কান চলচ্চিত্র উৎসব মাতাল 'মান্টো'

মান্টো নন্দিতা দাসের দ্বিতীয় ছবি। সাদাত হাসান মান্টোর জীবন নিয়ে করা এই ছবি নিয়েই হাজির হয়েছেন কানে। সঙ্গে ছিলেন মূল অভিনেতা নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকীসহ অন্যরা। ছবিটির উদ্বোধনী প্রদর্শনীর আগে শিল্পী ও কলাকুশলীদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। ছবিটি অভিনেত্রী দিব্যা দত্তের টুইটার থেকে নেওয়া
মান্টো নন্দিতা দাসের দ্বিতীয় ছবি। সাদাত হাসান মান্টোর জীবন নিয়ে করা এই ছবি নিয়েই হাজির হয়েছেন কানে। সঙ্গে ছিলেন মূল অভিনেতা নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকীসহ অন্যরা। ছবিটির উদ্বোধনী প্রদর্শনীর আগে শিল্পী ও কলাকুশলীদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। ছবিটি অভিনেত্রী দিব্যা দত্তের টুইটার থেকে নেওয়া

‘ডানাকাটা পাখি ওড়ার স্বাধীনতা পেয়ে কী করবে?’ এই প্রশ্ন পুরো প্রেক্ষাগৃহের আবহকে ভারী করে তুলল। ছবি শেষ হতেই নন্দিতা দাসকে জড়িয়ে ধরে একজন কাঁদতে শুরু করলেন। শিকড় হারানো মান্টোর যন্ত্রণা প্রেক্ষাগৃহভর্তি দর্শকেরা গতকাল উপলব্ধি করলেন নির্মাতা নন্দিতার নিপুণ নির্মাণের মধ্য দিয়ে।

গতকাল রোববার কানের স্থানীয় সময় বেলা ১১টায় সালে দুবুসিতে শুরু হয় মান্টো ছবির প্রদর্শনী। মান্টো নন্দিতা দাস পরিচালিত দ্বিতীয় ছবি। এটি উর্দু সাহিত্যের অন্যতম কান্ডারি সাদাত হাসান মান্টোর জীবন নিয়ে নির্মিত। এটি এবারের কান আসরে ভারতকে প্রতিনিধিত্ব করা একমাত্র ছবি। কানে আঁ সারতেঁ রিগার বিভাগে ছবিটি নির্বাচিত হয়েছে।

১৯৪৬ থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত মান্টোর জীবনের সংকটময় সময়কে এ ছবিতে তুলে ধরা হয়েছে। শুধু মান্টো নন, ছবিতে প্রাণ পেয়েছে মান্টোর কিছু ছোটগল্পও। ‘দশ রুপিয়া’ দিয়ে শুরু হয়ে ‘টোবাটেক সিং’ গল্পটি দিয়ে শেষ হয় ছবি। মাঝখানে মান্টোর জীবন আর ‘ঠান্ডা গোশত’ গল্পের একঝলক। প্রিয় শহর মুম্বাই থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এই লেখকের অগোছালো রাত-দিন, তাঁর দ্যুতিময় চেহারা বিমর্ষতায় বদলে যাওয়া, স্মৃতিকাতরতায় ভোগা নির্মাতা নন্দিতা দাস প্রতিটি আবেগকে তুলে ধরেছেন এ ছবিতে। আর ‘মান্টো’ হিসেবে অভিনেতা নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকী পরিচালকের প্রতিটি ইঙ্গিত, চাওয়া আর প্রত্যাশাকে পালন করেছেন নিষ্ঠার সঙ্গে। মান্টোর স্ত্রী সাফিয়া চরিত্রে রসিকা দুগাল, অভিনেতা শ্যাম চাড্ডার চরিত্রে তাহির ভাসিন ও সাহিত্যিক ইসমত চুগতাইয়ের চরিত্রে রাজশ্রী দেশপান্ডের অভিনয়ও গতকাল প্রশংসা কুড়ায়।

ছবির উদ্বোধনী প্রদর্শনীর আগে এর শিল্পী ও কুশলীদের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য উৎসব প্রধান থিয়েরি ফ্রেমো উঠে আসেন মঞ্চে। এরপর একে একে ছবির সবাইকে মঞ্চে তুলে আনেন ফ্রেমো। পরিচয়পর্ব শেষে নন্দিতা দাস জানান, একজন নারী নির্মাতার জন্য এবারের আসরটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। এর অংশ হতে পেরে বেশ আনন্দিত।

নন্দিতা ধন্যবাদ জানান তাঁর বাবা চিত্রকর যতীন দাসকে। তিনি বলেন, ‘আমার জীবনের, আমার পরিবারের মান্টো তিনি। আজ এই বিশেষ দিনে তিনি আমার সঙ্গে আছেন, এর চেয়ে বড় অর্জন আর হতে পারে না।’ নন্দিতা তাঁর ছেলে বিহানের কথাও বলেন। ছেলেকে নিয়ে তিনি বলেন, ‘আর অনেকের মতো আমিও এক কর্মজীবী মা। আমার সঙ্গে আমার ছেলে বিহানও ছিল, ৪৫ ডিগ্রির তাপমাত্রাতেও সে আমার সঙ্গে আমার কাছে থেকেছে। আমি কাজ করতাম, সে আমার আঁচল ধরে থাকত।’

গতকাল কানে ছবির প্রদর্শনী শেষে সালে দুবুসির ভেতরই কথা হয় নির্মাতা নন্দিতা দাসের সঙ্গে। বাংলাদেশের কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে বাংলায় বলে উঠলেন, ‘এই ছবি কিন্তু আমাদের সবার। বাংলাদেশেও ছবিটি নিয়ে যেতে চাই। আমার বিশ্বাস, সেখানকার দর্শকেরও হৃদয় ছোঁবে ছবিটি। এর আগেও তো গিয়েছিলাম। এবার নিজের ছবি নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা।’

এরপর নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকীর পালা। প্রদর্শনী শেষ হতেই আপ্লুত দর্শকেরা নওয়াজের নাগাল পেতে ব্যস্ত। ভিড় থেকে বেরিয়ে নওয়াজ প্রথম আলোকে তাঁর অনুভূতির কথাও জানালেন। বললেন, ‘কান উৎসব শুধু ছবিই নয়, আমাদের উপমহাদেশের সাহিত্যের প্রাচুর্যও দেখতে পেল। মান্টো উপমহাদেশের সাহিত্যে কতটা শক্তিমান, এটা এখানে সবাইকে বোঝাতে পেরে, দেখাতে পেরে আনন্দিত।’

নন্দিতার মতো নওয়াজও কথার শেষে নিজের প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেন, ‘এ ছবি বাংলাদেশের দর্শকদের সামনেও তুলে ধরতে চাই। সুযোগ হলে অবশ্যই ছবিটি নিয়ে যেতে চাই বাংলাদেশে।’