দায়বদ্ধতা থেকে শুরু করলাম

একটি সিনেমার গল্প ছবিতে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত ও আরিফিন শুভ
একটি সিনেমার গল্প ছবিতে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত ও আরিফিন শুভ

তারকাদের তারকা আলমগীর। অভিনয়, পরিচালনা ও প্রযোজনা—সব মাধ্যমেই সফল হয়েছেন চলচ্চিত্রের এই তারকা। এ পর্যন্ত প্রায় ২২৫টি ছবিতে অভিনয় করেছেন। নয়বার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। মাঝের সময়টায় একটা-দুটো ছবিতে অভিনয় করলেও দীর্ঘ ১৭ বছর পরিচালনা থেকে দূরে ছিলেন। নিজের প্রযোজনায় আবার পরিচালনায় ফিরেছেন আলমগীর। একটি সিনেমার গল্প নামে ছবি নির্মাণ করেছেন। এতে তিনি ছাড়াও অভিনয় করেছেন আরিফিন শুভ, ঋতুপর্ণা, চম্পা প্রমুখ। কাল শুক্রবার পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে মুক্তি পাচ্ছে ছবিটি। ছবি মুক্তির আগে গত সোমবার কথা বলেছেন শফিক আল মামুনের সঙ্গে।

প্রশ্ন: প্রথমেই জানতে চাই, চলচ্চিত্রের এ সময়ে ছবিটি নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কেমন?
আলমগীর: ছবির গল্প একেবারেই মৌলিক, নতুনত্ব আছে। ছবিটিতে চেষ্টা করেছি সহজ, স্বচ্ছভাবে গল্প বলতে। দর্শকের কাছে যদি ছবিটি ভালো লাগে, তাহলে বলব ভালো ছবি বানাতে পেরেছি। আর যদি তাদের কাছে ভালো না লাগে, তাহলে বলল আমি ব্যর্থ হয়েছি।

প্রশ্ন: পরিচালক আলমগীরের কারণে কি এই ছবির প্রতি দর্শকের বাড়তি আগ্রহ থাকবে? কী মনে হয় আপনার?

আলমগীর: আমি যখন নিয়মিত অভিনয় করতাম, পরিচালনা করতাম—তখনকার দর্শক এখন ছবি দেখে কি না, আমি জানি না। আগে পরিচালনা করেও দর্শকের সুনাম কুড়িয়েছি। অভিনয় ভালো করি কি না, তা বলতে চাই না। ভালো করার চেষ্টা করেছি। কারণ, অভিনয়ের বিশালতা আকাশের বিশালতার চেয়েও বড়। একজনমে নয়, শত জনমেও ভালো অভিনয় করা যায় না। চেষ্টা করা যায়। সেই হিসেবে আমি সারা জীবন ভালো অভিনয়ের চেষ্টা করে যাচ্ছি। এ কারণেই মনে হয় নয়বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছি।

প্রশ্ন: ছবিটির নাম ‘একটি সিনেমার গল্প’ দেওয়ার কারণ কী?

আলমগীর: আমি কিন্তু এই ছবিটির নাম অন্য কিছু দিতে পারতাম। আসলে এই সিনেমাটি পুরো না দেখলে এর নামকরণের কারণ বোঝা যাবে না।

প্রশ্ন: ছবির গল্পটা কী নিয়ে?

আলমগীর: চলচ্চিত্রের মানুষগুলোরও সাধারণ মানুষের মতো প্রেম–ভালোবাসা, হাসি–কান্না, সুখ–দুঃখ—সবই আছে। ব্যক্তিজীবন আছে। সাধারণ মানুষ মনে করে, আমাদের পুরো জীবনটাই রঙিন। কিন্তু তা তো নয়। এই ছবিতে চলচ্চিত্রের মানুষের পর্দার জীবন ও ব্যক্তিজীবন নিয়ে গল্প বলেছি।

আলমগীর। ছবি: খালেদ সরকার
আলমগীর। ছবি: খালেদ সরকার

প্রশ্ন: যেহেতু দীর্ঘদিন পর পরিচালনায় এসেছেন। শিল্পী নির্বাচনের বিষয়টা কীভাবে করেছেন?
আলমগীর: এখানে একটা কথা বলতেই হয়। একটা সময় ছবির অভিনেতা–অভিনেত্রী নির্বাচনের আগে ছবির প্রযোজক, পরিচালক, চিত্রনাট্যকার ও চিত্রগ্রাহক মিলে গল্প নিয়ে একাধিকবার বসতেন। আলোচনার মাধ্যমে কোন চরিত্রে কাকে নেওয়া হবে, তা ঠিক হতো। কিন্তু এখন তা হয় না। তবে আমি এবার সেভাবেই সবার সঙ্গে বসে আলোচনা করে শিল্পীদের ছবিতে চুক্তিবদ্ধ করিয়েছি। এখন যে থিওরিতে ছবির শিল্পী নেওয়া হয়, ছবির গান তৈরি হয়, এতে আমি কোনোভাবেই বিশ্বাসী নই।

প্রশ্ন: সংগীতশিল্পী রুনা লায়লার প্রথম সুর করা একটি গান এই ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছে...

আলমগীর: গাজী মাজহারুল আনোয়ারের লেখা একটি গান আমার মেয়ে আঁখির (আঁখি আলমগীর) অনুরোধে রুনা সুর করেছে। সুরটি শোনার পর আমার এত ভালো লাগে, আমি ছবিতে গানটি নিয়েছি। তবে রুনার সুর করার পর আঁখি প্রথমে গানটি সাহস করে গাইতে চায়নি। পরে রুনার জোরাজুরিতে তিন দিন গানটি নিয়ে রুনার সঙ্গে বসেছে আঁখি। এর মধ্যে ভারতের মুম্বাইয়ে একটি শো ছিল রুনার। সঙ্গে আঁখিও গিয়েছিল। শো শেষ করে ওরা কলকাতায় আসে। এদিকে আমি আর ইমন সাহা ঢাকা থেকে কলকাতায় যাই। সেখানেই গানটির রেকর্ডিং হয়। সচরাচর এ ধরনের গান আমাদের ছবিতে ব্যবহৃত হয় না।

প্রশ্ন: হঠাৎ করে আবার পরিচালনায় এলেন কেন?

আলমগীর: মাঝে মাঝে দুপুরে খাওয়ার পর আমি আমার অফিসের সোফায় শুয়ে বিশ্রাম নিই। একদিন শুয়ে শুয়ে ভাবছিলাম, চলচ্চিত্র তো ঘড়ির কাঁটার মতো চলে। কখনো রাত্রি, কখনো দিন, কখনো সন্ধ্যা বা ভোর। আমি সারা জীবনই আশাবাদী মানুষ। আমি চিন্তা করলাম, অশ্লীলতা দূর হয়েছে। আমরা পুরোনোরা যদি কিছু চেষ্টা করে এই জায়গায় এগিয়ে আসি, শতভাগের এক ভাগও অবদান রাখতে পারি, তাহলে কেন নয়। তা ছাড়া, আমার তো ছবি বানানোর আর্থিক সক্ষমতাও আছে। তাই কিছুটা মনের তাগিদ, কিছুটা দায়বদ্ধতা থেকে শুরু করলাম। শাবানারা চলচ্চিত্র ছেড়ে দিল। চলচ্চিত্রে অস্থিরতা শুরু হলো, অশ্লীলতা শুরু হলো। সে সময় মনে হলো এই অবস্থায় চলচ্চিত্রে আমাদের মতো শিল্পীদের ঠাঁই হবে না। অন্য কিছু ভাবতে হবে। যেহেতু আমার পরিবার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিল, চট করে ব্যবসাটা বেছে নিলাম। সে সময় যদি ব্যবসা ও চলচ্চিত্র দুটোই করে যেতাম, তাহলে কোনো কাজই ভালোভাবে হতো না। একটা জায়গায় ব্যবসাটা দাঁড়িয়ে গেল। এ কারণে এখন আবার পরিচালনার কাজ শুরু করলাম।

প্রশ্ন: এখন থেকে নিয়মিত পরিচালনা করবেন?

আলমগীর: দেখি এই ছবিটি দর্শক কীভাবে নেয়। দর্শক যদি মোটামুটিও পছন্দ করে, তাহলে আরও কিছু সুন্দর ছবি বানানোর চেষ্টা করব। এখন কেবল চলচ্চিত্রের আকাশে ভোরের সূর্য দেখছি। আমার বিশ্বাস, চলচ্চিত্রের সোনালি দিন আবার আসবে। আবারও ছয়-সাত শ হল তৈরি হবে এ দেশে। প্রযোজকও বাড়বে। আমি তো শুরু করলাম। সবচেয়ে বড় কথা এই মুহূর্তে প্রযোজক, হল মালিক—এই দুই মাধ্যমের মধ্যে যদি সমতা আসে, দুই মাধ্যম যদি সঠিক পরিকল্পনা করে এগোয়, তাহলে এ দেশে ভালো ভালো ছবি তৈরি হতে বাধ্য। এতে হলও বাঁচবে, প্রযোজকও বাঁচবে। আমরা শিল্পীরাও ভালো থাকব।