পানির জন্য আমির খানের 'জলমিত্র' প্রকল্প

‘জলমিত্র’ প্রকল্প নিয়ে আমির খান
‘জলমিত্র’ প্রকল্প নিয়ে আমির খান

গ্রীষ্মের প্রখর দাবদাহে মহারাষ্ট্রের গ্রামগুলো প্রায় পানিশূন্য হয়ে যায়। এক ফোঁটা পানির আশায় চাতক পাখির মতো অপেক্ষায় থাকে অসহায় গ্রামবাসী। পানির অভাবে চাষের জমি শুকিয়ে যায়। তাই ফলনও ঠিকমতো হয় না এই সময়। এরই মধ্যে মহারাষ্ট্রের কয়েকটি গ্রামে পানি পৌঁছে দিতে পেরেছে আমির খানের ‘পানি ফাউন্ডেশন’। আমিরের প্রতিষ্ঠান এই রাজ্যের হাজার হাজার তৃষ্ণার্ত পরিবারের তৃষ্ণা দূর করতে পেরেছে। শুকনো আর ক্ষতবিক্ষত জমিকে সিক্ত করতে পেরেছে।

গতকাল শনিবার বলিউড তারকা আমির খান তাঁর বাসায় সাংবাদিকদের সামনে পানি ফাউন্ডেশনের কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন। তিনি শহরবাসীকে এই কাজে আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান। তাঁর এই বিশাল কর্মকাণ্ডকে আরও সফল করতে এবার তিনি যুব সম্প্রদায়কে পাশে চান। তিনি শহরবাসীর কাছে আবেদন করেন, তারাও যেন গ্রামবাসীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এই প্রয়াসকে আরও সফলতার পথে এগিয়ে নিয়ে যায়। ১ মে মহারাষ্ট্র দিবসকে ‘মহা শ্রমদান’ দিবস হিসেবে পালন করবে পানি ফাউন্ডেশন। আমির খান আশা প্রকাশ করে বলেন, সেদিন আরও বেশিসংখ্যক মানুষ পানিকে ঘিরে এই মহাযজ্ঞে শামিল হবে।

শুধু ১ মে নয়, ৮ এপ্রিল থেকে ২২ মে মধ্যে যেকোনো দিন গিয়ে গ্রামের মানুষদের সঙ্গে এই কাজে যে কেউ যুক্ত হতে পারবেন। আমির বলেন, ‘গত বছর আমরা মহারাষ্ট্র দিবসের দিন “চলা গায়ৈ” নামে ওয়াটার ক্যাম্পের আয়োজন করেছিলাম। ১ হাজার ৩০০ গ্রাম এই কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিল। শহর থেকে ২৫ হাজার মানুষ এই কর্মে যোগ দেন। তাঁরা গ্রামে গিয়ে তিন ঘণ্টা কাজ করেন। এ বছর আমরা এনেছি “জলমিত্র” প্রকল্প।’

আমির খান জানান, এরই মধ্যে এক লাখ মানুষ তাঁর এই উদ্যোগে অংশ নেওয়ার জন্য এগিয়ে এসেছে। jalmitra.paanifoundation.in লিংকে সাইন করে নাম নিবন্ধন করতে হবে। ২৫ এপ্রিল গভীর রাত পর্যন্ত চলবে নিবন্ধন।

আমির খান বলেন, ‘মহারাষ্ট্রের ৭৫ মহকুমার চার হাজার গ্রাম পানি সংরক্ষণের কাজ করছে। গোড়াতে গ্রামের দুজন ব্যক্তিকে এ বিষয়ে সাড়ে চার দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তারা গ্রামে গিয়ে কীভাবে পানি সংরক্ষণ করতে হবে, তা গ্রামবাসীকে শিখিয়েছেন। আমাদের পানি ফাউন্ডেশন সংগঠন এত সুন্দর করে প্রশিক্ষণ দেয় যে সবাই এই কাজের জন্য উজ্জীবিত হন।’

তবে এ কাজে গ্রামের মানুষদের যুক্ত করা একসময় মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। এ প্রসঙ্গে বলিউডের মিস্টার পারফেকশনিস্ট বলেন, ‘এক গ্রামে মাত্র তিনজন পানি সংরক্ষণের কাজ করতেন। গ্রামের আর কোনো মানুষকে তাঁরা পাশে পাননি। একদিন আমি আর কিরণ ভোরবেলা সেই গ্রামে পৌঁছে যাই। দেখি ওই তিনজন কাজ করছেন। আমি আর কিরণ গিয়ে তাঁদের সঙ্গে কাজে হাত লাগাই। গ্রামের মানুষ চুপ করে দেখেছে, কিন্তু এগিয়ে আসেনি। পরে তাদের বোঝানোর চেষ্টা করি, পানি সংরক্ষণ কতটা জরুরি। পরে গ্রামের অনেক মানুষ এই কাজে অংশ নেওয়ার জন্য এগিয়ে এসেছে।’

‘সত্যমেভ জয়তে’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমির খানের সামনে উঠে আসে পানির অভাবে গ্রামের ভয়াবহ চিত্র। অনুষ্ঠানটির একটি টিম আর স্ত্রী কিরণকে সঙ্গে নিয়ে তিনি ‘পানি ফাউন্ডেশন’ শুরু করেন। এমনকি কিরণকে সঙ্গে নিয়ে আমির গ্রামে গ্রামে গিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে এই কাজে অংশ নেন।

আমির নিজের বাড়িতে কতটা পানি সংরক্ষণ করেন? তিনি বলেন, ‘বাড়িতে আমরা পানির ব্যাপারে খুব সচেতন থাকি। আমার ছোট্ট ছেলে আজাদও এক ফোঁটা পানি নষ্ট করে না। ব্রাশ করার সময় পানির এতটুকু অপচয় যাতে না হয়, সেদিকে ও সজাগ থাকে।’