উৎসবে মেতেছে নীলফামারী

নীলফামারীতে গতকাল জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলন উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। তাঁর ডানে রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের সভাপতি সন্‌জীদা খাতুন ।  ছবি: প্রথম আলো
নীলফামারীতে গতকাল জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলন উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। তাঁর ডানে রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের সভাপতি সন্‌জীদা খাতুন । ছবি: প্রথম আলো
>
  • শুক্রবার সন্ধ্যায় সম্মেলনের সূচনা হয়।
  • প্রদীপ প্রজ্বালন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। 

রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলগীতি, আবৃত্তি ও নৃত্যানুষ্ঠান। উপচে পড়া ভিড়। সুরের মূর্ছনায় আন্দোলিত দর্শক-শ্রোতা। দর্শকসারিতে পিনপতন নিস্তব্ধতা। এ চিত্র নীলফামারী সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের আয়োজনে তিন দিনব্যাপী জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলনের উদ্বোধনী দিনের।

‘উড়িয়ে ধ্বজা অগ্রভেদী রথে, ওই যে তিনি ওই যে বাহির পথে’ বোধনসংগীতের মাধ্যমে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় সম্মেলনের সূচনা হয়। প্রদীপ প্রজ্বালন করে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের সভাপতি সন্জীদা খাতুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বুলবুল ইসলাম, শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন ৩৭ তম জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলনের সদস্যসচিব মুজিবুল হাসান চৌধুরী।

উদ্বোধনী বক্তৃতায় মন্ত্রী বলেন, ‘এত বড় উৎসব এর আগে নীলফামারীতে আর দ্বিতীয়টি হয়েছে বলে আমার মনে পড়ে না। আগামীতে আমরা আর কবে এত বড় উৎসব করতে পারব সেটিও জানি না। এই উৎসব করতে গিয়ে আমরা যে সত্যটির মুখোমুখি হয়েছি তা হলো বাংলাদেশে যতই বিরুদ্ধ স্রোত প্রবাহিত হোক না কেন, বাংলাদেশের মানুষ, নীলফামারীর মানুষ মনে-প্রাণে বাঙালি। আজকের এই বিশাল সমাবেশ সেটাই প্রমাণ করে।’

মন্ত্রী আরও বলেন, ‘এই রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলন কিন্তু একটি নিছক সম্মেলন নয়, এটি একটি চেতনার উৎসব। যে চেতনাকে আমরা ধারণ করছি হাজার বছর ধরে। বাঙালি হিসেবে সেই চেতনাটি হলো অসাম্প্রদায়িক চেতনা। আমাদের নিত্যদিনের কাজ দিয়ে, অভিজ্ঞতা দিয়ে, ভালোবাসা দিয়ে সেটিকে আমরা ধরে নিয়ে অগ্রসর হতে চাই।’

সভাপতির বক্তব্যে সন্‌জীদা খাতুন বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ আমাদের বলেছেন মানুষ হতে। কিন্তু আমরা তো মানুষ নেই। আমরা নিজেদের হারিয়ে ফেলেছি। বেশির ভাগ মানুষ এখন মনুষ্যত্ব হারিয়ে ফেলেছে।’ তিনি বলেন, ‘মানুষ হয়ে জন্মালেই কি মানুষ হওয়া যায়? মানুষ হতে হয় সাধনা করে। মানুষের যত গুণ, সেই গুণের দিকে দিনে দিনে এগিয়ে যেতে হয়। সংস্কৃতি আমাদের সেই পথ দেখায়।’

সন্‌জীদা খাতুনের বক্তব্য শেষে শুরু হয় সংগীতানুষ্ঠান, আবৃত্তি ও নৃত্যানুষ্ঠান। সংগীত পরিবেশন করেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাসহ ঢাকা ও নীলফামারীর শিল্পীরা।

জেলার ডোমার উপজেলার চিলাহাটি থেকে অনুষ্ঠানে আসা আক্তার হোসেন প্রামাণিক বলেন, ‘এর আগে আমরা জানতাম এত বড় অনুষ্ঠান ঢাকায় হয়ে থাকে। নীলফামারীতে এত বড় অনুষ্ঠান এবারই প্রথম দেখলাম। খুব ভালো লাগছে।’

তিনি বলেন, ‘এসব অনুষ্ঠান প্রতিটি জেলায় হওয়া উচিত। তাহলে আমরা অবক্ষয় থেকে মুক্তি পাব।’

সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক নীলফামারী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ দেবীপ্রসাদ রায় জানালেন, তিন দিনব্যাপী জাতীয় এই সম্মেলনে দেশের ৮৪টি রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের আট শতাধিক প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করছেন। আট হাজার মানুষ ধারণক্ষমতার প্যান্ডেল করা হয়েছে। নীলফামারীতে প্রথমবারের মতো জাতীয় এই সম্মেলনে রবীন্দ্রসংগীত ছাড়াও গুণীজন সম্মাননা, সেমিনার, নজরুলসংগীত, নৃত্য, নাটক ও সৃজনশীল বাংলা গান, এ অঞ্চলের ভাওয়াইয়া গান পরিবেশিত হচ্ছে। সবার সহযোগিতায় অনুষ্ঠান প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে।

গতকাল এ প্রতিবেদন লেখার সময় প্যান্ডেল উপচে পড়ছিল শ্রোতা-দর্শকে। সংস্কৃতি অনুরাগী মানুষের এত বড় মিলনমেলা স্মরণাতীতকালে নীলফামারীতে দৃশ্যমান হয়নি।

সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে জেলার দর্শনীয় স্থান নীলসাগরে অনুষ্ঠিত হবে প্রীতিসম্মেলন, এরপর বিকেল চারটায় মূল সম্মেলনস্থলে ‘মানবিক সমাজ গঠনে’ সেমিনার। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান। আলোচনা করবেন সহিদুল ইসলাম, দেবীপ্রসাদ রায়। সন্ধ্যায় হবে গান, নাচ, আবৃত্তি।

শেষ দিন রোববারের কর্মসূচিতে থাকবে সকাল নয়টায় নীলফামারী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন, বেলা সাড়ে ১১টায় প্রতিনিধি সম্মেলন, বিকেল চারটায় রবীন্দ্র পদক ঘোষণা ও গুণীজন সম্মাননা, শোক প্রস্তাব, সম্মেলনের প্রস্তাব পাঠ এবং সম্মেলনের ঘোষণা পাঠ। সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হবে প্রদীপ প্রজ্বালন, রবিরশ্মি, সংগীতানুষ্ঠান, আবৃত্তি ও নৃত্যানুষ্ঠান।

এ উৎসবে সহযোগিতা করছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়, বেঙ্গল গ্রুপ ও ব্র্যাক ব্যাংক।