অসামান্য অভিনয়। চলনে-বলনে নিজেকে পুরোপুরি বদলে ফেলে পুরোপুরি অন্য এক মানুষ গ্যারি ওল্ডম্যান। অগ্রসর প্রযুক্তি আর মেকআপম্যানের দক্ষ হাতের কাজ তো আছেই। সবার ওপরে নিশ্চয়ই সাধনা।

১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের পাতালঘরে এখনো নাকি কেউ কেউ রহস্যময় চুরুটের গন্ধ পান। সেই চুরুটের মালিক ধারণা করা হয় আর কেউ নন, চার্চিল স্বয়ং। উইনস্টন চার্চিল বাকি বিশ্বের কাছে তাঁর কূটচালের জন্য চেনা নাম হতে পারেন। কিন্তু নিজের দেশে তিনি রীতিমতো এক মহানায়ক। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর জীবনের কঠিনতম কিছু অধ্যায় নিয়ে ডার্কেস্ট আওয়ার

টেনের ইতিহাস নিয়ে আগ্রহ না থাকতে পারে। উইনস্টন চার্চিলকেও নাই-বা ভালোবাসলেন। জো রাইট পরিচালিত এই ছবি দেখতে হবে এক অসামান্য শক্তিধর অভিনেতাকে নতুন করে চেনার জন্য।

থিয়েটার দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন। এখনো ইংরেজ অভিনেতা গ্যারি ওল্ডম্যান থিয়েটারেরই মানুষ আসলে। ১৮ ফেব্রুয়ারি রয়েল আলবার্ট হলে সেরা অভিনেতার বাফটা হাতে নিয়ে জানিয়েছেন, আবারও মঞ্চেই ফিরছেন তিনি। ভয়ানক জটিল ও কুটিল সমর পরিকল্পনা নয়। এবারে তাঁকে দেখা যাবে এক সাদামাটা শিক্ষকের চরিত্রে। জাত অভিনেতা আর কাকে বলে!

খোদ ব্রিটেনে উইনস্টন চার্চিলের মতো চরিত্র করতে বড় ধরনের বুকের পাটা লাগে। সেটা কি তাঁর আছে? এই নিয়ে শঙ্কায় ছিলেন গ্যারি ওল্ডম্যান। সেটা স্বীকারও করেছেন এবারে বাফটা হাতে নেওয়ার পরে। তারপর কী ভেবে রাজি হলেন?

সেই উত্তরও দিয়েছেন সহজভাবে, ‘সাতপাঁচ ভেবে রাজি হয়ে গেলাম। মনে হলো চার্চিল যদি হিটলারের মোকাবিলা করতে পারেন, তাহলে আমি কেন এই চরিত্রটা করার সাহস করতে পারব না।’

সেই যে সাহসটা করলেন, তারপরই ইতিহাস।

গোল্ডেন গ্লোব ঘরে এসেছে। বাফটা এসেছে। অস্কারও খুব সম্ভবত এল বলে।