বিয়ে হবে গাড়ি কিনলেই: নুসরাত ফারিয়া

উপস্থাপনা থেকে চলচ্চিত্রে নাম লিখিয়েই আলোচিত নুসরাত ফারিয়া। জাজ মাল্টিমিডিয়ার প্রযোজনায় ‘আশিকী’ ছবিতে অভিনয় করে নায়িকা তকমা পেয়ে যান তিনি। ২০১৫ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবির পর থেকে টানা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তিনি। তাঁর অভিনীত সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবির নাম ইন্সপেক্টর নটি কে’। এরপর নতুন কোনো ছবিতে অভিনয়ের খবরে নেই ফারিয়ার। হঠাৎ করেই খবর, নায়িকা নুসরাত ফারিয়া গায়িকা হয়ে আসছেন। গানের বাইরে ছবির কাজের খবর জানতে আজ বুধবার দুপুরে কথা হয় তাঁর সঙ্গে, জানালেন এখনকার ব্যস্ততা ও জীবন নিয়ে আগামীর ভাবনার কথা।

নতুন কোনো ছবিতে অভিনয়ের খবরে নেই আপনি!
এ বছর জানুয়ারিতে মুক্তি পায় ‘ইন্সপেক্টর নটি কে। এই ছবির পর ১৬টি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়েছি। কোনোটিই আমার সঙ্গে যায় না বলেই ছবিগুলোতে কাজ করতে চাইনি। এর মধ্যে আবার একটি ছবির কাজ শুরু করার সবকিছু চূড়ান্ত হলেও শেষ মুহূর্তে আর শুরুই হয়নি। পুরো প্রকল্পটি বাতিল হয়ে যায়।

জাজ মাল্টিমিডিয়ার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার কারণে আপনার সব কাজ এই প্রতিষ্ঠান দ্বারা নিয়ন্ত্রণ হতো। সেই চুক্তি এখনো আছে?
জাজ মাল্টিমিডিয়ার সঙ্গে আমার পাঁচ বছরের চুক্তি ছিল। তিন বছর পার হয়েছে। আরও দুই বছর বাকি আছে। তবে আমার ক্ষেত্রে চুক্তির শর্ত অনেক শিথিল করা হয়েছে। আমি এখন অন্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও কাজ করতে পারব।

নুসরাত ফারিয়া
নুসরাত ফারিয়া

চলচ্চিত্রের অনেকেই বলছেন, জাজ মাল্টিমিডিয়ায় নতুন নায়িকার আগমনে আপনি নাকি ছিটকে পড়েছেন?
এটা একদমই ঠিক না। পুরোপুরি বানোয়াট। ২০১৫ সাল থেকে আমি জাজ মাল্টিমিডিয়ার সঙ্গে কাজ শুরু করেছি। এই সময়ে প্রতিষ্ঠানটি যত ছবি বানিয়েছে, সব ছবিতে আমি একা কাজ করিনি। আরও অনেকে করেছেন। আমার ভালো লাগার গল্পে আমি কাজ করেছি।

ছবির কাজ যেহেতু কম, কীভাবে সময় কাটছে?
আমি এখন পড়াশোনায় মনোযোগী হয়েছি। সামনে আমার এলএলবি দ্বিতীয় বর্ষের চূড়ান্ত পর্বের পরীক্ষা।

আপনি তো ব্যবসায় প্রশাসন নিয়ে পড়াশোনা করছিলেন?
ঠিকই ধরেছেন। আমি এআইইউবিতে বিবিএ নিয়ে নবম সেমিস্টার পর্যন্ত পড়েছি। ছবির শুটিংয়ের কারণে পড়াশোনায় অনেক ব্যাঘাত ঘটেছে। আবার যখন পড়াশোনার কথা চিন্তা করলাম, তখন ভাবলাম অন্য কোনো বিষয়ে পড়ি। এ ক্ষেত্রে আমার পছন্দ ছিল এলএলবি।

নুসরাত ফারিয়া
নুসরাত ফারিয়া

ভবিষ্যতে আইন বিষয়ে ক্যারিয়ার গড়ার চিন্তা করছেন?
একদমই তাই। আমি কাজপাগল মানুষ। পরিবারকে সময় দিতে হবে। পরিবারের কাছে আসতেই হবে। সত্যি কথা বলতে, আমাদের দেশে এখন চলচ্চিত্র নিয়ে সুযোগ-সুবিধা কম। বাইরের দেশে সবাই দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা করতে পারেন, কারণ সেখানে সুযোগ-সুবিধা অনেক বেশি। ওদের ওখানে প্রশংসাও বেশি পাওয়া যায়, মর্যাদাও পায়। দিন শেষে আমরা সবাই টাকার জন্য কাজ করি। খ্যাতির পাশাপাশি অবশ্যই অর্থনৈতিক নিরাপত্তাও জরুরি, যা এই মাধ্যমে কাজ করে এখন আমাদের এখানে অতটা নেই। চিন্তা করে যদি দেখি, বাইরের দেশে এই ব্যাপারগুলো নিয়ে ভাবতে হয় না। ওরা অর্থনৈতিকভাবে নিজেদের নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যেতে পারে। আমাদের এখানে কাজ করার সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আমি আমার জীবন নিয়ে অনেক আশাবাদী। ১০ বছর কাজ করব, এরপর সংসার করব—এটা খুবই কষ্টসাধ্য। সবকিছু ভেবে আমি আইন বিষয় বেছে নিয়েছি। পড়াশোনা নিয়মিত চালিয়ে এ বিষয়ে ক্যারিয়ার গড়তে চাই।

চলচ্চিত্রের জন্য শুধু পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটেছে আপনার?
ব্যাঘাত ঘটেছে ঠিক, তবে লাভও হয়েছে। কাজ করে আমি যা উপার্জন করেছি, তা পড়াশোনায় ইনভেস্ট করছি। নিজের টাকায় নিজে পড়াশোনা করছি।

পরিবারের জন্য কোনো খরচ?
এখন পর্যন্ত মা-বাবা আমার কাছ থেকে কিছুই চায় না। কিন্তু আমি ওদের জন্য কিছু না কিছু করার চেষ্টা করি।

গানের খবর বলুন।
২৬ এপ্রিল ঢাকায় আসার আগের দিন কলকাতায় আমার গানের প্রকাশনা অনুষ্ঠান হবে। ‘পটাকা’ গানটি যদি অনেক সফল হয়, দর্শকের ভালোবাসা পায়, তবেই গানে নিয়মিত হব। এই গান অনেক মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে আমার নানা পরিকল্পনা রয়েছে।

নুসরাত ফারিয়া
নুসরাত ফারিয়া

বিয়ে নিয়ে কোনো পরিকল্পনা আছে?
আমি সাজানো গোছানো একটি মেয়ে। শুধু পাত্রটাই এখনো খুঁজে পাইনি। আমার জীবনের সবকিছুই সাজানো গোছানো, শুধু পাত্রটা ছাড়া। আমার মনে হয়, সঠিক সময়ে সঠিক কাজ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেক নানাভাবে চাপ দেবে হয়তো, কিন্তু সময়ের চাহিদা ভিন্ন। সময়ের চাহিদা বুঝতে পারা খুব কঠিন। যেটা অনেকে বুঝতে পারে, অনেকে পারে না। আমি সেই ভাগ্যবানদের একজন, যাঁর জীবনে সঠিক সময়ে সঠিক কাজটাই হয়েছে। বিয়েটাও সময়মতো হয়ে যাবে।

পরিবার থেকে কোনো চাপ নেই?
না, আব্বু-আম্মু বিয়ের বিষয়ে একদম চাপ দেন না। আমি তো বাইরের দেশে গিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেছি। আমি সফল হয়েছি। সে জন্য যখন একের পর এক পদক্ষেপ নিচ্ছি, আমার আব্বু-আম্মু খুশি।

সেই সঠিক সময় কবে আসবে?
যেদিন আমি একটা ‘অডি’ গাড়ি কিনে ফেলব, সেদিনই বিয়ে করে ফেলব। আমি যেদিন এই গাড়ি কিনতে পারব, সেদিন প্রায় সব লক্ষ্য শেষ। আমার ৪০০-৫০০ কোটি টাকার মালিক হওয়ার ইচ্ছা নেই, কিন্তু নিজের জন্য একটি অডি গাড়ি চাই। আমার সন্তানদের বলতে পারব, তোমার মা উপস্থাপনা করেছে, নায়িকা ছিল, গান গেয়েছে, নেচেছে আর অডি গাড়ি কিনে বিয়ে করেছে।

অডি গাড়ির সঙ্গে বিয়ের সম্পর্ক কী?
এই যেমন মানুষের ইচ্ছে হয় ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, করপোরেট ব্যক্তিত্ব হবে, বিষয়টি তেমনই। আমার এখন পর্যন্ত যত ইচ্ছে ছিল, সব অর্জন করেছি। এই মুহূর্তে আমার চিন্তা একটি অডি গাড়ি কেনা। আমার আরেকটু স্বাবলম্বী হওয়া মনে করতে পারেন।