'আসুন, মানুষের জন্য কাজ করি'

সংস্কৃতিসাধক সন্‌জীদা খাতুনের ৮৫তম জন্মবর্ষপূর্তিতে তাঁকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান (বাঁ থেকে) রফিকুল ইসলাম, আনিসুজ্জামান, শামসুজ্জামান খান ও আসাদুজ্জামান নূর। গতকাল বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে।  ছবি: প্রথম আলো
সংস্কৃতিসাধক সন্‌জীদা খাতুনের ৮৫তম জন্মবর্ষপূর্তিতে তাঁকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান (বাঁ থেকে) রফিকুল ইসলাম, আনিসুজ্জামান, শামসুজ্জামান খান ও আসাদুজ্জামান নূর। গতকাল বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে। ছবি: প্রথম আলো

‘সবাই আসুন, আমরা মানুষের জন্য কাজ করি’-এই আহ্বান জানালেন সংস্কৃতিসাধক সন্‌জীদা খাতুন, তাঁকে দেওয়া নাগরিক সংবর্ধনায়। আজ বুধবার জীবনের ৮৫ বছর পূর্ণ করলেন তিনি। সে উপলক্ষেই বাংলা একাডেমি গতকাল বিকেলে তাঁকে দিয়েছে নাগরিক সংবর্ধনা।

একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে এই আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। শংসাপত্রও পাঠ করেন তিনি, তাতে বলেছেন, ‘আপনি সন্‌জীদা খাতুন জাতির সৃজনশক্তির মেধাবী প্রতিভূ, বাঙালি সংস্কৃতি ভুবনের অনন্যা ব্যক্তিত্ব, কতভাবেই-না ঋদ্ধ করে চলেছেন বাঙালির জীবনসাধনা। আপনার কর্মময় জীবন জাতির সামনে অনন্য উদাহরণ মেলে ধরেছে।’

দেশের সংস্কৃতি আন্দোলনের অগ্রগণ্য ব্যক্তিত্ব সন্জীদা খাতুনকে নিয়ে এই আয়োজন নবীন-প্রবীণ সংস্কৃতিসেবীদের আনন্দঘন মিলনমেলা হয়ে উঠেছিল। শুরুতেই বিভিন্ন সংগঠন এবং তাঁর অনেক গুণমুগ্ধ ব্যক্তিগতভাবে পুষ্পস্তবক দিয়ে তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান। ফুলে ফুলে মঞ্চ ভরে ওঠে। তাঁকে উত্তরীয় পরিয়ে এবং হাতে উপহার তুলে দেওয়া হয়। শুরুতেই শিল্পী পাপিয়া সারওয়ার গেয়ে শোনান ‘দাও হে হৃদয় ভরে দাও’ গানটি।

সন্‌জীদা খাতুন প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘জীবন আমার কাছে একটা যুদ্ধ।’ একটা বছর বাঁচার অর্থ তাঁর কাছে আরেকটি যুদ্ধের সামনে পড়া। সেই যুদ্ধ কল্যাণের জন্য, মানবিকতার জন্য। তাতে সবাইকে নিয়েই তিনি অংশ নিতে চেয়েছেন। একটি গানও গেয়ে শুনিয়েছেন তিনি ‘না বাঁচাবে আমায় যদি...।’

আলোচনা পর্বে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, তিনি সারা দেশ ঘুরে শুধু শুদ্ধ সংগীতই শেখাচ্ছেন না, তিনি আসলে শুদ্ধ মানুষ তৈরি করছেন। মননশীলতা, মানবিকতা, মুক্তচিন্তার প্রসারের জন্য তিনি কাজ করে চলেছেন। সাম্প্রদায়িকতা ও উগ্রপন্থাকে প্রতিহত করতে এই কাজটিই সবচেয়ে জরুরি। সারা জীবন ধরে গভীর নিষ্ঠায় তিনি এই কাজ করে চলেছেন।

ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম সন্‌জীদা খাতুনের সঙ্গে দীর্ঘকাল কাজ করার স্মৃতিচারণা করে বলেছেন, তাঁর জীবনটিই সাংস্কৃতিক সংগ্রামের জীবন। পাকিস্তানি শাসকদের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে রবীন্দ্রজন্মশত বার্ষিকী পালন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের সময় শিল্পীদের গান শেখানো, ছায়ানটের মধ্য দিয়ে বাঙালি সংস্কৃতির চর্চা ও জাতীয়তাবাদী চেতনার প্রসারে তাঁর যে ভূমিকা তা কোনো দিন ভুলবার নয়।

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বলেছেন, ছায়ানটের পয়লা বৈশাখের প্রভাতি অনুষ্ঠানের ভেতর দিয়ে নববর্ষের গ্রামীণ অনুষ্ঠানটিকে তিনি শহরে তুলে এনেছেন। আজ নববর্ষের এই অনুষ্ঠান যে জাতীয় অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে তার নেপথ্যে ছায়ানট এবং সন্‌জীদা খাতুন অত্যন্ত বড় ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি এই বয়সেও সামগ্রিকভাবে বাঙালি সংস্কৃতি জাগরণে অগ্রগণ্য ভূমিকা রেখে চলেছেন।

অনুষ্ঠানে বক্তারা তাঁর সংগীতচর্চার পাশাপাশি অধ্যাপনা, সাহিত্য বিষয়ে তাঁর গবেষণা, সারা দেশে রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলনের মধ্য দিয়ে শুদ্ধ সংস্কৃতির চর্চা এবং জাতির সংকটময় মুহূর্তে রাজপথে নেমে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার দিকগুলো তুলে ধরেন।

আলোচনায় অংশ নিয়েছেন সৈয়দ হাসান ইমাম, রামেন্দু মজুমদার, বেগম আক্তার কামাল, মফিদুল হক ও গোলাম কুদ্দুস এবং পরিবারের পক্ষ থেকে সন্‌জীদা খাতুনের নাতনি সায়েন্তনী ত্বিষা। শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা আলোচনা করেছেন, ‘তুমি কেমন করে গান কর হে গুণী’ গানটিরও খানিকটা শুনিয়েছেন। আরও গান করেছেন লাইসা আহমদ লিসা ও অদিতি মহসিন। আবৃত্তি করেছেন ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়।