বিয়ের আগে 'অভিশপ্ত' হোটেলে হবু রাজবধূ!

ক্লাইভডেন হাউস প্রাঙ্গণে মা ডোরিয়া র‍্যাগল্যান্ডের সঙ্গে মেগান মার্কেল
ক্লাইভডেন হাউস প্রাঙ্গণে মা ডোরিয়া র‍্যাগল্যান্ডের সঙ্গে মেগান মার্কেল


যুক্তরাজ্যের উইন্ডসর ক্যাসেলের সেন্ট জর্জেস চ্যাপেল গির্জায় আজ শনিবার গ্রিনিচ সময় বেলা ১১টায় প্রিন্স হ্যারি আর মেগান মার্কেলের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হবে। এরই মধ্যে অনুষ্ঠানের চূড়ান্ত প্রস্তুতি পর্ব সম্পন্ন হয়েছে। আগেই জানানো হয়েছে, বিয়ের আগের রাতে একসঙ্গে থাকছেন না প্রিন্স হ্যারি ও মেগান মার্কেল। উইন্ডসর ক্যাসেলের কাছাকাছি বিলাসবহুল কোওয়ার্থ পার্ক হোটেলে থাকবেন প্রিন্স হ্যারি। জীবনের শেষ ব্যাচেলর নাইটটি তিনি ভাই প্রিন্স উইলিয়াম আর কাছের কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে কাটানোর পরিকল্পনা করেন।

এরপরই প্রশ্ন ওঠে, তাহলে বিয়ের আগের রাতে মেগান মার্কেল কোথায় থাকছেন? এবার জানা গেছে, বিয়ের আগের দিন ব্রিটেনের এই হবু রাজবধূর থাকার ব্যবস্থা করা হয় লন্ডনের বিলাসবহুল হোটেল ক্লাইভডেন হাউসে। এখানে মেগান মার্কেলের সঙ্গে আছেন তাঁর মা ডোরিয়া র‍্যাগল্যান্ড। রাজপরিবারের সিদ্ধান্তেই এখানে তাঁদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় মাকে সঙ্গে নিয়ে এখানে পৌঁছে যান মেগান। ৩৭৬ একর জায়গার ওপরে তৈরি এই হোটেলে আছে ৩৮টি কক্ষ। এই হোটেলে এক রাত থাকার ভাড়া দেড় হাজার পাউন্ড! ৩৫০ বছরের পুরোনো দুর্গকে সংস্কার করে তাকে হোটেলে রূপ দেওয়া হয়।

ব্রিটেনের রাজপরিবারের এ সিদ্ধান্তে অনেকেই অবাক হয়েছেন। কেন? কারণ, হোটেলটি সবার কাছে ‘অভিশপ্ত’ হিসেবেই পরিচিত। অতীতের নানা ঘটনার জন্য সবাই তেমনটা মনে করেন। তারপরও কেন মেগান মার্কেল আর তাঁর মাকে ওই ‘অপয়া’ হোটেলে রাখা হলো, তা নিয়ে প্রশ্ন করেছেন অনেকেই।

হোটেল ক্লাইভডেন হাউস
হোটেল ক্লাইভডেন হাউস

ক্লাইভডেন হাউসকে অভিশপ্ত মনে করা হচ্ছে কেন? ইতিহাসের পাতা থেকে জানা গেছে, দুর্গটি নির্মাণ করেছিলেন দ্বিতীয় ডিউক অব বাকিংহাম জর্জ ভিলিয়ার্স। ১৬৬৬ সালে তিনি এই দুর্গে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। সেই নারীর নাম অ্যানা মারিয়া টলবোট। তাঁদের সেই প্রেম এতই গভীর ছিল যে পরে ভিলিয়ার্সের নিজের হাতে আঁকা সেই গোপন প্রেমিকার ছবি উদ্ধার করা হয় এই দুর্গ থেকে। পরে জানা যায়, অ্যানা মারিয়া টলবোটকে এই দুর্গের মালিকানা দিয়ে যান জর্জ ভিলিয়ার্স।

জর্জ ভিলিয়ার্স আর অ্যানা মারিয়া টলবোটের সম্পর্ককে মেনে নিতে পারেননি অ্যানার স্বামী। তিনি দ্বন্দ্বযুদ্ধে আহ্বান করেন জর্জকে। জর্জকে বাঁচাতে পুরুষের ছদ্মবেশে স্বামীর সামনে আসেন অ্যানা। স্ত্রীকে চিনতে না পেরে দূর থেকে অ্যানাকেই গুলি করে বসেন তাঁর স্বামী। সেই গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। সেই সুযোগে তাঁকে আড়াল থেকে গুলি করেন জর্জ। দ্বন্দ্বযুদ্ধে জিতলেও অবৈধ সম্পর্কে জড়ানোর অপরাধে রাজপরিবার থেকে নির্বাসিত হন জর্জ ভিলিয়ার্স।

১৮৮৩ সালে এই হোটেল কিনে নেন মার্কিন ব্যবসায়ী উইলিয়াম ওয়ালফোর্ড। ঋণের দায়ে জর্জরিত উইলিয়াম পাওনাদারদের ফাঁকি দিতে নিজের মৃত্যুর খবর রটানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনি ধরা পড়ে যান। জেল খাটতে হয় তাঁকে। পরে তাঁর পুত্রবধূ ন্যান্সি ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য হন। কিন্তু ন্যান্সির বিরুদ্ধে নাৎসিদের সমর্থন করার অভিযোগ ওঠে। পদত্যাগ করতে বাধ্য হন ন্যান্সি।

মেগান মার্কেল ও প্রিন্স হ্যারি
মেগান মার্কেল ও প্রিন্স হ্যারি

১৯৬১ সালে এই হোটেলে ক্রিস্টিন কিলার নামে ১৯ বছরের একজন তরুণীর সঙ্গে যৌন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন ব্রিটিশ সরকারের মন্ত্রী জন প্রফিমো। সেই সম্পর্ক নিয়ে বিতর্কের ঝড় ওঠে ব্রিটিশ রাজনীতিতে।

এমনি নানা কারণে এই দুর্গ স্থানীয়দের কাছে ‘অভিশপ্ত’। এবার বিয়ের আগের দিন সেই অভিশপ্ত দুর্গে হবু রাজবধূ মেগান মার্কেল আর তাঁর মায়ের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে, ব্যাপারটি স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারছেন না অনেকেই।

এদিকে উইন্ডসর ক্যাসেলে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সঙ্গে গতকাল দেখা করেন প্রিন্স হ্যারি ও তাঁর হবু বধূ মেগান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মেগানের মা ডোরিয়া র‍্যাগল্যান্ড। এর আগের দিন গত বৃহস্পতিবার হ্যারির বাবা প্রিন্স চার্লস ও তাঁর স্ত্রী ক্যামিলার সঙ্গে দেখা করেন ডোরিয়া।

বিয়ের অনুষ্ঠানে অসুস্থতার কারণে মেগানের বাবা থমাস মার্কেল উপস্থিত থাকতে পারবেন না বলে বৃহস্পতিবার মেগান নিজেই নিশ্চিত করেন। তবে এর আগে মেক্সিকোয় নিজের বাসভবনে থমাস শোবিজ-বিষয়ক জনপ্রিয় ওয়েবসাইট টিএমজেডকে বলেন, তিনি প্রিন্স হ্যারির সঙ্গে তাঁর মেয়ে মেগান মার্কেলের বিয়েতে উপস্থিত থাকবেন না।

প্রিন্স হ্যারি ও মেগান মার্কেল
প্রিন্স হ্যারি ও মেগান মার্কেল

মেয়ের বিয়েতে কেন আসবেন না থমাস মার্কেল? জানা গেছে, মেয়ের বিয়ের জন্য থমাস মার্কেল কী কী প্রস্তুতি নিচ্ছেন, এসব ছবি বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেসব ছবিতে মনে হচ্ছে, মেগানের বাবা যেন জানতেন না যে তাঁর ছবি তোলা হচ্ছে। কিন্তু ডেইলি মেইলের এক খবরে জানা যায়, ছবিগুলো ছিল সাজানো। অর্থের বিনিময়ে মেগানের বাবা এসব ছবির জন্য পোজ দেন। এই ছবি কেলেঙ্কারির পর মেগানের বাবা বিয়েতে না আসার ঘোষণা দিয়েছেন। থমাস জানান, বিয়েতে উপস্থিত হয়ে তিনি তাঁর মেয়েকে বিব্রত করতে চান না।

বিয়ের অনুষ্ঠানে তাহলে কে তাঁর হাত ধরে মঞ্চের ওপর নিয়ে যাবেন, তা নিয়ে গুঞ্জন ওঠে এরপর। পরে ব্রিটিশ রাজপরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রিন্স চার্লসই মেগানকে নিয়ে যাবেন। তবে বেশির ভাগ সময় মেগান একাই হেঁটে যাবেন। এ সময় তাঁর পাশে থাকবেন বন্ধুরা। বাকিংহাম প্যালেস আরও জানিয়েছে, হ্যারির দাদা ৯৬ বছর বয়সী ডিউক অব এডিনবরা প্রিন্স ফিলিপও অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।

এই রাজকীয় বিয়েকে কেন্দ্র করে বেশ আগে থেকেই উইন্ডসর ক্যাসেল এলাকায় সাজসাজ রব উঠেছে। এই বিয়েকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা উইন্ডসর ক্যাসেল ও এর আশপাশের এলাকাকে একপ্রকার দুর্গেই পরিণত করেছে। নবদম্পতিসহ রাজপরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সম্ভাব্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, নবদম্পতিকে স্বাগত জানাতে আজ হাজারো মানুষের ঢল নামবে উইন্ডসর ক্যাসেল এলাকায়।