'চুক্তিপত্র' ছাড়াই নির্মিত হচ্ছে নাটক

তিন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব নাসিম, ইরেশ যাকের ও এস এ হক অলিক গত বছরের মাঝামাঝিতে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেন
তিন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব নাসিম, ইরেশ যাকের ও এস এ হক অলিক গত বছরের মাঝামাঝিতে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেন

চলচ্চিত্র নির্মাণের বেলায় পাত্র-পাত্রীর সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করার নিয়ম রয়েছে। নাটক নির্মাণে চুক্তি স্বাক্ষরের ব্যাপারটি ছিল না আগে, তবে গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে টেলিভিশন নাটকের সঙ্গে যুক্ত তিনটি সংগঠন মিলে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। যার ফলে নাটক নির্মাণের বেলায়ও একটি চুক্তি স্বাক্ষরের নিয়ম চালু করা হয়। প্রক্রিয়াটি সহজ করতে একটি নির্দিষ্ট ফরমও দেওয়া হয়। কিন্তু কাগজে-কলমে নিয়ম থাকলেও তা মানছেন না বেশির ভাগ পরিচালক, প্রযোজক ও অভিনয়শিল্পী। এমনটা জানালেন টেলিভিশন অভিনয়শিল্পীদের সংগঠন অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি শহীদুল আলম সাচ্চু।

গত বছরের জুলাইয়ে টেলিভিশন প্রোগ্রাম প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, ডিরেক্টরস গিল্ড এবং অভিনয়শিল্পী সংঘ একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। চুক্তিতে ৪২টি ধারা রয়েছে। প্রধান কয়েকটি বিষয়ের মধ্যে রয়েছে অভিনয়শিল্পীদের শুটিংয়ের সময় নির্ধারণ করা, তিন সংগঠনের বাইরের কারও কাজ করার সুযোগ না থাকা এবং কাজের আগে উভয়ের মধ্যে লিখিত চুক্তি হওয়া। ওই সময় অভিনয়শিল্পী সংঘের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব নাসিম জানান, প্রাথমিক কিছু কাজ শেষে সেপ্টেম্বর ২০১৭ থেকে এই সমঝোতা স্মারক কার্যকর হবে।

কিন্তু আদতে তা হয়নি। এ ব্যাপারে শহীদুল আলম সাচ্চু বলেন, ‘চুক্তিপত্র তৈরির কারণ একটাই, তিন পক্ষের যে কেউ সমস্যায় পড়লে যেন নিয়মতান্ত্রিক ও সঠিকভাবে সমাধান করা যায়। চুক্তি স্বাক্ষরের নিয়ম আগে থেকে ছিল, কিন্তু আমরা এটা বর্তমান সময় উপযোগী করে তৈরি করেছি এবং তিন পক্ষের সবাইকে এটা মানার জন্য অনুরোধ করেছি।’

চুক্তি না মানার প্রবণতাকে নিরুৎসাহিত করতে বেশ কিছু কাজ করেছেন তাঁরা। এর মধ্যে একটি হলো, সবাইকে মিটিংয়ের মাধ্যমে জানানো। বিভিন্ন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে চুক্তি ফরম দিয়ে আসাসহ শুটিংবাড়িতে গিয়েও সচেতনতা তৈরির কার্যক্রম চালিয়েছেন সংগঠনের নেতারা। কিন্তু খুব বেশি কাজ হয়েছে এমনটা নয়।

বিষয়টি নিয়ে টেলিভিশন প্রোগ্রাম প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক অভিনেতা ইরেশ যাকের বলেন, ‘এটা আসলে এক দিনে করা সম্ভব নয়। ধীরে ধীরে পরিবর্তন হবে। আমি মনে করি, আমাদের ইন্ডাস্ট্রির প্রয়োজনেই সবাই এটি মানবেন। আমরা সবাই চাইছি এটি যেন তাড়াতাড়ি কার্যকর করা যায়। আমার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে যতগুলো নাটক নির্মাণ করা হয়েছে, সবগুলোই চুক্তি স্বাক্ষর করে নির্মাণ করা হয়েছে।’

চুক্তিপত্র নিয়ে কথা হয় নির্মাতা সুমন আনোয়ারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমাদের ইন্ডাস্ট্রি এখনো মৌখিক চুক্তির ওপর নির্ভর করছে। কিন্তু আমি মনে করি এই চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করে কাজ করা উচিত। আমি নিজে করিনি। কিন্তু সামনের কাজগুলোতে করব বলে আশা করছি।’

এদিকে কদিন আগে নির্মাতা বি ইউ শুভ অভিনেত্রী নাদিয়া মীমের বিরুদ্ধে শুটিং ফাঁসানোর অভিযোগ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ট্যাটাস দেন। কিন্তু শুভ ডিরেক্টরস গিল্ডের সদস্য না হওয়ায় এবং চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করে নির্মাণ শুরু না করায় বিষয়টি আর বেশি দূর গড়ায়নি। শুভ বলেন, ‘আমি মামলা করার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম, কিন্তু সিনিয়র অনেকে মানা করেছেন। তাই আর বেশি দূর এগোয়নি।’