যোগ্য নাট্যকারের অভাব

নাকফুল নাটকের দৃশ্য
নাকফুল নাটকের দৃশ্য

২ মার্চ ছিল শুক্রবার। সকাল ৮টা ১০ মিনিটে এনটিভিতে প্রচারিত হলো সরাসরি গানের অনুষ্ঠান ‘ছুটির দিনের গান’। এদিন শিল্পী ছিলেন অনুপমা মুক্তি এবং উপস্থাপক নাহিদ আফরোজ। অনুপমা মুক্তি এ অনুষ্ঠানে একটানা প্রায় দুই ঘণ্টা গান পরিবেশন করেন। শুরুতেই স্বাধীনতার মাসকে স্মরণ করে পরিবেশন করেন একটি দেশাত্মবোধক গান ‘স্বাধীনতা এক গোলাপ ফোটানো দিন’। তারপর একে একে পরিবেশন করেন এপার বাংলা ও ওপার বাংলার সব জনপ্রিয় গান। যেমন ‘আমার নীল আঁচলে আকাশনীলে রাখব তোমারে’, ‘কেন আশা বেঁধে রাখি,’ ‘ওই ঝিনুক ফোটার সাগরবেলায় আমার ইচ্ছে করে’সহ বেশ কিছু গান। ওপার বাংলার গানের মধ্যে ছিল ‘যদিও রজনী পোহাল তবুও,’ ‘চৈতি ফুলে কি বাঁধিস রাঙা রাখি’, ‘আরও কিছুক্ষণ না হয় রহিতে কাছে’ ইত্যাদি। গানের নির্বাচন দেখেই বোঝা যায় তিনি ছুটির দিনে দর্শক-শ্রোতাদের মন ভরিয়ে দিয়েছেন। তাঁর কণ্ঠ সুন্দর এবং উপস্থাপনাও বিনয়ী ও আন্তরিকতাপূর্ণ, যে কারণে গান শোনার পাশাপাশি অনেক দর্শক ফোনে তাঁর সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছেন, গানের অনুরোধ করেছেন।

তবে একটি কথা আমরা আগেও বলেছি, আবারও বলতে চাই, তা হলো তিনি নিজের গান গেয়েছেন মাত্র একটি। এ ধরনের অনুষ্ঠানে অন্যের জনপ্রিয় গানের পাশাপাশি শিল্পীর নিজের গান তুলে ধরার তো একটি বড় সুযোগ। আর ভবিষ্যতে তাঁকে দাঁড়াতে হবে তো নিজের গানের ওপরই। আশা করি শিল্পী কথাটির তাৎপর্য অনুধাবন করবেন।

এবার টেলিছবি ও নাটক। ইদানীং টেলিছবি ও নাটকের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সংকট মনে হচ্ছে গল্পে। উপযুক্ত গল্প আর যোগ্য নাট্যকারের অভাবে নাটক ও টেলিছবিগুলো হচ্ছে একঘেয়ে, অযৌক্তিক ও আবেদনশূন্য। ১ মার্চ রাত ১১টায় এটিএন বাংলায় প্রচারিত হলো টেলিছবি নাকফুল। রচনা পার্থিব মামুন ও পরিচালনা অঞ্জন আইচ। অভিনয়ে ইরফান সাজ্জাদ, নাদিয়া খানম, মুক্তা, সবুর খন্দকার প্রমুখ। টেলিছবির গল্পটি সংক্ষেপে এমন, ইরফান নিজের অফিসের লোনের কাজ নিয়ে ব্যাংকে গিয়ে দেখেন নাদিয়াকে। বারবার দেখলেও তাঁর সঙ্গে পরিচয় হওয়ার আগেই নাদিয়া চাকরি ছেড়ে বিয়ে করে হাউস ওয়াইফ হয়ে যান। এরপর ইরফান ও নাদিয়ার হঠাৎ দেখা হয় পথে। তখন রিকশা থামিয়ে পরিচয় ও ফোন নম্বর বিনিময় হয়। তারপর নিয়মিত লুকিয়ে ফোন করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলা, বাইরে ঘোরা, ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা। একদা বিষয়টি জেনে ও দেখে ফেলেন নাদিয়ার স্বামী। তিনি অনুসরণ করেন। অবস্থা যখন চরমে, তখন একদিন নাদিয়ার স্বামী তাঁকে চার্জ করে বসেন। এরপরই  দেখা যায় একটা ঘরে নাদিয়া, তাঁর স্বামী, ইরফান ও তাঁর বসের মেয়ে বসে আছেন। নাদিয়া জানান, আসছে মার্চে ইরফান ও তাঁর বসের মেয়ের বিয়ে। আর ইরফানের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কটি নেহাত বন্ধুত্বের, আর কিছু নয়। ব্যস, তারপর সব মিটমাট।

গল্পটি এককথায় অযৌক্তিক ও নিম্নমানের। সংলাপ ও অভিনয়ও ছিল নিম্নতর। এমন সব হাস্যকর ও বিরক্তিকর দৃশ্য সংযোজন করা হয়েছে, যা বর্ণনার অযোগ্য। যেমন শুরুতেই ইরফান অফিসের লোনের কাজে গেছে ব্যাংকে। সেখানে ঢুকেই তিনি একভাবে তাকিয়ে আছেন অন্য টেবিলে কর্মরত নাদিয়ার দিকে। যে কর্মকর্তার কাছে তাঁর কাজ, তাঁর সঙ্গে কথা বলছেন নাদিয়ার দিকে তাকিয়ে। এর কোনো কারণও দেখানো হয়নি। এমন হ্যাংলামো টিনএজদের পক্ষেও বেমানান, সেখানে ইরফান একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা।

অন্যদিকে পরিচয়ের পর ইরফান ও নাদিয়ার কথাবার্তা, মেলামেশা দেখানো হচ্ছে লুকিয়ে, পরকীয়ারীতিতে। অথচ শেষে বলে দিচ্ছে, তাঁরা বন্ধু এবং তাঁর স্বামীও সেটা মেনে নিচ্ছেন। এ কেমন বন্ধু, অফিসে দেখা, পথে পরিচয়, তারপর লুকিয়ে বন্ধুত্ব! কোনো বাঙালি নারীর পথেঘাটে এমন বন্ধুত্ব হয় নাকি?

শেষে বলব, গল্পটি ছিল অযৌক্তিক। লেখক সম্পর্কে আমরা তেমন জানি না, তবে নির্মাতা অঞ্জন আইচের হাতে এমন একটি নির্মাণ আমাদের কাছে মোটেই বিশ্বাসযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি।

২ মার্চ রাত ১০টায় একুশে টিভিতে প্রচারিত হলো সাপ্তাহিক নাটক এ কেমন কাছে আসা। রচনা, শারমিন চৌধুরী ও পরিচালনা করেছেন আদিত্য জনি। অভিনয় করেছেন রিয়াজ, নাদিয়া, অর্পা প্রমুখ।

নাটকের গল্প, অভিজাত রিয়াজের মাতৃহারা শিশুকন্যা জয়িতা হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে পথ থেকে নাদিয়াকে ধরে এনে মা ডাকতে ডাকতে ঘরে ঢোকেন। তারপর নাদিয়া প্রতিদিন জয়িতার টানে আসেন, আবার চলে যান। একদিন ঘটনাক্রমে নাদিয়া রিয়াজকে জানান, তিনি আসলে কলগার্ল। শুনে সঙ্গে সঙ্গে রিয়াজ তাঁকে অপমান করে বের করে দেন। এরপর জয়িতা নাদিয়ার শোকে খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে অসুস্থ হয়ে যান। তারপর রিয়াজ আবার নাদিয়ার সঙ্গে দেখা করে ক্ষমা চেয়ে তাঁকে ফিরিয়ে আনেন এবং বাড়িতেই ঠাঁই দেন। এরপর ধীরে ধীরে রিয়াজও নাদিয়ার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েন এবং তাঁকে স্ত্রী হিসেবেই বরণ করে নেন।

এককথায় বলব, গল্পের গোড়াতেই গলদ। যেমন শুরুতেই জয়িতা হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে পথ থেকে একজনকে মা বলে ধরে নিয়ে এলেন। এখন প্রশ্ন, এত প্রহরার মধ্যে তিনি কীভাবে নিখোঁজ হলেন, কোথায় নাদিয়াকে খুঁজে পেলেন, কেন মা বললেন, আর নাদিয়ারই বা জয়িতার প্রতি কেন কন্যাস্নেহ জাগল, এসবের কোনো ব্যাখ্যা নেই ঘটনায় বা সংলাপে।

আবার রিয়াজের কথা যদি বলি, দুদিন আগে যাঁকে কলগার্ল শুনে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিলেন, মেয়ের তাড়নায় তাঁকে না হয় ডেকে আনলেন, কিন্তু কোনো বিকল্প চেষ্টা না করে সেই কলগার্লকে আবার বিয়েও করে ফেললেন। যুক্তিহীন ঘটনার কোনো ভিত্তি থাকে না। আর ভিত্তিহীন ঘটনা নিয়ে নাটক হয় না। যে কারণে এমন স্পর্শকাতর একটি বিষয় এবং স্টার অভিনেতা নিয়ে নির্মিত নাটকও দর্শকমনে বিন্দুমাত্র রেখাপাত করতে পারেনি।