মঞ্চে ভাসবে হাসনের নাও

চলছে হাসনজানের রাজা নাটকের মহড়া। ছবি: প্রথম আলো
চলছে হাসনজানের রাজা নাটকের মহড়া। ছবি: প্রথম আলো

‘ছাড়িলাম হাসনের নাও রে’ গাওয়ার পর ‘আহা রে সোনালি বন্ধু’, তারপর ‘আগুন লাগাইয়া দিল কনে’ গাইলেন সেলিম চৌধুরী। নিজেই বাজাচ্ছিলেন হারমোনিয়াম। হাসন রাজার গান গেয়ে বাংলার মানুষের প্রিয় হয়ে উঠেছেন তিনি। মঞ্চনাটক নিয়ে এক বৈঠকে সেই গানগুলোই গেয়ে শোনাচ্ছিলেন তিনি। তাঁকে ঘিরে বসে ছিলেন নাটকের মানুষেরা। নুনা আফরোজ, অনন্ত হীরা, রামিজ রাজু এবং ভ্রমণলেখক স্থপতি শাকুর মজিদ।

বৈঠক একটি নাটক নিয়ে। নাম হাসনজানের রাজা। ঢাকার মঞ্চে আগামী মাসেই উঠছে নাটকটি। নাট্যকার শাকুর মজিদ আর অনন্ত হীরা নির্দেশক। ভ্রমণলেখক হলেও নাট্যকার হিসেবে ইতিমধ্যে গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়েছে শাকুর মজিদের। ২০১০ সালে তাঁর লেখা মহাজনের নাও ঢাকার মঞ্চে বেশ সাড়া ফেলেছিল। কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভাটি অঞ্চলের তিন কালজয়ী শিল্পী রাধারমণ দত্ত, হাসন রাজা ও শাহ আবদুল করিম। তিনজনের তিন রকমের জীবন। হাসন রাজা ছিলেন সামন্ত প্রভু। আর নিরক্ষর প্রান্তিক দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি শাহ আবদুল করিম। অন্যদিকে রাধারমণ দত্ত সনাতন ধর্মের মধ্যবিত্তদের প্রতিনিধি। ভিন্ন আর্থসামাজিক অবস্থান থেকে আসা এই তিন শিল্পীকে নিয়ে তাঁর প্রবল কৌতূহল। তিনজনকে নিয়ে ট্রিলজির অংশ হাসনজানের রাজা। সেই নাটকে অনেক গান থাকবে। তার মধ্যে ‘সুন্দরী রাধে গো তোর কানাইয়া যাইব ছাড়ি’, ‘নিশা লাগিল রে’, ‘আহা রে সোনালি বন্ধু’ আরও বেশ কিছু গান।

সিলেট অঞ্চলের গানগুলোর গায়কি, বাণীর উচ্চারণ যাতে নাট্যকর্মীরা ঠিকঠাক করতে পারেন, সে জন্য সেলিম চৌধুরীকে যুক্ত করা হয়েছে। তিনি পালন করছেন নাটকের সংগীত পরামর্শকের দায়িত্ব। সংগীত পরিচালনা করছেন রামিজ রাজু।

গানগুলো শোনার পর নাটকের প্রতি আগ্রহ বাড়ে। অনন্ত হীরা জানালেন, চূড়ান্ত মহড়া চলছে। প্রতিদিন সাত-আট ঘণ্টা করে মহড়া করছেন তাঁরা। আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেন, ‘চলে আসেন একদিন।’

আমন্ত্রণ রক্ষা করতে গত শনিবার সন্ধ্যায় গিয়ে হাজির হই মগবাজারের গাবতলায়। মহড়ার ঘরটি বেশ ছিমছাম। ঘরের দেয়ালে প্রাঙ্গণেমোরের পুরোনো নাটকের পোস্টার, আছে রবীন্দ্রনাথের বড় একটি ছবিও। এখানে-সেখানে বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র, নাটকের প্রপস। প্রাঙ্গণেমোরের ১৩ তম নাটক হাসনজানের রাজা। এ বছরের জানুয়ারির প্রথম দিন এর মহড়া শুরু হয়েছিল। ফাঁকে ফাঁকে পুরোনো নাটকগুলোর প্রদর্শনী করতে থাকে দলটি। অন্য দিনগুলোতে নতুন নাটকটির মহড়া। মহড়ায় হাজির হয়ে বোঝা গেল, গতানুগতিক ধারায় হাসন রাজার জীবনী তুলে ধরা হচ্ছে না নাটকে। বরং একটি গল্পের ভেতরে অনেক গল্প রয়েছে। যেখানে হাসন রাজা এসেছেন এই প্রজন্মের তারুণ্যের আড্ডায়, ফেসবুকে। বলা চলে এই সময়ের আয়নায় ১০০ বছর আগের হাসন রাজাকে আবিষ্কার করেছেন নাট্যকার।

নাট্যপ্রেমীদের জন্য তথ্য হচ্ছে, আসছে ২০ এপ্রিল জাতীয় নাট্যশালায় উদ্বোধনী প্রদর্শনী হবে নাটকটি। এর আগে ১৮ ও ১৯ তারিখ কারিগরি প্রদর্শনী চলবে। নাটকটির সেট ডিজাইন করছেন ফয়েজ জহির। পোশাক পরিকল্পনা নুনা আফরোজের। কোরিওগ্রাফি করছেন ইভান সোহাগ।

এই গীতিকাব্য নাটকটিকে দর্শকের সামনে উপস্থাপনের জন্য কাজ করবেন প্রাঙ্গণেমোরের ১৫ জন শিল্পী।