'অন্য কেউ ওটা ববিতা বলে চালিয়ে যাচ্ছে'
বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের খ্যাতনামা অভিনেত্রী ববিতা। অস্কারজয়ী নির্মাতা সত্যজিৎ রায়ের ‘অশনি সংকেত’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র অঙ্গনে প্রশংসিত হন। দীর্ঘ অভিনয়জীবনে আড়াই শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। ১৯৭৬ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রবর্তনের পর টানা তিনবার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার জিতেছেন। প্রযোজক হিসেবেও পুরস্কার পেয়েছেন। জহির রায়হান পরিচালিত ‘সংসার’ ছবিতে প্রথম রাজ্জাক-সুচন্দার মেয়ের ভূমিকায় অভিনয় করেন তিনি। ১৯৬৯ সালে একই পরিচালকের ‘শেষ পর্যন্ত’ ছবিতে নায়িকা হিসেবে প্রথম অভিনয় করেন। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৬’ আয়োজনে বরেণ্য এই অভিনেত্রীকে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হবে। যুগ্মভাবে আজীবন সম্মাননা পাচ্ছেন চিত্রনায়ক ফারুক। আজীবন সম্মাননা পাওয়া আর চলচ্চিত্র নিয়ে আজ রোববার দুপুরে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
আপনাকে অভিনন্দন।
ধন্যবাদ।
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের এবার আপনাকে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হবে। কেমন লাগছে?
জাতীয় পুরস্কারের আবেদন অন্য রকম। সারা জীবনের কর্মের স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে, এটা তো সাংঘাতিক সুখের। এ আবেগ প্রকাশ করার মতো না। এখন মনে হচ্ছে, এই চলচ্চিত্রের জন্য, আমার দেশের জন্য আমি কিছু করতে পেরেছি।
চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছেন। অর্জন করেছেন অনেক সম্মাননা। এই সেক্টরে কাজ করে কতটা গর্বিত আপনি?
আমি যে ববিতা হয়েছি, তা শুধু চলচ্চিত্রে অভিনয় করে। অবশ্যই আমি গর্ববোধ করি। যে বয়সে চলচ্চিত্রে এসেছি, তখন থেকে আমার ইচ্ছে ছিল, দেশ-বিদেশের বড় বড় উৎসবে অংশ নেব। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে বিদেশি উৎসবগুলোয় পশ্চিম পাকিস্তানের শিল্পী-কলাকুশলীরা অংশ নিতেন। আমাদের এখানে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের বঞ্চিত করা হতো। তা জানার পর আমার মনে জেদ হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর অল্প বয়সে বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে বিভিন্ন দেশ আর বড় বড় উৎসবে অংশ নিয়েছি। সেখানে বলেছি, ‘আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। আমি বাংলাদেশি।’ আমার একটা প্লাস ছিল, সত্যজিৎ রায়ের নায়িকা ববিতা। দেশের পতাকা নিয়ে ববিতা বিভিন্ন দেশ এবং উৎসবে অংশ নিয়েছে, এ তো অদ্ভুত সুখের অনুভূতি।
যুগ্মভাবে আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হচ্ছেন।
দেখছি কেউ কেউ এই ব্যাপারটিকে একটু নেতিবাচকভাবে প্রচার করছে। আমি কিন্তু মোটেও সেভাবে দেখছি না। দেখুন, যখন একুশে পদক কিংবা স্বাধীনতা পদক দেওয়া হয়, তখন একজনকে দেওয়া হয় না। একসঙ্গে কয়েকজনকে সম্মাননা দেওয়া হয়। তাহলে ওই পুরস্কারের মূল্য কমে যাবে? সরকার যদি মনে করে, তাহলে যুগ্মভাবে পুরস্কার দিতেই পারে। গত বছরও দেখেছি শাবানা আপা ও ফেরদৌসী আপাকে (ফেরদৌসী রহমান) যুগ্মভাবে আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে।
যে চলচ্চিত্র আপনাকে ববিতা বানিয়েছে, তার খবর রাখেন?
মাঝে একটা খারাপ সময় পার করেছে আমাদের চলচ্চিত্র। শুনছি, এখন কিছু ভালো ছবি হচ্ছে। কেউ কেউ চেষ্টা করছেন ভালো ছবি বানানোর। আশা করছি, সামনে আরও ভালো ছবি হবে। যা আমরা ভাবছি, চলচ্চিত্রের যা নিয়ে কষ্ট পাচ্ছি, তা ঠিক হয়ে যাবে। ইদানীং চলচ্চিত্রের শিল্পী আর কলাকুশলীদের মধ্যে বিভাজনের খবর পাই। এ ব্যাপারটি সত্যি অনেক কষ্ট দেয়।
এই যে বিভাজনের খবর শোনেন, তাঁদের সবার উদ্দেশে আপনি কী বলবেন?
এটা মোটেও ভালো না। আমাদের সময় তা একেবারই ছিল না। আমাদের পরের প্রজন্মের কাছ থেকেও শুনিনি। কাজ নিয়ে শিল্পী আর কলাকুশলীদের মেতে থাকতে দেখেছি। চলচ্চিত্রে এখন শিল্পী ও কলাকুশলীরা ভাগ হয়ে আছে। ইদানীং তো এমনও শুনছি, শিল্পীদের অনেকেই নাকি কেউ কারও মুখ পর্যন্ত দেখে না। এখন শিল্পীদের মধ্যে ভালোবাসার অভাব। একটা সুন্দর পরিবেশ তৈরি করতে হলে ভালোবাসা ছড়িয়ে দিতে হবে। যারা ভালো কাজ করছে, তাদের সমর্থন ও উৎসাহ দিতে হবে। অভিনয়শিল্পীরা হচ্ছে ফুল, তাদের মধ্যে কেন দলাদলি হবে! এটা উচিত না। বন্ধ করতে হবে।
আপনাকে দেখি ফেসবুকে বেশ সরব।
আমি কিন্তু সেই ফেসবুকের মানুষ না। অন্য কেউ ওটা ববিতা বলে চালিয়ে যাচ্ছে। আমি নিজে ফেসবুক পছন্দ করি না। এর আগে কয়েকবার আপত্তি করেছি। মাঝেমধ্যে অন্যদের মাধ্যমে দেখি যে আমার ওই আইডিতে নানা সময়ের ছবি আপলোড করা হচ্ছে। এতে আমার ভক্তরা বিভ্রান্ত হচ্ছেন। আমার মনে হয়, ফেসবুকে অনেক সময়ও নষ্ট হয়। এমনও শুনেছি, ফেসবুকের দেওয়া পোস্ট নিয়ে নাকি অকারণে বন্ধু আর পরিচিতজনদের মধ্যে ভুল–বোঝাবুঝি হয়। শুধু তা-ই নয়, দেখেছি কোনো বাসায় বা অনুষ্ঠানে গেলে সবাই হাতে থাকা স্মার্টফোনে ফেসবুক নিয়ে ব্যস্ত থাকে। পাশে কারও সঙ্গে তাদের কথা বলার সময় হয় না। নিজের ঘরের মধ্যে অনেকেই বন্দী হয়ে স্মার্টফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকে। সব মিলিয়ে আমি বলতে পারি, ফেসবুক কাছের মানুষকে দূরে সরিয়ে দেয়।