সত্যি সত্যিই প্রেম দরকার: শাকিব খান

‘একটি প্রেম দরকার মাননীয় সরকার’ ছবির মহরত অনুষ্ঠানে শাকিব খান ও বুবলী
‘একটি প্রেম দরকার মাননীয় সরকার’ ছবির মহরত অনুষ্ঠানে শাকিব খান ও বুবলী

কলকাতা থেকে ঢাকায় ফিরে গতকাল মঙ্গলবার রাতে নতুন একটি ছবির মহরতে অংশ নেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় নায়ক শাকিব খান। ছবির নাম ‘একটি প্রেম দরকার মাননীয় সরকার’। পরিচালক শাহীন সুমন। এই ছবিতে শাকিব খানের নায়িকা বুবলী। প্রথম আলোর কলকাতা প্রতিনিধি জানান, পশ্চিমবঙ্গে এবারের ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবির মধ্যে জিৎ অভিনীত ‘সুলতান-দ্য স্যাভিয়র’ ১৪২টি প্রেক্ষাগৃহে প্রথম ছয় দিনে ১ কোটি ৪৮ লাখ রুপি, শাকিব খানের ‘ভাইজান এলো রে’ ৭৫টি প্রেক্ষাগৃহ থেকে ১ কোটি ৯ লাখ রুপি আর সালমান খানের ‘রেস থ্রি’ ছবিটি আয় করেছে ৬ কোটি ৮১ লাখ রুপি। পশ্চিমবঙ্গের যে কয়টি প্রেক্ষাগৃহে শাকিব খানের ‘ভাইজান এলো রে’ ছবিটি মুক্তি পেয়েছে, ব্যবসায়িক দিক থেকে সালমান খানের ‘রেস থ্রি’র পরই জায়গা করে নিয়েছে তা। নতুন ছবির মহরত আর কলকাতায় নিজের ছবির সাফল্য নিয়ে আজ বুধবার বিকেলে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেন শাকিব খান।

‘একটা প্রেম দরকার মাননীয় সরকার’ কী ধরনের ছবির নাম?
ছবির পরিচালকের কাছে শোনার পর গল্পটা খুব মজার মনে হয়েছে। আমার কাছে মনে হয়েছে, সত্যি সত্যিই একটি প্রেম দরকার। কারণ, আমার চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি বাঁচাতে, একটা প্রেম সত্যিই দরকার। ভালো ছবি নির্মাণের জন্য সত্যি সত্যিই প্রেম দরকার। যাঁরা ভালো ছবি বানাতে চান, সত্যিকার অর্থেই তাঁদের ভালোবাসা দরকার। তাহলে চলচ্চিত্রশিল্পের উন্নয়ন হবে। চলচ্চিত্রের উন্নয়নের জন্য সরকারের উচ্চপর্যায়ে যাঁরা দায়িত্বে আছেন, তাঁদের বলছি, দয়া করে আপনারা চলচ্চিত্রের উন্নয়নের জন্য একটু প্রেম দেখান। চলচ্চিত্রের মানুষগুলো তাঁদের পুরোনো জীবন নতুন করে ফিরে পাক।

শাকিব খান। ছবি: প্রথম আলো
শাকিব খান। ছবি: প্রথম আলো

নতুন ছবির মহরত অনুষ্ঠানে আপনি নতুন নায়ক সিয়ামের জন্য শুভকামনা জানালেন।
আমি চাই সবাই কাজ করুক। কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকুক। খোঁজ নিয়ে জেনেছি, প্রথম ছবি ‘পোড়ামন ২’-তে সিয়াম খুব ভালো অভিনয় করেছেন। দর্শকের মন জয় করেছে, শুধু তা-ই নয়, ছবিটি ব্যবসায়িকভাবেও সাফল্য পেয়েছে। বড় হিসেবে আমার দায়িত্ব নতুনদের উৎসাহ দেওয়া, অনুপ্রাণিত করা। তাই তো আমি সবার সামনে ওর জন্য শুভকামনা জানিয়েছি। আমি বিশ্বাস করি, সবাই মিলে আমরা একটা ইন্ডাস্ট্রি।

আপনি আপনার বড়দের কাছ থেকে কেমন সহযোগিতা পেয়েছেন?
চলচ্চিত্রে একমাত্র রাজ্জাক সাহেবই আমাকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবেসেছেন। সব সময় আমার খোঁজ রেখেছেন। আমার যেকোনো সমস্যায় সমর্থন দিয়েছেন। উৎসাহ দিয়েছেন, অনুপ্রাণিত করেছেন, সাহস জুগিয়েছেন। চলচ্চিত্রে যেকোনো সমস্যায় পড়লে আমিও তাঁর কাছেই ছুটে যেতাম। একজন চলচ্চিত্রকর্মী হিসেবে চলচ্চিত্রের নতুনদের কষ্ট কেমন, তা আমি বেশ ভালোভাবেই উপলব্ধি করি। আমি চাই, যে সমস্যায় আমি পড়েছি, তা যেন আমার পরে আর কাউকে মোকাবিলা করতে না হয়। বাইরে কাজ শুরুর পর ভারতের কলকাতা থেকে নায়ক-নায়িকা ও বড় অভিনয়শিল্পীরা আমাকে যেভাবে প্রশংসা করেছেন, নিজ দেশের বড় আর সমসাময়িকদের কাছে থেকে অতটা পাইনি। শুনেছি, এ টি এম শামসুজ্জামান আংকেল আমাকে নিয়ে ইতিবাচক কথা বলেছেন।

শাকিব খান। ছবি: প্রথম আলো
শাকিব খান। ছবি: প্রথম আলো

আর অন্যদের কাছ থেকে?
আমাদের এখানে শিল্পী শিল্পী কেমন যেন শত্রুর মতো। আরে ভাই, প্রতিযোগিতা তো থাকবে কাজ দিয়ে, পর্দায়। আমরা বাইরের দিকে তাকালেই দেখি, সব তারকা একসঙ্গে চলেন, আড্ডা দেন। এখানে কেমন যেন একজন আরেকজনকে মেরে ওপরে উঠতে চায়। আমি জুনিয়রদের সঙ্গে সম্পর্কটা অন্য রকম করতে চাই। যখনই দেখা হয়, বুকে টেনে নিই, পরামর্শ দিই। ওরাও সবাই মনোযোগ দিয়ে আমার কথা শোনে। শ্রদ্ধা করে। আমি চাই, নতুন প্রজন্ম খোলামনের হয়ে বেড়ে উঠুক। তাদেরকে যেন হিংসা স্পর্শ না করে। সবার মধ্যে সম্পর্কটা যেন ভালো হয়। কাউকে না কাউকে তো এগিয়ে আসতে হয়, রাস্তা তৈরি করতে হয়। আমার ওপর দিয়ে আজ হয়তো অনেক ঝড় যাচ্ছে, গায়ে কাদামাটি লাগছে—ব্যাপার না। কারও প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই। আমি আমার মতো কাজ করে যাব, নতুনদের হাঁটার পথ মসৃণ করে যাব।

কলকাতায় আপনার ‘ভাইজান এলো রে’ ছবির অবস্থান এখন সালমান খানের ‘রেস থ্রি’র পর। কেমন লাগছে?

নিঃসন্দেহে এটা আমার জন্য অনেক আনন্দের। তার চেয়েও বড় বিষয়, এটা কিন্তু পুরো বাংলাদেশের অর্জন। সালমান খান বিশ্বের কয়েকজন সুপারস্টারের একজন। সেখানে তো আমি একেবারেই নতুন। কলকাতায় আমার মাত্র চারটি ছবি মুক্তি পেয়েছে। সেখানে দর্শক আমাকে যে ভালোবাসা দিচ্ছে, তা বর্ণনাতীত। এর সব কৃতিত্ব আমার ভক্তদের। আমি অভিভূত। বাংলাদেশে আমার যেসব ভক্ত রয়েছেন, তাঁরা আমার ছবি নিয়ে এতটাই মেতে থাকেন, নতুন কাজ করার শক্তি বাড়িয়ে দেন। আমার ছবি ভারতে মুক্তি পেয়েছে অথচ বাংলাদেশের ভক্ত-শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রচারণার কমতি ছিল না। মনে হয়েছে, পারলে তাঁরা উড়ে গিয়ে ছবি দেখে। শুনেছি, কিছু ভক্ত ‘ভাইজান এলো রে’ দেখতে ভারতে চলে গেছেন। ঈদ আর পূজা ভারতের বড় উৎসব। এই সময় ছবিঘরগুলো বড় বাজেটের ছবি মুক্তি দেয়। সেখানে আমার ছবি দর্শক দেখছেন, ব্যবসায়িক সফলতা এনে দিয়েছে, অনেক জ্যেষ্ঠ শিল্পী ছবিটি নিয়ে টুইট করেছে।

এবার কত দিন বাংলাদেশে থাকছেন?

এভাবে বলতে পারলেন? আমাকে ছবির কাজে বাইরের দেশে থাকতে হয়। একজন চলচ্চিত্রকর্মী হিসেবে আমি এই দেশের সুনাম বাড়ানোর চেষ্টা করছি। যখন দেশের বাইরের ছবির কাজ করি, মনজুড়ে কিন্তু বাংলাদেশ থাকে। নিজ দেশকে ছবির মাধ্যমে আরও কতটা তুলে ধরা যায়, তা-ই ভাবি। তবে এবার বেশ কয়েক দিন থাকব।

কলকাতায় ‘মাস্ক’ ছবির কাজ করছিলেন।

কিছু কাজ বাকি ছিল, শেষ করে ফিরে এসেছি। কোরবানির ঈদে ছবিটি মুক্তি পাবে। এ ছাড়া এসকে মুভিজের সঙ্গে অনেকগুলো কাজের পরিকল্পনা চলছে। শামীম আহমেদ রনির পরিচালনায় নতুন একটি ছবিতে কাজ শুরু করব।

আপনার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের ‘প্রিয়তমা’ ছবির খবর কী?
‘প্রিয়তমা’ ছবির প্রি-প্রোডাকশনের কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। চেষ্টা করছি সবকিছুর সমন্বয় করে ভালোভাবে কাজটি করার। অনেকেই হয়তো জানেন না, ঠিক কতটা জটিলতার মধ্য দিয়ে আমাকে একটি প্রোজেক্ট সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়। তবে আমি আশাবাদী।