'আমি খুবই ছোট মানের অভিনেতা'

ওমের্টা ছবির দৃশে্য রাজকুমার রাও
ওমের্টা ছবির দৃশে্য রাজকুমার রাও
>শুধুই সাধারণ মানুষ নয়, বলিউড তারকাদেরও পছন্দের অভিনেতা রাজকুমার রাও। নতুন নতুন চরিত্রে নিজেকে মেলে ধরেন তিনি। রাজকুমার অভিনীত নিউটন সেরা হিন্দি ছবি হিসেবে সম্প্রতি জাতীয় পুরস্কার পেল। শাদি মে জরুর আনা রাজকুমার রাওকে এবার ওমের্টা ছবিতে দেখা যাবে কুখ্যাত সন্ত্রাসী ‘আহমেদ ওমর সৈয়দ শেখ’-এর চরিত্রে। হানসাল মেহতা পরিচালিত ওমের্টা ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে আগামীকাল ২০ এপ্রিল। সবার প্রিয় অভিনেতা হওয়া সত্ত্বেও নিজেকে একজন সাধারণ অভিনেতা বলে মনে করেন তিনি। আর এরই ঝলক পাওয়া গেল এই আড্ডায়। রাজকুমার রাওয়ের সঙ্গে এই আড্ডায় ছিলেন প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধি দেবারতি ভট্টাচার্য

প্রশ্ন: ‘ওমের্টা’ শব্দের অর্থ কী? 

রাজকুমার রাও: ছবিতে আমার চরিত্র ওমরের সঙ্গে ‘ওমের্টা’ শব্দটি জড়িয়ে। আর ‘ওমের্টা’ মানে হলো ‘কোড অব সাইলেন্স’। বিশেষত গ্যাংস্টারদের মধ্যে এটা প্রচলিত। যখন দুজন গ্যাংস্টার সিদ্ধান্ত নেয় যে এই কথাটা আমাদের মধ্যেই রাখব।
প্রশ্ন: কতটা কষ্টকর ছিল ‘শাদি মে জরুর আনা’র সত্তু থেকে ‘ওমর সৈয়দ’ হয়ে ওঠা?
রাজকুমার রাও: খুবই কষ্টকর ছিল। আর একজন অভিনেতার এটাই কাজ। তবে এই সফরটা খুবই মজার ছিল। এই ছবির পর আমার এনার্জি একদম বদলে গেছে। কোথাও মনে হচ্ছে না আমি রাজকুমার রাও। একজন অভিনেতা হিসেবে আমার প্রয়াস ছিল।
প্রশ্ন: আপনি সব সময় চরিত্রের গভীরে গিয়ে কাজ করেন। ‘ওমের্টা’ ছবিতে একজন কুখ্যাত সন্ত্রাসী হয়ে ওঠার জন্য কতটা প্রস্তুতি নিয়েছেন?
রাজকুমার রাও: ছবিতে ওমর শেখের মতো কুখ্যাত সন্ত্রাসী হয়ে ওঠার জন্য আমাকে অনেক প্রস্তুতি নিতে হয়েছে। এই দুনিয়া এবং এখানকার মানুষ সম্পর্কে আমি কিছুই জানতাম না। এই অচেনা-অজানা দুনিয়ায় প্রবেশের আগে অনেক কিছু শিখতে ও জানতে হয়েছে। ওমর শেখের বড় হয়ে ওঠা এবং ওর কাজকর্ম সব লন্ডনেই। তাই আমি লন্ডনে থেকে ওখানকার ভাষা, সংস্কৃতি, আদব-কায়দা রপ্ত করেছি। সন্ত্রাসের ওপর অনেক গবেষণা চালিয়েছি। অনেক তথ্যচিত্র ও ভিডিও দেখেছি। প্রচুর বই পড়েছি। সন্ত্রাসীদের চিন্তাভাবনা, ওরা কীভাবে কথা বলে, ওদের কথোপকথনের সময় সাধারণত কী ধরনের শব্দ প্রয়োগ করে-এসব শিখেছি। এ তো গেল অভিনয়ের দিকের কথা। চেহারা ওমরের মতো হওয়ার জন্য আমাকে দাড়ি একটু বড় করতে হয়েছে। ওমরের পেটানো শরীর। তাই মার্শাল ট্রেনিংও নিতে হয়েছে।
প্রশ্ন: হানসাল মেহতার ছবি ‘শহীদ’-এ আপনি জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন। আবার তাঁর পরিচালনায় ‘ওমের্টা’। একজন অভিনেতা হিসেবে কতটা চাপে আছেন?
রাজকুমার রাও: আমি চাপের মধ্যে একদমই কাজ করিনি। আর আমাদের ছবি কম বাজেটের হয়। তাই খুব একটা ঝুঁকি থাকে না।
প্রশ্ন: আমি আর্থিক চাপের কথা বলছি না। অভিনেতা হিসেবে কতটা আশা করছেন এই ছবি থেকে?
রাজকুমার রাও: আমি ও হানসাল স্যার সব সময় সততার সঙ্গে ছবি বানাতে চাই। এটাই আমাদের কাছে চাপের। যেদিন আমাদের ছবিতে সততা থাকবে না, সেদিন ভাবতে হবে। শহীদ, সিটি লাইটস, আলিগড়, ওমের্টা-এই চারটি ছবিই সততার সঙ্গে বানানো হয়েছে। আমাদের ছবিতে সততাই মূল কথা।
প্রশ্ন: আতঙ্কবাদীর ওপর বলিউডে একাধিক ছবি নির্মাণ করা হয়েছে। আপনার প্রিয় ছবি কোনটি?
রাজকুমার রাও: বলিউড ছবির কথা বলতে পারব না। তবে হলিউড ছবি আ মাইটি হার্ট আমার খুব প্রিয়। আর মিউনিখ ছবিটিও দারুণ লেগেছিল।
প্রশ্ন: আপনি যে ছবিতে হাত দেন, সেই ছবি বক্স অফিসে রীতিমতো সাড়া ফেলে। আর চিত্রসমালোচকেরাও আপনার অভিনয়ের দরাজ প্রশংসা করে থাকেন। চিত্রনাট্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোন দিকটায় বেশি জোর দেন?
রাজকুমার রাও: অবশ্যই আমি গল্পের ওপর বেশি জোর দিই। গল্প যেন শক্তিশালী হয়। আর গল্পটাতে কী বলা হচ্ছে এবং কীভাবে বলা হচ্ছে সেটাও দেখি। এরপর নিজের চরিত্রের দিকটা দেখি। আর কে ছবিটা পরিচালনা করছেন, সেটাও জরুরি।
প্রশ্ন: বলিউডের বড় অভিনেতাদের সঙ্গে আপনার প্রায়ই তুলনা করা হয়। এমনকি বলিউডের দ্বিতীয় কমল হাসান বলা হচ্ছে আপনাকে। কেমন লাগে?
রাজকুমার রাও: আমার দারুণ লাগে। এই সব তুলনায় আমি খুবই খুশি হই। কমল হাসানের মতো কিংবদন্তি অভিনেতার সঙ্গে তুলনা করা ভীষণই গর্বের ব্যাপার। অনেকেই আমাকে অমিতাভ বচ্চন, শাহরুখ খান, কমল হাসান, দিলীপ কুমারের মতো অভিনেতার সঙ্গেও তুলনা করছেন। তাঁদের মতো দিকপাল অভিনেতার সঙ্গে আমার তুলনা টানা খুবই আনন্দের ব্যাপার। তবে নিজের সম্পর্কে আমার মূল্যায়ন হলো, এই সব কিংবদন্তি ব্যক্তিত্বের সামনে আমি খুবই ছোট মানের অভিনেতা।

 
প্রশ্ন: সম্প্রতি বরুণ ধাওয়ান জানালেন, তাঁর প্রিয় অভিনেতা আপনি। এমনকি ইরফান খানের পত্নী সুতাপার প্রিয় অভিনেতার তালিকায় আপনিই প্রথম। ইরফানও নেই সেই তালিকায়। অমিতাভ থেকে বরুণ-সবার প্রিয় তারকা আপনি।
রাজকুমার রাও: অবশ্যই ভালো লাগে। আমার পরিশ্রম তাঁদের মতো অভিনেতাদের নজরে আসছে এটাই বড় কথা। আমার কাজ সবাই পছন্দ করছেন শুনে খুবই ভালো লাগে। আমি দিল্লিতে যখন নাটক করতাম, তখনো ভীষণ পরিশ্রম করতাম। তখনো সবাই প্রশংসা করেছেন। আজও একই রকমভাবে পরিশ্রম করে চলেছি। আর এইভাবে পরিশ্রম করে যেতে চাই।
প্রশ্ন: তারকাদের তারকা মানে রাজকুমার রাওয়ের পছন্দের তারকা কে?
রাজকুমার রাও: অনেকেই আছেন। আমির, শাহরুখ, রণবীর কাপুর, রণবীর সিং, বিদ্যা, আলিয়া, কঙ্গনা, দীপিকা এই প্রজন্মের এঁরাই আমার প্রিয়।
প্রশ্ন: শ্রীদেবীর সঙ্গে কাজ করা আপনার স্বপ্ন ছিল। কিন্তু সেটা পূরণ হলো না-
রাজকুমার রাও: হ্যাঁ, খুবই খারাপ লাগে এ জন্য। ওনার সঙ্গে একাধিকবার দেখা হয়েছে। তিনি আমার কাজ খুবই পছন্দ করেন বলে জানিয়েছিলেন। শ্রীদেবী ম্যামের ব্যক্তিত্ব আমাকে আকর্ষণ করত।
প্রশ্ন: এ বছর আপনার একাধিক ছবি আসতে চলেছে। কোনোটার কী অবস্থা?
রাজকুমার রাও: ফ্যানে খান ছবিটির কাজ শেষ হয়ে গেছে। এক লড়কি কো দেখা তো ছবির কাজ প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। শ্রদ্ধার সঙ্গে স্ত্রী ছবির কাজ এখন চলছে। ভূপালে ছবির শুটিং চলছিল। খুব তাড়াতাড়ি মেন্টাল হ্যায় ক্যায়া ছবির শুটিং শুরু হবে।
প্রশ্ন: বলিউডের দুই সুন্দরী শ্রদ্ধা ও ঐশ্বরিয়ার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?
রাজকুমার রাও: শ্রদ্ধা খুবই মিষ্টি একটা মেয়ে। প্রচণ্ড পরিশ্রম করতে পারে ও। স্ত্রী খুবই মজার একটা ছবি। শুটিংয়ে আমি, শ্রদ্ধা খুব মজা করে কাজ করেছি। ফ্যানে খান ছবিতে আমি ঐশ্বরিয়া ও অনিল কাপুরের সঙ্গে কাজ করেছি। তাঁদের সঙ্গে আমার একটা আলাদা সম্পর্ক।
প্রশ্ন: ‘কুইন’-এর পর আবার আপনাকে ও কঙ্গনাকে একসঙ্গে ‘মেন্টাল হ্যায় ক্যায়া’ ছবিতে দেখা যাবে।
রাজকুমার রাও: খুবই ভালো লাগছে আমি আর কঙ্গনা আবার একসঙ্গে কাজ করব। এই ছবিটা একটা এন্টারটেইনিং থ্রিলার। আর কঙ্গনা দুর্দান্ত এক অভিনেত্রী। আমরা দুজনে খুবই রোমাঞ্চিত।
প্রশ্ন: একজন অভিনেতা হিসেবে আপনার দুর্বলতা কী বলে মনে হয়?
রাজকুমার রাও: আমি মনে করি, কোনো বিষয়ের গভীরে বেশি ঢুকে যাই। ফারহা খানের শোতে আমি এতটাই লাফালাফি করি যে আমার পা ভেঙে যায়। তারপর থেকে সবাই বলে, এতটা গভীরে যাস না।
প্রশ্ন: আপনার জীবনের সবচেয়ে দুর্বল সময়-
রাজকুমার রাও: আমি যখন মাকে হারাই।
প্রশ্ন: অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন কবে থেকে দেখতে শুরু করেন?
রাজকুমার রাও: আমি ছাত্র অবস্থা থেকেই অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। এরপর নাটক করা শুরু করি। এইভাবে ধীরে ধীরে অভিনয় জগতে চলে আসি।
প্রশ্ন: আপনার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী পত্রলেখার ছবি ‘নানু কি জানু’ আসছে। ছবির ট্রেলার দেখেছেন?
রাজকুমার রাও: হ্যাঁ, দেখেছি। আমার খুবই ভালো লেগেছে। আমি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছি। আপনার পরের প্রশ্নের আগেই আমি উত্তর দিচ্ছি। আমার ছবির ট্রেলারও পত্রলেখা দেখেছে। ওরও খুব ভালো লেগেছে।
প্রশ্ন: বান্ধবী পত্রলেখার থেকে বাংলা ভাষা ও বাঙালি সংস্কৃতি কতটা শিখলেন?
রাজকুমার রাও: আমি তোমায় ভালোবাসি (সজোরে হেসে)। এই তো বাংলা বলছি। আসলে আমি নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোসের ওপর ওয়েব সিরিজ করার সময় বাংলা ভাষা একটু-আধটু শিখেছি। বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গেও পরিচয় হয়েছে। আর ফিল্ম ইনস্টিটিউটে পড়াশোনার সময় আমার বাঙালি বন্ধুও প্রচুর ছিল।
প্রশ্ন: শেষ প্রশ্নটা একদমই ব্যক্তিগত। ‘শাদি মে জরুর আনা’ ছবির সাক্ষাৎকারের সময় প্রশ্ন করেছিলাম যে আপনার আর পত্রলেখার ‘শাদি’তে কবে ডাকছেন। আবার এই প্রশ্নটাই করতে চাই-
রাজকুমার রাও: না, না, এখনো সে রকম কোনো পরিকল্পনা নেই। (লজ্জিতভাবে)