নতুন নীতিমালা মেনেই জাজ মাল্টিমিডিয়ার দুই ছবি

যৌথ প্রযোজনার ছবির সম্ভাব্য অভিনয়শিল্পীরা হলেন জিৎ ও মিম, পূজা ও আদ্রিত
যৌথ প্রযোজনার ছবির সম্ভাব্য অভিনয়শিল্পীরা হলেন জিৎ ও মিম, পূজা ও আদ্রিত

জাজ মাল্টিমিডিয়ার ব্যানারে নির্মিত যৌথ প্রযোজনার ছবি নিয়ে কয়েক মাস আগে উত্তপ্ত ছিল বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের অঙ্গন। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিবারের এই আন্দোলনে শেষ পর্যন্ত সরকার নতুন নীতিমালা তৈরি করে। নতুন এই নীতিমালা চলচ্চিত্র বান্ধব নয় বলে মন্তব্য করে জাজ মাল্টিমিডিয়াসহ চলচ্চিত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন। তাদের মতে, নতুন নীতিমালার কারণে চলচ্চিত্র ধ্বংস হয়ে যাবে। দৃশ্যপট বদলে গেছে। যৌথ প্রযোজনার নতুন নীতিমালা মেনেই ছবি বানাতে যাচ্ছে জাজ মাল্টিমিডিয়া।

যৌথ প্রযোজনার নতুন নীতিমালায় জমা পড়েছে তিনটি ছবির চিত্রনাট্য। ছবি তিনটি হচ্ছে ‘বালিঘর’, ‘প্রেম আমার ২ ’, ‘সুলতান দ্য সেভিয়ার’। প্রথম ছবির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের বেঙ্গল ক্রিয়েশন ও ভারতের নাথিং বিয়ন্ড সিনেমা ক্রিয়েশন প্রা. লি. , পরের দুটি ছবির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান যথাক্রমে গ্রিন লাইট প্রোডাকশন (বাংলাদেশ) ও রাজ চক্রবর্তী প্রোডাকশন (ভারত) এবং জাজ মাল্টিমিডিয়া (বাংলাদেশ) ও জিৎ ফিল্ম ওয়ার্কস প্রা. লি. (ভারত)। প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যৌথ প্রযোজনা প্রিভিউ কমিটির সভাপতি ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমির হোসেন।

জানা গেছে, ‘বালিঘর’ ছবিটি জমা পড়ে গত ২৯ জানুয়ারি, ১২ মার্চ ‘প্রেম আমার ২’ আর ১৫ মার্চ ‘সুলতান দ্য সেভিয়ার’। ২২ মার্চ বাছাই কমিটির সভা হবে, সেদিন ‘বালিঘর’ আর ‘প্রেম আমার ২’ ছবি দুটির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে।

আমির হোসেন বলেন, যৌথ প্রযোজনার নতুন যে নিয়ম, সে অনুযায়ী ‘বালিঘর’ ছবির সব কাগজপত্র ঠিক আছে। বাকি দুটি ছবির চেকলিস্ট মিলিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

আবদুল আজিজ
আবদুল আজিজ

গ্রিন লাইট প্রোডাকশন এবারই প্রথম ছবি নির্মাণ করতে যাচ্ছে। এটি আলোচিত প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়ারই নতুন অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান আবদুল আজিজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই ছবি দিয়ে আমাদের নতুন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হচ্ছে। এই প্রতিষ্ঠান থেকেও এখন আমরা ছবি বানাব।’

‘প্রেম আমার ২’ ছবি পরিচালনা করবেন বিদুলা ভট্টাচার্য। তবে সার্বিক তত্ত্বাবধানে থাকবেন রাজ চক্রবর্তী। এতে অভিনয় করবেন পূজা, আদ্রিত, চম্পা, নাদের চৌধুরী, মুনসহ বাংলাদেশ আর ভারতের অনেকে। ‘সুলতান দ্য সেভিয়ার’ ছবির পরিচালক রাজা চন্দ। ছবির অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে আছেন জিৎ, মিম, আমান, তাসকিন প্রমুখ। অরিন্দম শীল পরিচালিত ‘বালিঘর’ ছবির অভিনয়শিল্পীরা হলেন বাংলাদেশের আরিফিন শুভ, তিশা, নওশাবা এবং ভারতের আবির চট্টোপাধ্যায়, পার্ণো মিত্র, রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায়, অনির্বাণ ভট্টাচার্য প্রমুখ।

যৌথ প্রযোজনায় চলচ্চিত্র নির্মাণের নতুন নীতিমালা প্রকাশ পেয়েছে গত বছর ১২ ডিসেম্বর। এর ঠিক মাসখানেক পর জানুয়ারির শেষ দিকে নতুন নীতিমালার অধীনে নতুন প্রিভিউ কমিটি গঠিত হয়। নতুন প্রিভিউ কমিটি কার্যকর হওয়ার পর আগের নীতিমালায় নির্মাণ করা ‘নূর জাহান’ ও ‘স্বপ্নজাল’ ছবি দুটি প্রাথমিক অনুমোদন পায়।

গত কয়েক বছরে ‘শিকারি’, ‘নবাব’, ‘বাদশা’, ‘বস ২ ’, ‘রোমিও ভার্সেস জুলিয়েট’সহ একাধিক ছবি যৌথভাবে প্রযোজনা করেছে বাংলাদেশের জাজ মাল্টিমিডিয়া ও ভারতের কলকাতার কয়েকটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। নতুন নীতিমালার বিষয়ে ২ মার্চ প্রথম আলোকে জাজ মাল্টিমিডিয়ার চেয়ারম্যান আবদুল আজিজ বলেছিলেন, ‘নতুন যে নীতিমালা করা হয়েছে, তাতে সহজে কোনো প্রযোজক যৌথ প্রযোজনায় ছবি নির্মাণ করতে আসবেন না। আমি নিজেও এই নীতিমালায় ছবি নির্মাণ করতে পারব না। যদি কখনো নীতিমালা শিথিল করা হয়, তাহলে আবার যৌথ প্রযোজনার ছবি বানাতে পারি।’

এ ব্যাপারে আজ বুধবার আবদুল আজিজ বলেন, ‘যৌথ প্রযোজনার নতুন যে নীতিমালা তৈরি হয়েছে, তা মেনেই আমরা ছবি দুটি বানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এরই মধ্যে ছবি দুটির চিত্রনাট্য ও আনুষঙ্গিক কাগজ বিএফডিসিতে জমা দিয়েছি। এই নীতিমালায় ছবি নির্মাণ আসলেই কঠিন। আশা করব, নীতিমালা কিছু শিথিল হবে।’

যদি নীতিমালা শিথিল করা না হয়, তাহলে? এমন প্রশ্নে এই আবদুল আজিজ বলেন, ‘কী আর করার।’

চিত্রনায়ক ফারুক
চিত্রনায়ক ফারুক

পুরো বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিবারের আহ্বায়ক ও বরেণ্য চিত্রনায়ক ফারুক বলেন, ‘এটা নিয়ে বাহাদুরি করার কিছু নেই। আমরা সবাই তো এই শিল্পের লোক। যাঁরা এই নীতিমালা দিয়েছেন, তাঁরা আমাদের শত্রু নয়। নতুন এই নীতিমালা যে তারা মেনেছে, এ জন্য তাদের সাধুবাদ জানাই। কারণ, এটা শুধু আমার একার না, পুরো দেশ ও জাতির ব্যাপার। আমি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধন্যবাদ দিতে চাই, তারা সঠিক এবং সত্য জিনিসকে মেনে ছবি নির্মাণের জন্য জমা দিয়েছেন। একই সঙ্গে বলতে চাই, চলচ্চিত্র থেকে যে আন্দোলন হয়েছিল, এ আন্দোলন এমনি এমনি হয়নি, সত্য আর সুন্দরের জন্য হয়েছে এবং এটা থাকবে চিরকাল।’

যৌথ প্রযোজনার নতুন নীতিমালা নিয়ে প্রিভিউ কমিটির সদস্য, চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ও চিত্র প্রযোজক ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, ‘নতুন নীতিমালার কারণে আমাদের চলচ্চিত্র ধ্বংস হয়ে যাবে। কারণ, এই নীতিমালা মেনে চলা এতটাই কঠিন যে কলকাতা ও বাংলাদেশের কোনো প্রযোজক ছবি নির্মাণে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এই নীতিমালা সংশোধন করে শিথিল করা না হলে নতুন বড় বাজেটের কোনো ছবি আসার সম্ভাবনা কম। ছবির অভাবে হল বন্ধ হয়ে যাবে।’

ফারুক বলেন, ‘যেখানে ওনারই বলছেন, ছবি চলে না, সেখানে বড় বাজেট আসবে কেন? কম বাজেটে ছবি বানাতে হবে। সে যা বলেছে, তা মোটেও ঠিক নয়। ভিনদেশের বহু ছবি আমাদের দেশে এসেছে, কিন্তু এই চলচ্চিত্রশিল্পের উন্নয়ন হয়েছে আমাদের ছবি দিয়েই। শত শত প্রেক্ষাগৃহ আমাদের ছবি দিয়ে, যৌথ প্রযোজনা বা ভারতীয় ছবি দিয়ে নয়।’

আমির হোসেন
আমির হোসেন

নতুন নীতিমালার ব্যাপারে আমির হোসেন বলেন, ‘আস্তে আস্তে সবাই বুঝতে শুরু করেছেন। চিত্রনাট্যও জমা পড়ছে। তবে যৌথ প্রযোজনার নতুন নীতিমালায় কঠিন সব শর্তের কারণে এ পদ্ধতিতে ছবি নির্মাণে বাংলাদেশ ও কলকাতার প্রযোজকেরা আগ্রহ হারাচ্ছেন, তা মানতে পারছি না। এই নীতিমালা তো চলচ্চিত্রের সব শ্রেণির মানুষের দাবিতে সরকার তৈরি করেছে।’

চিত্রনায়ক ফেরদৌস
চিত্রনায়ক ফেরদৌস



যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত অনেক ছবিতে অভিনয় করেছেন চিত্রনায়ক ফেরদৌস। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়, উদ্যোগ শুভ হলে কিছুই আটকে থাকে না। আজ নীতিমালার মাধ্যমে যৌথ প্রযোজনার ছবি হয়তো হচ্ছে না, কিন্তু সাফটা চুক্তির মাধ্যমে এ দেশে ঠিকই ছবি মুক্তি পাচ্ছে। বাংলাদেশে তো সব ছবি যৌথ প্রযোজনার হতো না। বছরে যৌথ প্রযোজনার ছবি হতো ৪-৫ টা। যৌথ প্রযোজনার নীতিমালা কঠিন হওয়ায় চলচ্চিত্র ধ্বংস হয়ে যাবে, এটা মানতে রাজি নই।’