'কমলা রকেট' নিয়ে কী বললেন লেখক?
কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামানের ‘মৌলিক’ ও ‘সাইপ্রাস’ নামের দুটি গল্প অবলম্বনে ‘কমলা রকেট’ ছবির চিত্রনাট্য লিখেছেন শাহাদুজ্জামান ও নূর ইমরান মিঠু। ছবিতে অভিনয় করেছেন মোশাররফ করিম, তৌকীর আহমেদ, জয়রাজ, সামিয়া সাঈদ, সেওতি, ডমিনিক গোমেজ, বাপ্পা শান্তনু, সুজাত শিমুল, শহীদুল্লাহ সবুজ ও আবু রায়হান।
কমলা রকেট, একটি স্টিমার। এই স্টিমারে অনেক যাত্রী। নানা পেশার নানা মানুষ। এই স্টিমারের একজন যাত্রী আতিক। ব্যবসায়ী। ইনস্যুরেন্স থেকে টাকা পাওয়ার আশায় নিজের কারখানায় অগ্নিকাণ্ড ঘটিয়েছেন। কিন্তু তা জানাজানি হয়ে যায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখকে ফাঁকি দিয়ে তিনি ঢাকা থেকে স্টিমারে করে মোংলায় যাচ্ছেন। সেখানে বন্ধুর বাসায় আত্মগোপন করে থাকবেন। এই স্টিমারে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে একটি মরদেহ। সেই কারখানার অগ্নিকাণ্ডে নিহত একজন নারী কর্মীর মরদেহ নিয়ে যাচ্ছেন তাঁর স্বামী। এরপর ঘটনা মোড় নেয় ভিন্ন দিকে।
এবার ঈদে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাচ্ছে ‘কমলা রকেট’। এই ছবি নিয়ে নিজের অনুভূতি লিখেছেন শাহাদুজ্জামান।
‘পিঁপড়াবিদ্যা’ চলচ্চিত্রে প্রথম দেখি নুর ইমরান মিঠুকে। পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, মিঠুর মতো অপেশাদার এক অভিনেতাকে তাঁর ছবির প্রধান চরিত্রে নির্বাচন করে একটা চমক সৃষ্টি করেছিলেন। ‘পিঁপড়াবিদ্যা’ ছবির অভিনবত্ব ছিল এর বিষয়ভাবনাতেও। ছবিটি আমার ভালো লেগেছিল। সে ছবিতে মিঠু ভারতীয় পেশাদার সহ-অভিনেত্রীকে পাল্লা দিয়েছে ভালো, এটুকু মনে আছে। তারপর ভুলেই গিয়েছিলাম। একদিন হঠাৎ মিঠু আমার সঙ্গে কথা বলার জন্য দেখা করতে চায়। পরিচয় হয় প্রথমবারে মতো, দীর্ঘক্ষণ কথা হয় তার সঙ্গে। পর্দার বাইরে নেহাতই আটপৌরে, সরল, বিনয়ী মিঠুকে ভালো লাগে। অবাক হই যখন মিঠু জানায়, অভিনয় সে করেছে নেহাত অনুরোধে। তাঁর মূল স্বপ্ন ছবি নির্মাণ করা এবং সেভাবেই সে নিজেকে তৈরি করছে বহুদিন ধরে। সেই সঙ্গে জানায়, সে তার প্রথম ছবি করতে চায় আমার গল্প নিয়ে। কথা বলে টের পাই আমার প্রতিটি গল্প, উপন্যাস তার খুঁটিয়ে গভীরভাবে পড়া, আরও বুঝতে পারি বিশ্ব চলচ্চিত্র বিষয়েও তার জানাশোনা ভালো। মিঠু জানায়, সে আমার ‘মৌলিক ‘এবং ‘সাইপ্রাস ‘নামের ভিন্ন দুটি গল্পকে মিলিয়ে একটি স্ক্রিপ্ট দাঁড় করাতে চায়। আমাকে অনুরোধ করে চিত্রনাট্য লিখে দেওয়ার জন্য।
চলচ্চিত্র আমার বহুকালের আগ্রহের ব্যাপার। চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলন, চলচ্চিত্র নির্মাণ, চলচ্চিত্র নিয়ে লেখালেখি ইত্যাদির সঙ্গে জড়িয়ে আছি দীর্ঘদিন। ফলে চলচ্চিত্র বিষয়ে কোনো প্রকল্পে যুক্ত হতে আমার আগ্রহের কমতি নেই। আমার গল্প নিয়ে ইতিমধ্যে কিছু স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছে। মিঠু একটা পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রই তৈরি করতে চায়। রাজি হই এবং তাঁর সঙ্গে মিলে একটি স্ক্রিপ্ট তৈরি করি। চিত্রনাট্য করতে গিয়ে মূল গল্পের কাহিনি কাঠামো থেকে সরে আসতে হয়েছে অনেকটুকু। ছবির নাম দিই ‘কমলা রকেট’। রকেট নামে পরিচিত ব্রিটিশ প্রবর্তিত কমলা রঙের স্টিমারগুলো এখনো যাত্রী বহন করে বেড়াচ্ছে খুলনা, বরিশাল রুটে। বহুবার গেছি সেই স্টিমারে। ‘কমলা রকেট’ সেই স্টিমারের এক যাত্রার গল্প। একটা জাহাজ যেন একটা ক্ষুদ্র বাংলাদেশ। একটি গল্পের ভেতর অনেকগুলো গল্পের জ্বালামুখ। বাংলাদেশ যে নানা স্তরের ক্রান্তির ভেতর দিয়ে পথ কেটে যাচ্ছে, এটা তারই গল্প।
অসম্ভব পরিশ্রম আর নিষ্ঠার সঙ্গে অল্প সময়ে ছবিটা তৈরি করে ফেলেছে মিঠু। তার মতো নবীন পরিচালকের পক্ষে ইমপ্রেস প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সহায়তা পাওয়া সৌভাগ্যের। ছবিটির চূড়ান্ত ভার্সন দেখার পর আমার মনে হয়েছে, মিঠু আমার গল্পকে সত্যিকার চলচ্চিত্র ভাষায় বদলে দিতে পেরেছে। এটি ক্যামেরায় ধরা নাটক নয়, টেলিফিল্ম নয়, এটি যথার্থ চলচ্চিত্র। একটা দেশে নানা রকম চলচ্চিত্র হওয়া প্রয়োজন। হচ্ছেও বাংলাদেশে। এ ছবির ব্যাপারে আমার পক্ষে নিরপেক্ষ হওয়া মুশকিল। তবে এটুকু বলতে পারি, ‘কমলা রকেট’ কোন আটপৌরে ছবি নয় এর রকম এবং স্বাদ অন্য রকম। ‘কমলা রকেট’ এই ঈদে মুক্তি পাচ্ছে দেশের নানা হলে। মিঠুর জন্য আমার অশেষ শুভকামনা।