বন্যাকে প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক ধন্যবাদ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা

সমাজের অবহেলিত শিশুদের সংস্কৃতিচর্চার মধ্যে রাখা, গান শেখানো ও তাদেরকে মূলধারার সঙ্গে যুক্ত করার জন্য রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ বুধবার বিকেলে রাজধানী ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সংগীতশিক্ষা প্রতিষ্ঠান সুরের ধারার রজতজয়ন্তী উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি ধন্যবাদ।

চার দিনব্যাপী সুরের ধারার রজতজয়ন্তী উৎসবে সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সব সময় বলতেন, স্বাধীনতা মানেই শুধু রাজনৈতিক স্বাধীনতা নয়—স্বাধীনতার অর্থ হলো রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা। কাজেই সেই স্বাধীনতা নিশ্চিত না হলে একটি জাতি সঠিকভাবে গড়ে উঠতে পারে না। এটা ঠিক, সময়-সময় আমাদের দেশে নানা ধরনের বৈরী পরিবেশের মুখোমুখি হতে হয়। সেখান থেকে সব সময় বাঙালিরাই উত্তরণ ঘটাতে সক্ষম হয়েছে। মাঝেমধ্যে কালো মেঘ ছেয়ে যায়, তার পাশে কিন্তু সূর্য হাসে।’

দেশের স্বাধীনতাসংগ্রাম, মুক্তিসংগ্রামসহ বিভিন্ন আন্দোলনে সংস্কৃতিকর্মীদের ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সংস্কৃতিচর্চার মধ্য দিয়ে একটি জাতির বিকাশ ঘটে। আমাদের দেশে স্বাধীনতা এবং মুক্তিসংগ্রামে, এমনকি আমাদের গণতন্ত্র অধিকার রক্ষার সংগ্রামের সংস্কৃতিকর্মীরা বরাবরই বিশাল ভূমিকা রেখেছেন। তাঁদের অবদান আমরা সব সময় স্মরণ করি। সুরের ধারার সবচেয়ে বড় যে কাজটি আমি দেখেছি, আমাদের দেশের একবারে সাধারণ, সমাজের অবহেলিত শিশুদের সংস্কৃতি শেখানো, গান শেখানো, তাদেরকে মূল ধারার সঙ্গে নিয়ে আসার যে প্রচেষ্টা চালিয়েছে, সেটার জন্য বন্যাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’

নিজের পরিবারে সংস্কৃতিচর্চার বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের পরিবার রাজনীতি যেমন করেছে, সেই সঙ্গে সাহিত্যচর্চা, বই পড়া, সংগীত—এসবের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলাম। একটি স্বাধীন রাষ্ট্রকে সম্পূর্ণভাবে যদি উন্নত করতে হয়, শুধু অর্থনৈতিক মুক্তি নয়, সংস্কৃতিচর্চার ক্ষেত্রটাও প্রসারিত করা প্রয়োজন। সবার প্রচেষ্টায় আমরা উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছি। আমরা বাঙালি জাতি, বিজয়ী জাতি—বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াব। গ্রামপর্যায়েও যেন সংস্কৃতিচর্চা বিকশিত হয়, সেটাও সব সময় চাই।’

প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে দেশের সংস্কৃতির বড় শত্রু মৌলবাদ, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি এবং জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় সংস্কৃতিকর্মীদের এক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সুরের ধারা।

সংগীতশিক্ষা প্রতিষ্ঠান সুরের ধারার চেয়ারম্যান রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা বলেন, ‘ধারাবাহিক উন্নয়নের বড় বাধা ধর্মীয় মৌলবাদ, যা প্রতিরোধে সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা বড় অস্ত্র। এগুলো মোকাবিলায় সুরের ধারা দায়বদ্ধ।

বন্যা আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু রবীন্দ্রপ্রেমী ছিলেন। বিভিন্ন বক্তৃতায় তিনি রবীন্দ্রনাথকে উদ্ধৃত করতেন। তিনি সংস্কৃতিকে সবার ওপরে ঠাঁই দিয়েছেন।’

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, চ্যানেল আইয়ের বার্তাপ্রধান শাইখ সিরাজ, মন্ত্রিপরিষদ সদস্যসহ অনেকে।

অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে প্রধান অতিথির হাতে অনুষ্ঠান স্থলের ছবি ও খবরসহ চ্যানেল আই থেকে প্রকাশিত পাক্ষিক ম্যাগাজিন আনন্দ আলোর একটি কপি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে তুলে দেন ফরিদুর রেজা সাগর এবং শাইখ সিরাজ।

সুরের ধারার ২৫ বছর এবং সুরের ধারা-চ্যানেল আইয়ের বর্ষবরণ-বর্ষবিদায়ের চার দিনের অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী পর্ব সরাসরি প্রচার করে চ্যানেল আই।