বাবার নামে সামিনার সংগীতনিকেতন

সামিনা চৌধুরী
সামিনা চৌধুরী

বাবা প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী মাহমুদুন্নবী প্রয়াত হয়েছেন তা-ও প্রায় ২৭ বছর হয়ে গেছে। এখনো তাঁর বাবার গাওয়া অনেক গান শ্রোতারা আপনমনে গাইতে থাকেন। বাবার নাম-বাবার সৃষ্টি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে দিতে সংগীত অনুরাগীদের জন্য একটি সংগীতশিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করেছেন কন্যা সামিনা চৌধুরী। প্রতিষ্ঠানটি চালু করতে নাকি বাধ্য হয়েছেন রিয়ালিটি শো ‘ক্ষুদে গানরাজ’ প্রতিযোগিতার অনেক প্রতিযোগীর অভিভাবকদের জোরাজুরিতে। প্রথম আলোর সঙ্গে আজ শুক্রবার আলাপে তেমনটাই জানালেন সামিনা চৌধুরী। 

মাহমুদুন্নবী সংগীতনিকেতন নামের এই প্রতিষ্ঠানে চারজন শিক্ষার্থী নিয়মিত গানের তালিম নিচ্ছেন। আপাতত নিজের বাসায় তালিম দেওয়ার কাজটি করা হচ্ছে বলে জানান সামিনা চৌধুরী।

সংগীতনিকেতন চালুর উদ্যোগ নেওয়া প্রসঙ্গে সামিনা চৌধুরী বলেন, ‘এক দশক আগে আমি যখন “ক্ষুদে গানরাজ” অনুষ্ঠানের বিচারকাজ শুরু করি, তখন থেকেই অনেক বাচ্চার অভিভাবক আমাকে আলাদাভাবে সংগীতশিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালুর অনুরোধ করেন। একটা পর্যায়ে আর অনুরোধ নয়, আমার ওপর জোরাজুরি করতে থাকেন। অভিভাবকদের মত, আমার সংস্পর্শে এলে তাঁদের বাচ্চাদের মঙ্গল হবে। কিন্তু গান শেখাতে হলে তো অনেক সময় দিতে হয়। আমি তো স্টেজ শো, বিদেশে সফর আরও কতশত ব্যস্ততায় সময় করতে পারছিলাম না। অভিভাবকদের জানিয়েও দিয়েছিলাম, পারব না। বাসায় যেসব বাচ্চাদের শেখাতাম, এদের অভিভাবকদেরও জোরাজুরি ছিল, যেন একটা প্রতিষ্ঠান চালু করি। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হলাম।’

বাবা মাহমুদুন্নবীর সঙ্গে সন্তানেরা (সবার বাঁয়ে সামিনা চৌধুরী)
বাবা মাহমুদুন্নবীর সঙ্গে সন্তানেরা (সবার বাঁয়ে সামিনা চৌধুরী)

এখন পর্যন্ত যত বাচ্চার অভিভাবকের সঙ্গে দেখা হয়েছে, সবার নাকি একটাই চাওয়া, ‘আপা, আমার বাচ্চাটা শুধু আপনার কাছে আসবে। আমাকে এ-ও বলেন, আপনার কাছ থেকে একটু শিখুক এটা কি আপনি চান না? ভাবলাম, এতই যখন সবাই চাইছে, দেখি না চেষ্টা করে।’ এরপর একটি সুন্দর নাম ভাবতে থাকলেন তিনি। বললেন, ‘একটি সংগীতশিক্ষা প্রতিষ্ঠান যখন চালু করব, একটা সুন্দর নাম দেওয়া দরকার। আমার কাছে বাবার নামের চেয়ে সুন্দর আর কিছুই মনে হয়নি। তাই আব্বার নামটাই বেছে নিলাম।’

সামিনা চৌধুরী জানান, ঢাকার আজিমপুরে তাঁর বাবা মাহমুদুন্নবীর নামে অনেক আগে ‘আধুনিক সংগীতনিকেতন’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। সেই স্কুলটি এখনো আছে, তবে অন্যরা চালায়।
কারা ‘মাহমুদুন্নবী সংগীতনিকতন’-এ গান শিখতে পারবেন জানতে চাইলে সামিনা চৌধুরী বলেন, ‘এখানে সব বয়সীরা গান শিখতে পারবেন। যোগ্যতা একটাই, যাদের গলায় সুর আছে। বর্তমানে এখনে চারজন শিক্ষার্থী গান শিখছে।’

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে অনেক শ্রোতাপ্রিয় গানে কণ্ঠ দিয়ে মাহমুদুন্নবী দর্শকহৃদয়ে আজও অমর হয়ে আছেন। তাঁর গাওয়া গানের মধ্যে ‘আমি সাত সাগর পাড়ি দিয়ে’, ‘গানেরই খাতায় স্বরলিপি লিখে’, ‘এক অন্তবিহীন স্বপ্ন ছিল’, ‘আমি তো আজ ভুলে গেছি সবই’, ‘মনে তো পড়ে না কোন দিন’, ‘সুরের ভুবনে আমি আজো পথচারী’, ‘বড় একা একা লাগে তুমি পাশে নেই বলে’, ‘তুমি কখন এসে দাঁড়িয়ে আছো আমার অজান্তে’, ‘গীতিময় এই দিন সেই দিন চিরদিন রবে কি’, ‘ওগো মোর মধুমিতা’, ‘আমি ছন্দহারা এক নদীর মতো ছুটে যাই’, ‘আয়নাতে ঐ মুখ দেখবে যখন’, ‘ও মেয়ের নাম দিব কি’ উল্লেখযোগ্য।