শুটিংয়ে নির্মাতার গায়ে হাত তোলায় অভিনেতা নিষিদ্ধ

অ্যালেন শুভ্র
অ্যালেন শুভ্র

নির্মাতার অভিযোগে নিষিদ্ধ হলেন এ প্রজন্মের অভিনেতা অ্যালেন শুভ্র। নাটকের শুটিংকে কেন্দ্র করে নির্মাতা নিয়াজ মাহবুবের গায়ে হাত তোলায় নাটকের বিভিন্ন সংগঠন মিলে তিন মাস সব ধরনের শুটিং থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেন তাঁকে। শনিবার বিকেলে প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপে এমনটাই জানালেন ডিরেক্টর গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক এস এ হক অলিক।

অভিযোগকারী পরিচালক নিয়াজ মাহবুব বলেন, মাস ছয়েক আগে তাঁর নাটক ‘গুরাগুরি’র (বরিশালের আঞ্চলিক শব্দ) শুটিংয়ে বরিশালে গিয়েছিলেন অ্যালেন শুভ্র। সেখানে তিন দিন কাজ করার কথা থাকলেও তিনি দুই দিনে কাজ শেষ করতে বলেন। পরিচালক রাজি না হলে অ্যালেন ওই অবস্থায় ঢাকায় চলে আসেন। এর সপ্তাহখানেক পর অনেক কথাবার্তায় কাজটি করে দিয়ে নতুন করে পারিশ্রমিক দাবি করেন। এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে নির্মাতা বলেন, বরিশালে শুটিং শেষ করতে না পারায় তাঁর অনেক লস হয়ে গেছে। কারণ হিসেবে তাঁর বক্তব্য, ওখানকার সব শিল্পীকে ঢাকায় আনতে হয়েছে। এরপরও যদি সম্ভব হয় তাহলে অভিনেতাকে টাকা দেবেন। এর মধ্যে অ্যালেন নাকি ফোন করে নির্মাতাকে গালিগালাজ করেন। মাস দুয়েক আগে ঢাকার মগবাজার এলাকায় দেখা হলে নির্মাতাকে ইট দিয়ে আঘাত করেন অভিনেতা।

এই ধরনের ঘটনার পরপরই নিয়াজ মাহবুব অভিযোগ করেন নাটকের সংগঠনগুলোর কাছে। ৪ এপ্রিল টেলিভিশন নাটকের তিন সংগঠন ডিরেক্টরস গিল্ড, অভিনয়শিল্পী সংঘ ও টেলিভিশন প্রোগ্রাম প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ নিয়াজ মাহবুব ও অ্যালেন শুভ্রকে হাজির করে। দুজনের কথাবার্তা শোনার পর অ্যালেন তাঁর কৃতকর্মের কথা উপস্থিত সবার সামনে স্বীকার করেন। এরপর তিন সংগঠন মিলে অ্যালেন শুভ্রকে আগামী ১০ মে থেকে তিন মাসের জন্য সব ধরনের শুটিংয়ের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। এমনটাই জানিয়েছেন এস এ হক অলিক।

‘বিকেল বেলার পাখি’ নাটকে সহশিল্পীদের সঙ্গে অ্যালেন শুভ্র
‘বিকেল বেলার পাখি’ নাটকে সহশিল্পীদের সঙ্গে অ্যালেন শুভ্র

এস এ হক অলিক বলেন, ‘নাট্যাঙ্গনে আমরা মাঝেমধ্যে অনিয়মের কথা শুনি। সবগুলো সংগঠন মিলে আমরা ভেবেছি, এভাবে তো চলতে পারে না। নাট্যাঙ্গনে সুন্দর পরিবেশ তৈরির জন্য এই সেক্টরে শৃঙ্খলা আনতে হলে কিছু নিয়মের ব্যাপারে আমাদের কঠোর হওয়া উচিত। অ্যালেন যে ধরনের অপরাধ করেছে, তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত বলে আমরা সবাই মনে করেছি। এতে ভবিষ্যতে কেউ আর এমন অপরাধ করার সাহস দেখাবে না।’

অলিক এ-ও বলেন, ‘নির্মাতার সঙ্গে অভিনেতার ভুল-বোঝাবুঝি হতেই পারে, তাই বলে গায়ে হাত তোলা কোনোভাবেই উচিত না। ঘটনাটা আমাদের জানানোর পর তিন সংগঠন ৪ এপ্রিল উভয়পক্ষকে নিয়ে বসেছিলাম আলোচনায়। অ্যালেন শুভ্র নিজেও তার দোষ স্বীকার করেছে। আমরা মনে করি, তার এই শাস্তি থেকে অন্যরাও শিক্ষা নেবে। আর সে নিজেও নিজেকে শুধরে নেবে।’

নির্মাতা ও অভিনেতার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ডাকা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অভিনয়শিল্পী সংঘের আহসান হাবিব নাসিম ও লুৎফর রহমান জর্জ, ডিরেক্টরস গিল্ডের এস এ হক অলিক, সৈয়দ শাকিল ও কামরুজ্জামান সাগর এবং প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে সৈয়দ ইরফান উল্লাহ।

প্রসঙ্গত, অ্যালেন শুভ্র গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে ‘বিকেল বেলার পাখি’ নামের একটি নাটকে অভিনয়ের জন্য বেশ প্রশংসিত হন। নাটকটির পরিচালক আদনান আল রাজীব।

ঘটনার বিষয়ে জানতে অ্যালেন শুভ্রকে বারবার ফোন করে এবং এসএমএস পাঠিয়ে কথা বলা সম্ভব হয়নি।