কালো পোশাকে বাবাকে ভালো লাগত

প্রীতম হাসান। ছবি: সুমন ইউসুফ
প্রীতম হাসান। ছবি: সুমন ইউসুফ
>এ মাসেই ঈদ। এ মাসেই বাবা দিবস। ঈদ মানে পরিবারের সবার সঙ্গে মিলেমিশে উৎসব পালন করা। কিন্তু সময়ের আগেই যখন পৃথিবী ছেড়ে চলে যান বাবা, তখন সব আনন্দের দিনই বাবা থাকেন অন্তরে। কণ্ঠশিল্পী খালিদ হাসান মিলুর সন্তান প্রীতম হাসান নিজের জীবনের সেই কথাই বলেছেন


আমার আব্বু সংগীতশিল্পী খালিদ হাসান মিলুর সঙ্গে খুব বেশি স্মৃতি নেই। আমি যখন ক্লাস সেভেনে পড়ি, তখন আব্বু মারা যান। তার আগে বেশ কয়েক বছর অসুস্থ ছিলেন। নড়াচড়া করতে পারতেন না। তখন আমরা টঙ্গীতে থাকতাম। এর আগের কিছু স্মৃতি মনে আছে। তবে সেগুলো ঈদের স্মৃতি না। ঈদের চেয়ে বরং আমার সঙ্গে আব্বুর সঙ্গে কাটানো কিছু সুন্দর সময়ের কথা বলি।

আমি তখন হয়তো সবে স্কুলে যাওয়া শুরু করেছি। পূর্ব রামপুরার একটা কিন্ডারগার্টেন স্কুল। এখন আর নাম মনে নেই। স্কুলের প্রথম দিন আমি ক্লাসে গিয়েছি। তখন একজন মিস (শিক্ষক) আমার সঙ্গে একটু খারাপ ব্যবহার করেছিলেন। আমি কাঁদতে কাঁদতে বাসায় গিয়েছিলাম। আব্বু আমার কাছে ঘটনাটা শুনে আমাকে কোলে করে নিয়ে আবার স্কুলে গেলেন। মিসকে বলেছিলেন কেন আমার সঙ্গে এমন ব্যবহার করেন? শুধু তা-ই নয়, ওই স্কুলে আমাকে আর পাঠাননি। আমার বাবা এমনই ছিলেন। তাঁর সন্তানদের কেউ বকা দিলে বা রাগ দেখালে তিনি সহ্য করতে পারতেন না। আমি ছিলাম বাবার নেওটা।

আরও একটা ঘটনা মনে আছে। এটা ঈদের সময়ের হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। অন্য সময়ও হতে পারে। তখন একটু বড় হয়েছি। টু বা থ্রিতে পড়ি। আমার নানাবাড়ি লালমনিরহাট। মা-সহ আমি আর ভাইয়া (প্রতীক হাসান) নানাবাড়ি যাওয়ার পরিকল্পনা করলাম। সেদিন আব্বু আমাদের ঢাকার গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে বাসে তুলে দিয়ে এলেন। আমি জানতাম আব্বু আমাদের সঙ্গে যাবেন। আমি বেশ গদগদ হয়ে আব্বুর কোলে বসে আছি। আব্বু আমাকে মায়ের কোলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু আমি যাব না। একফাঁকে, মায়ের কোলে তুলে দিয়ে বললেন, ‘তুমি একটু মায়ের কাছে যাও আমি তোমার জন্য চিপস নিয়ে আসছি।’ আমি বোকার মতো মায়ের কোলে গেলাম। পরে দেখলাম বাবা গিয়ে গাড়িতে উঠলেন। আমার সে কী কান্না।

স্ত্রী ও দুই ছেলে প্রতীক ও প্রীতমের সঙ্গে প্রয়াত সংগীতশিল্পী খালিদ হাসান মিলু। ছবি: সংগৃহীত
স্ত্রী ও দুই ছেলে প্রতীক ও প্রীতমের সঙ্গে প্রয়াত সংগীতশিল্পী খালিদ হাসান মিলু। ছবি: সংগৃহীত

আসলে, আব্বু যখন অনেক দিন অসুস্থ ছিলেন, তখন ঈদ বা কোনো উৎসব আমাদের আনন্দিত করত না। আব্বু ছাড়া সেগুলো আমাদের কাছে ভালো লাগত না। ঈদের সময় বাবা দেশের বিভিন্ন জায়গায় শো করতে যেতেন। এর ফাঁকে যতটুকু সময় পেতেন, ওই সময়ের মধ্যেই আমাদের নিয়ে বেড়াতে যেতেন। ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় আব্বুর সঙ্গে ঘুরে বেড়িয়েছি। আব্বু বেশির ভাগ সময় কালো পোশাক পরতেন। তাঁকে কালো পোশাকে সুন্দর লাগত। এখনো তাঁর কালো পোশাক পরা ছবিটাই আমার চোখে ভাসে।