ঈদে জমেনি কুমিল্লার সিনেমা হল

‘পাংকু জামাই’ ছবির দৃশ্যে শাকিব খান ও অপু বিশ্বাস
‘পাংকু জামাই’ ছবির দৃশ্যে শাকিব খান ও অপু বিশ্বাস

এবার ঈদে কুমিল্লা নগরের একমাত্র সিনেমা হল রূপালিতে চলছে আবদুল মান্নান পরিচালিত ছবি ‘পাংকু জামাই’। গত শনিবার থেকে দিনে চারটি করে শো চলে ওই হলে। আগামী দুই সপ্তাহ ওই প্রেক্ষাগৃহে টানা চলবে এই সিনেমা। কিন্তু হলের মালিকেরা প্রত্যাশামতো দর্শক পাননি। তবে গতকাল সোমবার নগরের চকবাজার এলাকায় দুপুর ১২টার শো চলার সময় দর্শক অন্য দিনের তুলনায় একটু বেশি ছিল বলে টিকিট বিক্রেতারা জানান। দীর্ঘ বিরতির পর শাকিব খান ও অপু বিশ্বাস জুটির ওই সিনেমা একেবারেই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দর্শকদের মন ভরেছে, এমনটা জানান অন্তত জনা দশেক দর্শক। ভ্যাপসা গরমে ডিসি ও প্রথম শ্রেণি থেকে তৃতীয় শ্রেণিতে বসে সিনেমা দেখতে আসা দর্শকদের কেউ কেউ হলের পরিবেশ নিয়ে মহা ক্ষুব্ধ।

গতকাল রোববার বেলা আড়াইটায় গিয়ে দেখা গেছে, দোতলা এই হলের নিচতলায় টুলে বসে সিনেমা দেখছেন অন্তত ২০ জন। খলনায়ক মিশা সওদাগরের সঙ্গে শাকিব খানের মারামারির দৃশ্যে তালি পড়েছে পরপর কয়েকটি। তবে সিনেমার পর্দা ছিল ঝাপসা।

হলের ব্যবস্থাপক শ্যামল সাহা জানালেন, ‘কোনো রকমে টিকে আছে হলটি। আধুনিক প্রযুক্তি যুক্ত করা সম্ভব না হওয়ায় আগের মতো দর্শক নেই। ঐতিহ্যের কারণে আমরা হলটি ধরে রেখেছি। দর্শক এলে পরিবেশ আরও সুন্দর হতো।’

কেবল রূপালি সিনেমা হল নয়, জেলার আরও ১২টি হলেও দিনে দিনে দর্শক কমে যাচ্ছে। এবার ঈদেও একই অবস্থা দেখা গেছে। হলের মালিকেরা টেকনিশিয়ান, কর্মচারীদের বেতন দিতে অনেক সময় হিমশিম খাচ্ছেন।

জানা গেছে, দর্শক না থাকায় গত ৩২ বছরে কুমিল্লা জেলায় ১১টি প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যে শহরের পাঁচটি প্রেক্ষাগৃহও রয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির প্রসার, কপিরাইট ও পাইরেসির কারণে প্রেক্ষাগৃহগুলো যথেষ্টসংখ্যক দর্শক পাচ্ছে না। এতে করে শতাধিক টেকনিশিয়ান, অপারেটর ও টিকিট বিক্রেতা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।

‘পাংকু জামাই’ ছবির দৃশ্য
‘পাংকু জামাই’ ছবির দৃশ্য

কুমিল্লা জেলার জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা মীর হোসেন আহসানুল কবির বলেন, সময়ের পরিক্রমায় প্রেক্ষাগৃহগুলো জৌলুশ ও দর্শক হারিয়েছে। কুমিল্লার আট উপজেলা ও নগরের ছয়টি মিলিয়ে ২৩টি প্রেক্ষাগৃহ ছিল। এর মধ্যে ১১টি বন্ধ হয়ে গেছে। এগুলো হচ্ছে কুমিল্লা নগরের কান্দিরপাড়ের লিবার্টি, রাজগঞ্জের রূপকথা, কান্দিরপাড়ের দীপিকা ও দীপালি, ছাতিপট্টির মধুমিতা, মুরাদনগর উপজেলার রামচন্দ্রপুর বাজারের শরিফ ও দোলনা, দাউদকান্দির গোমতী ও ঝুমকা, ব্রাহ্মণপাড়ার রূপসী ও বুড়িচংয়ের ছবিঘর প্রেক্ষাগৃহ। তবে চালু আছে কুমিল্লা নগরের চকবাজারের রূপালি, মুরাদনগর উপজেলার কোম্পানীগঞ্জের লাকী ও পূর্ণিমা, গাজীরহাটের আনন্দ, লাকসামের পলাশ ও পড়শী, দাউদকান্দির ঝর্ণা, চান্দিনার পালকি, চৌদ্দগ্রামের পুলক, হোমনার মুন, বুড়িচং কংশনগরের নাজমা ও আদর্শ সদর উপজেলার ময়নামতির গ্যারিসন প্রেক্ষাগৃহ।

বুড়িচং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও একাধিক প্রেক্ষাগৃহ ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বলেন, ‘প্রেক্ষাগৃহে সিনেমা দেখার প্রবণতা দিন দিন কমে যাচ্ছে। এরপরও আমরা ওই ব্যবসা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছি। কিন্তু একে একে প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ হয়ে যাওয়া কোনো শুভ লক্ষণ নয়।’