পরিণীতির হাসি

হাসি তো ফাঁসি ছবিতে পরিণীতি চোপড়া
হাসি তো ফাঁসি ছবিতে পরিণীতি চোপড়া

‘প্রেম না দিলেও চলে, শুধু হাসি দিলে’—হাসি এতটাই মূল্যবান যে কবিগুরু তাঁর প্রেয়সীর কাছে প্রেম নয়, একটুখানি হাসিই আবদার করেছিলেন। লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির মোনালিসার ঠোঁটের কোণে ধরে রাখা হাসির অপার রহস্য আজও খুঁজে চলেছে শিল্পসাম্রাজ্য। মাধুরী দীক্ষিতের ভুবন ভোলানো মুগ্ধতার আবেশ জড়ানো হাসির জাদুতে লুট হয়েছে অগুনতি পুরুষ-হূদয়। আর পরিণীতির হাসি? দেখুন মশাই, এই হাসিতে কিন্তু ফেঁসে যাবেন আপনিও। অন্তত করন জোহরের প্রোডাকশনে তৈরি বিটাউনের মিষ্টি মেয়ে পরিণীতি চোপড়ার নতুন ছবি হাসি তো ফাঁসির ট্যাগ লাইনটাই তো তাই। আর সেই অতি প্রাচীন বলিউডি প্রবচনকে সঙ্গী করেই বক্স অফিসে সাফল্যের হাসি হেসেছে নতুন পরিচালক ভিনিল ম্যাথুর এ ছবিটি।

মেয়েটির চালচলন অস্বাভাবিক এলোমেলো। কখনো মুখ-হাঁ, আধখানা জিভ উল্টোনো, চোখ পিটপিট করা। কখনো বা মুঠো মুঠো অ্যান্টি-ডিপ্রেসিভ পিল খাওয়ার পাগলামি। মুখে যার অনর্গল আবোল-তাবোল বকবকানি, কিন্তু বিপদের সময় একেবারেই নির্বিকার। খাওয়া-দাওয়ার বেলায়ও তার বিচিত্র রুচি। কিছু না পেলে টুথপেস্টও খায় সে। কিন্তু এরই সঙ্গে মেয়েটি জিনিয়াস, অনেকটা ছিটগ্রস্ত পাগলাটে এক বিজ্ঞানী! বিজ্ঞানচর্চার জন্য বাবার টাকা চুরি করে পালিয়ে যাওয়া মেয়ে সে।

পরিণীতি চোপড়া
পরিণীতি চোপড়া


মেয়েটি অসম্ভব সুন্দরীও। সুন্দরী হলে কি হবে, এহেন মেয়েদের সান্নিধ্য পেতে সাধারণত কেউ উন্মুখ হয় না, সমাজই আলাদা করে রাখে তাদের। আর এই কারণেই জীবনের খুব ছোট ছোট সমস্যা, যেগুলো পরিস্থিতির জন্য জটিল বলে মনে হয়, যখন অনায়াসে সমাধান করে ফেলে মেয়েটি, তখন দর্শকের মুখে হাসি ফিরে আসে। আর এখানেই বিপদ! তার অদ্ভুত অদ্ভুত পাগলামি দেখে মনে মনে মুচকি হাসলেও তখন দর্শক মেয়েটির প্রেমে ফেঁসে যেতে বাধ্য!

ছবির নায়ক নিখিলের (সিদ্ধার্থ মালহোত্রা) সঙ্গেও এই ছবিতে সেটাই হয়। ড্রাগ অ্যাডিক্ট, পাগলি, অন্ধকারে ক্রমে তলিয়ে যাওয়া সুন্দরী নায়িকাকে বাঁচাতে গিয়ে নায়কের নির্বুদ্ধিতা। অতঃপর আগাগোড়া তালে তাল ঠুকতে ঠুকতে সেও ভালোবেসে ফেলে মিতা (পরিণীতি চোপড়া) নামের এই পাগলাটে মেয়েটাকে। একই সঙ্গে কমেডি, নাটকীয়তা ও ত্রিভুজ ভালোবাসার গল্প নিয়ে এমনই এক জেন-ওয়াইয়ের প্রেমকাহিনি বুনেছেন চিত্রনাট্যকার হর্ষবর্ধন কুলকার্নি।

প্রমো দেখেই এই ছবিতে একটা নতুনত্বের গন্ধ পেয়েছিলেন দর্শকেরা। তার ওপর করন জোহরের নাম যে ছবির সঙ্গে থাকে, সেই ছবির প্রতি দর্শকদের একটু বেশিই আগ্রহ থাকে। এই ছবিতে করন শুধু প্রযোজক নন, আছেন অতিথি শিল্পী হিসেবেও। প্রযোজক হিসেবে সঙ্গে আছেন অনুরাগ কশ্যপের মতো সমালোচকপ্রিয় পরিচালক-প্রযোজক। বক্স অফিসে সালমানের জয় হো চলছে, তার পরেও ২৫ কোটি রুপির বাজেটে তৈরি ছবিটি মুক্তির দুই দিনের মধ্যেই ১১ কোটি রুপি ব্যবসা করে ফেলে। করন জোহর উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে দর্শকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছেন, ‘আমাদের এই ছবির আসল ইউএসপি-ই হলো গল্প ও ফ্রেশ জুটি। এই জুটির রসায়নই আগাগোড়া ধরে রেখেছে ছবিটাকে।’

তবে শুধু বক্স অফিস নয়, সমালোচকদেরও প্রশংসা কুড়িয়েছে এই ছবি। প্রশংসিত হয়েছেন ছবির নায়ক-নায়িকা সিদ্ধার্থ ও পরিণীতি চোপড়া দুজনেই। স্টুডেন্ট অব দ্য ইয়ার-এর পর এটা সিদ্ধার্থের দ্বিতীয় ছবি। এই ছবির মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো জুটি বাঁধলেন পরিণীতি-সিদ্ধার্থ। ১৪১ মিনিটের এ ছবিতে আরও অভিনয় করেছেন আদা শর্মা, মনোজ যোশি, শরৎ সাকসেনা প্রমুখ। এই ছবির সংগীত পরিচালনা করেছেন বলিউডের প্রথম সারির সংগীত পরিচালক বিশাল-শেখর জুটি।

 সাজিদুল হক
টাইমস অব ইন্ডিয়া, বলিউড হাঙ্গামা, ওয়ান ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়া টাইমস, জিনিউজ, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, উইকিপিডিয়া অবলম্বনে