জয়ের 'সেন্স অব হিউমার' অনন্য

শাহরিয়ার নাজিম জয়ের উপস্থাপনায় এটিএন বাংলায় প্রচারিত হয় সেলিব্রেটি শো ‘সেন্স অব হিউমার’
শাহরিয়ার নাজিম জয়ের উপস্থাপনায় এটিএন বাংলায় প্রচারিত হয় সেলিব্রেটি শো ‘সেন্স অব হিউমার’

৭ এপ্রিল রাত ৮টা ১০ মিনিটে তপু খানের পরিচালনায় আরটিভিতে প্রচারিত হলো সাপ্তাহিক নাটক মাস্টার মাইন্ড। অভিনয় করেছেন আল মামুন, ইমন, মৌসুমী হামিদ প্রমুখ। নাটকের গল্পটি আবর্তিত হয়েছে একটি বিদেশি রিসোর্টের পটভূমিতে। ইমন একটি কোম্পানিতে আল মামুনের অধীন একজন কর্মকর্তা। একদা মৌসুমীও আল মামুনের অধীন কর্মকর্তা ছিলেন। সে সময় মৌসুমীর সঙ্গে মামুনের গড়ে ওঠে গোপন সখ্য। মৌসুমীকে নিয়ে মামুন তখন দেশের বাইরেও গেছেন। সেই সব ছবি ও ভিডিও আছে মৌসুমীর কাছে। সেগুলো উদ্ধার করার জন্য ইমনকে চাকরির ভয় দেখিয়ে ও প্রলোভন দিয়ে রাজি করান মামুন। কেননা, মামুন জানেন, ইমনের সঙ্গেও ছিল মৌসুমীর মধুর সম্পর্ক। এরপর ইমন তাঁর এক সহপাঠীকে নিয়ে যান বিদেশের সেই রিসোর্টে, যেখানে বর্তমানে কর্মরত মৌসুমী। এরপর মৌসুমীর সঙ্গে ইমনের সম্পর্ক পুনরুদ্ধার, মামুনের সেই ছবি ও ভিডিওচিত্র করায়ত্ত করার বিভিন্ন কৌশল ও চেষ্টা নিয়ে একের পর এক ঘটতে থাকে নানা ঘটনা, এটাই নাটকের মূল বিষয়।
এককথায় বলা যায়, নাটকের গল্পটিই অত্যন্ত দুর্বল ও সাদামাটা। কিছু কিছু দৃশ্যে কিছুটা নাটকীয়তা থাকলেও পুরো গল্পে নাটকীয়তা না থাকায় তা কোনো আবেদন জাগাতে পারেনি। আবার চরিত্রায়ণের কথা বললে ইমনের চরিত্রই নাটকের প্রাণ, অথচ তাঁর চরিত্রটি মোটেই বলিষ্ঠ ও যথার্থ মনে হয়নি। সংলাপ ও অভিনয়ও ছিল দুর্বল। তবে পুরো নাটকেরই লোকেশন ও চিত্রধারণ ছিল বেশ আকর্ষণীয়।
এরপর রাত ৯টা ১০ মিনিটে বিটিভিতে প্রচারিত হলো এ সপ্তাহের নাটক বন্ধুত্বে বসবাস। রচনা জাহিদ বাবুল, প্রযোজনা এস এম নোমান হাসান খান। অভিনয়ে ছিলেন আল মামুন, লীনা ফেরদৌসী, নওশাবা, শাহ আলম দুলাল প্রমুখ।
সংক্ষেপে নাটকের গল্পটি হলো, আল মামুন ও লীনা ফেরদৌসীর দুই মেয়ে। বড় মেয়ে নওশাবা লক্ষ্মী ও ঘরোয়া প্রকৃতির আর ছোট মেয়েটা উড়নচণ্ডি ও বহির্মুখী। নওশাবাকে পছন্দ করে তার ভার্সিটির সহপাঠী পিয়াল নামের একটি ছেলে। ছেলেটি গানপাগল, সারা দিন গিটার নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। নওশাবাদের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়ে থাকে, লাইব্রেরিতে অপেক্ষা করে নওশাবার জন্য। নওশাবা বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে, কী বলতে চায় সে, কিন্তু সামনাসামনি কিছু বলতে পারে না। এ নিয়ে ছোট বোন নওশাবাকে খোঁচায়, তারপর মনে মনে নওশাবাও দুর্বল হয়ে পড়ে ছেলেটির প্রতি। শেষে একদিন নির্জনে ছেলেটির সঙ্গে বেড়াতে যায় নওশাবা এবং তার গান শুনে মুগ্ধ হয়। মূল গল্প এটিই।
এককথায় বলব, গল্পটি বিংশ শতাব্দীর ষাটের দশকের মনে হয়েছে। জীবনের গল্প হয়তো যুগে যুগে হয় একই ধাঁচের, কিন্তু সময়ের বিবর্তনে তার প্রেক্ষাপট, ধরনধারণ, উপস্থাপনা অনেকটাই পাল্টে যায়, কিন্তু এ গল্পে সে পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগেনি। এ ছাড়া গল্পটি ছিল এতই সাদামাটা, যা করুণা-ভীতি-আশা-হতাশা-ক্ষোভ-মান-অভিমান কোনো কিছুই জাগাতে পারেনি। নাটকের গল্পে ও ঘটনায় যদি নাটকীয়তাই না থাকে, তাহলে তা হয় প্রাণহীন বৃক্ষের মতো। অভিনয় কিছুটা উতরে গেলেও সংলাপ ছিল নিম্নমানের। এ ছাড়া পথের মধ্যে দুই বোন পিয়ালের বাবাকে ডেকে যেভাবে প্রশ্ন করেছে, তাঁর ছেলের নম্বর চেয়েছে, তা মোটেই স্বাভাবিক মনে হয়নি। লাইব্রেরিটি একেবারেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের লাইব্রেরির মতো মনে হয়নি। আর নায়কের গলায় যে গানটি শোনানো হয়েছে, তা ছিল বেসুরো। নায়িকা সে গান শুনে যে কীভাবে মুগ্ধ হলো, সেটাই ভাবার বিষয়। তবে ভালো লাগার মধ্যে ছিল আউটডোর লোকেশন নির্বাচন ও বহির্দৃশ্য ধারণ। এটি উপভোগ্য মনে হয়েছে। বিটিভির নাটকে এমন বহির্দৃশ্য ধারণ কমই দেখা যায়।
শাহরিয়ার নাজিম জয়ের উপস্থাপনায় ৭ এপ্রিল রাত ১১টায় এটিএন বাংলায় প্রচারিত হলো সেলিব্রেটি শো ‘সেন্স অব হিউমার’। আমরা আগেও বলেছি, সেলিব্রিটি শোর মধ্যে বর্তমানে সবচেয়ে সফল ও জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘সেন্স অব হিউমার’।
এদিন অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে ছিলেন অভিনেতা ইমন ও এ বি এম সুমন। উপস্থাপক জয়ের তির্যক প্রশ্নের মধ্য দিয়ে অভিনেতা ইমন ও সুমনের চলচ্চিত্রে আবির্ভাব, অগ্রযাত্রা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন দর্শক। এর পাশাপাশি নবীন-প্রবীণ অভিনেতাদের সম্পর্কে তাঁদের মনোভাব কেমন, তাঁদের কাছ থেকে কী প্রত্যাশা, একে একে সবই পরিষ্কার হয়ে গেছে দর্শকের কাছে। ইমনের বক্তব্যের সারকথা ছিল, দর্শক এখন চলচ্চিত্রে নতুন কিছু চান, কিন্তু আমরা অভিনেতা, পরিচালক, প্রযোজক—সবাই সেটা দিতে ব্যর্থ হচ্ছি। আর সুমনের বক্তব্য, ভালো ছবির সঙ্গেই আমাদের তার বাণিজ্যিক দিকটিও প্রাধান্য দিতে হবে।
শেষে উপস্থাপক জয় সম্পর্কে বলতে চাই, তিনিই এ অনুষ্ঠানের প্রাণ। তাঁর সেন্স অব হিউমার সত্যিই অনন্য। তিনি অন্য অনেক উপস্থাপকের মতো হাতে কাগজ নিয়ে কথা বলেন না, কিন্তু তুলে আনেন প্রাসঙ্গিক সব তথ্য ও বিষয়।