রাজধানীতে নাটকের নতুন মঞ্চ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর

লালজমিন দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে নাটক মঞ্চায়ন শুরু হলো
লালজমিন দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে নাটক মঞ্চায়ন শুরু হলো

রাজধানীতে সেগুনবাগিচা ও বেইলি রোডকেন্দ্রিক নাটক মঞ্চায়ন হয় বেশি। কারণ, নাটক মঞ্চায়নের জন্য সাধারণত ওই দুই জায়গায় উপযোগী মিলনায়তন আছে। এবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে যাত্রা শুরু হলো নতুন একটি মঞ্চের। মিলনায়তনটি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের। ১১ মে একটি নাট্যোৎসবের মাধ্যমে মঞ্চটি নাটকের জন্য খুলে দেওয়া হলো।

গত বছরের এপ্রিলে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর উদ্বোধন করা হয়। তখন থেকেই মূলত মিলনায়তনটি ব্যবহার করতে দেওয়া হয়। কিন্তু নাটকের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যবহার শুরু হয় এ মাস থেকেই। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, এর আগে বিভিন্ন সংগঠন সেখানে ছোট করে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করেছে। একদম একটি পূর্ণাঙ্গ নাটক মঞ্চায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো এই নাট্যোৎসবের মাধ্যমেই।

চারটি নাটক দিয়ে উৎসবটি শুরু হয়। সেখানে শূন্যন রেপার্টরি নাট্যদলের নাটক লালজমিন, বুয়েট ড্রামা সোসাইটির নাটক লেটার টু এ চাইল্ড নেভার বর্ন, বিবর্তন যশোরের (ঢাকা ইউনিট) প্রযোজনায় নাটক ব্রাত্য আমি মন্ত্রহীন এবং নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের নাটক ওপেন কাপল মঞ্চায়িত হয়।

মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সংস্কৃতির একটা দারুণ সম্পর্ক আছে বলে মনে করেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ও সদস্যসচিব জিয়াউদ্দিন তারিক আলী। নাটকের জন্য মিলনায়তনটি খুলে দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধ হওয়ার একটা অন্যতম কারণ ছিল পাকিস্তানিদের সঙ্গে আমাদের সাংস্কৃতিক পার্থক্য। মুক্তিযুদ্ধে সাংস্কৃতিক কর্মীদেরও ছিল বড় অবদান। তা ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের মতো নাটক বা সাংস্কৃতিক কাজগুলোও একটি সংঘবদ্ধ প্রয়াস। এ কারণে নাটক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ আমাদের কাছে।’

জিয়াউদ্দিন তারিক আলী জঙ্গিবাদকে রুখে দিতে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর গুরুত্বও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘যে জঙ্গিবাদের উত্থান হয়েছে, তা বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে মেলে না। এখানে শুধু নাটক নয়, একটি সাংস্কৃতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক আড্ডারও আয়োজন করতে চাই।’ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে আড্ডাঘর নামে এমন একটি জায়গাও রেখেছেন তাঁরা। তবে এখনো জমে ওঠেনি সেটি। নাটকের প্রদর্শনী হলে সংস্কৃতিমান মানুষদের একটি আড্ডাও শুরু হবে বলে আশা করেন তাঁরা।

মিলনায়তনটির ভাড়া ২২ হাজার টাকা। তবে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক অনুষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের জন্য ভাড়া কমিয়ে ১৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। মিলনায়তনটিতে আছে ২৬৪টি আসন। আছে অত্যাধুনিক আলোকযন্ত্র ও শব্দযন্ত্র। যেকোনো অনুষ্ঠান লাইভ স্ট্রিমিং করারও ব্যবস্থা আছে। আছে পার্কিংব্যবস্থা, সাজঘর। ১৫ দিন আগে সংগঠনের নিজস্ব প্যাডে আবেদন করতে হয়। কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন গৃহীত হলে নির্ধারিত আবেদন ফরমে পুনরায় আবেদন করতে হয়। সাত দিন আগে ভাড়া পরিশোধ করে মিলনায়তনটি ব্যবহার করা যায়।

রাজধানীতে মিরপুর-শ্যামলী-আগারগাঁও অঞ্চলের দিকে নাটকের জন্য উপযোগী মিলনায়তন নেই। এই মিলনায়তনটি হতে পারে এই এলাকার মানুষের জন্য মননশীলতার একটি কেন্দ্র। তারিক আলী বলছিলেন, ‘মোহাম্মদপুর, আগারগাঁও, শ্যামলী, কল্যাণপুর এলাকার তরুণদের একটি মননশীলতার জায়গা হতে পারে এটি।’ মিরপুরের নাট্য সংগঠন সংলাপ গ্রুপ থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ আলম বলেন, এই অঞ্চলে একটি মঞ্চের যাত্রা শুরু হয়েছে, এটা অবশ্যই একটা ভালো খবর। তবে নিয়মিত নাটক মঞ্চায়নের জন্য এটিকে কীভাবে দর্শকের কাছে নিয়ে যাওয়া যায়, সেটি গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম দিকে অন্ততপক্ষে শুক্রবারগুলোতে নিয়মিত প্রদর্শনীর আয়োজন করা যেতে পারে।