ছবির শেষ নিয়ে বাবা আর ছেলের বিরোধ!

‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’ ছবির দৃশ্যে আমির খান ও জুহি চাওলা
‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’ ছবির দৃশ্যে আমির খান ও জুহি চাওলা

নায়ক-নায়িকার দেখা হবে, অতঃপর প্রেম, কয়েকটি গানের সঙ্গে নাচানাচি, আর তারপর বিয়ে করে সুখের সমাপ্তি। বহুদিন এই সূত্র মেনে তৈরি হয়েছে বলিউডের ভূরি ভূরি ছবি। পরের যুগে এল মারদাঙ্গা সব ছবি। অমিতাভ বচ্চনের ‘অ্যাংরি ইয়াং ম্যান’ অবতার ভর করে সানি দেওল, সঞ্জয় দত্ত ও অনিল কাপুরদের ওপর। কিন্তু দর্শক তত দিনে এই এক ধরনের ছবি দেখে ত্যক্ত বিরক্ত। আশির দশকের একদম শেষ দিকে এসে হিন্দি রোমান্টিক ছবির ধারা পালটে দেয় ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’।

আমির খান ও জুহি চাওলার ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’ মুক্তির তিন দশক হয়ে গেছে। ১৯৮৮ সালের ২৯ এপ্রিল মুক্তি পেয়েছিল এই ব্লকবাস্টার ছবি। কিশোর প্রেমের এই চলচ্চিত্র ওই সময় দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে। ‘রাফ অ্যান্ড টাফ’ লুকে নয়, বরং সেখানে পাশের বাড়ির ছেলের মতো একটি চরিত্রে অভিনয় করেন আমির। এটি আশির দশকের ভারতীয় ছবির ধারা থেকে ছিল অনেক দূরে। তবে দুটি অল্প বয়সের ছেলেমেয়ের মধ্যে সেই ধরনের প্রেমের গল্প এখানে চিত্রায়িত হয়েছে, তা মোটেও অবাস্তব ছিল না।

গতকাল রোববার এই চলচ্চিত্র মুক্তির ৩০ বছর পূর্ণ হলো
গতকাল রোববার এই চলচ্চিত্র মুক্তির ৩০ বছর পূর্ণ হলো

আমির খান ও জুহি চাওলার সঙ্গে পরিচালক মনসুর খানের এই সিনেমার মাধ্যমে অভিষেক হয়। গতানুগতিক প্রেমের ছবির মতো ‘মধুরেন সমাপয়েৎ’-এ একেবারে ঝোঁক ছিল না মনসুরের। তিনি যে আমিরের কাজিন, সেটা হয়তো অনেকের অজানা। আবার ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’ ছবির চিত্রনাট্যকার ও প্রযোজক নাসির হুসেইন মনসুরের বাবা, অর্থাৎ আমিরের চাচা। সিনেমার সমাপ্তি সুখের হবে, নাকি দুঃখজনক, এই নিয়ে বাবা-ছেলের মধ্যে রীতিমতো গোল বেঁধে গিয়েছিল। নাসির হুসেইন চেয়েছিলেন নায়ক-নায়িকার মিলন। কিন্তু মনসুর হিন্দি ছবির প্রচলিত ধারা ভেঙে নায়ক-নায়িকা মৃত্যু দেখাতে চান। প্রযোজকের মতে, নায়ক-নায়িকা মরে গেলে সেই ছবি দর্শক ‘খাবে’ না! কিন্তু পরিচালক অনড়। একপর্যায়ে রাগ করে ছবির ক্রেডিট লাইন থেকে তাঁর নাম বাদ দিয়ে দিতে বলেন। ‘লাইলি-মজনু’, ‘হীর-রানঝা’ আর ‘রোমিও-জুলিয়েট’-এর তো মধুর সমাপ্তি হয়নি। কিন্তু যুগ যুগ ধরে তাঁদের প্রেমকাহিনি তো হয়ে এসেছে উদাহরণ। ছেলের যুক্তির কাছে বাবা হার মানলেন।

‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’ ছবির মধুর ও বিষাদময় দুই ধরনের সমাপ্তিই শুট করা হয়। তবে চূড়ান্তভাবে আমির-জুহির সুখের মিলন নয়, বরং মৃত্যুর মাধ্যমে সমাপ্তি বেশি গ্রহণযোগ্য হয়। সেভাবেই ছবি মুক্তি দেওয়া হয়। বাকিটা ইতিহাস। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস