আমি জীবনে অনেক ভুল করেছি

>

বলিউডকে একসময় একের পর এক হিট ছবি দিয়েছেন বলিউড অভিনেত্রী মনীষা কৈরালা। এরপর তাঁকে দেখা গেছে জীবন-মৃত্যুর যুদ্ধে। ক্যানসার বাসা বেঁধেছিল মনীষার শরীরে। তবে সেই যুদ্ধে জয়ী হন এই বলিউড সুন্দরী। দীর্ঘ কয়েক বছর পর আবার বড় ব্যানারের ছবিতে মনীষা। রাজকুমার হিরানী পরিচালিত সঞ্জু ছবিতে নার্গিস দত্তের ভূমিকায় তিনি। ছবি মুক্তির আগে রাজকুমার হিরানীর অফিসে মনীষা কৈরালার সঙ্গে এক আলাপচারিতায় ছিলেন প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধি দেবারতি ভট্টাচার্য। এই আলাপে উঠে এল নার্গিস, রণবীর, ঋতুপর্ণ, ইরফানসহ আরও অনেক কথা।

মনীষা কৈরালা
মনীষা কৈরালা

প্রশ্ন: কিংবদন্তি অভিনেত্রী নার্গিস দত্তের চরিত্রে অভিনয় করলেন। কতটা রোমাঞ্চিত?

মনীষা: সত্যি, ভারতীয় ছবির জগতের কিংবদন্তি অভিনেত্রী নার্গিস দত্তের চরিত্রে অভিনয় করা আমার কাছে সেরা প্রাপ্তি। আমি ভীষণই রোমাঞ্চিত।

প্রশ্ন: শুনেছি, বোম্বে ছবির পর সুনীল দত্ত আপনার মধ্যে নার্গিসের ছায়া দেখেছিলেন। আর এটাই কি পর্দায় নার্গিস হওয়ার যোগসূত্র?

মনীষা: আমার মনে হয় না এটা কখনোই যোগসূত্র। আসলে রাজু জি (রাজকুমার হিরানী) জানতেনই না এ বিষয়টা। আমি পরে তাঁকে বলেছিলাম যে বোম্বে ছবিটি দেখে আমাকে সুনীল দত্ত একটা চিঠি লিখেছিলেন। আর এই চিঠিতে দত্ত স্যার উল্লেখ করেন যে, আমার মধ্যে নার্গিস জিকে তিনি দেখেছেন। আমি জানি না রাজু জি আমাকে কেন নার্গিসের চরিত্রের জন্য নির্বাচন করেছেন। সেটা একমাত্র তিনি বলতে পারবেন। আমাকে মুকেশ ছাবারিয়া ফোন করে বলেন, নার্গিস জির চরিত্রে অভিনয়ের কথা। আমি তখন নেপালে। প্রথমে দ্বিধায় ছিলাম। নেপাল থেকে মুম্বাইয়ে ফিরে আসার পর রাজু জি আমাকে সব ব্যাখ্যা করেন। তখন আমি চরিত্রটা করতে রাজি হই।

প্রশ্ন: পর্দায় নার্গিস হয়ে ওঠার জন্য কী কী করেছিলেন?

মনীষা: আমি চোখ বুজে শুধু রাজু জির কথা মেনে চলেছিলাম। আমি নিজে কোনো কিছু করিনি। উনি এই অফিসেই আমাকে নার্গিস জির ওপর কিছু তথ্যমূলক ভিডিও দেখান। আসলে রাজু জির নিজস্ব প্রস্তুতি ছিল। তাঁর ওপর আমি পুরোটাই ছেড়ে দিয়েছিলাম।

প্রশ্ন: ‘সঞ্জু’ ছবিতে এই চরিত্রটা করা আপনার জন্য কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল? আবার বায়োপিকে অভিনয় করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন?

মনীষা: ভীষণই চ্যালেঞ্জিং ছিল। একজন অভিনয়শিল্পীকে রোজই নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে হয়। গত বছর আমার অভিনীত ছবি ডিয়ার মায়া মুক্তি পায়। এ বছর লস্ট স্টোরিজ মুক্তি পেল এবং সঞ্জুও মুক্তি পেয়েছে। এরপর প্রস্থান ছবিতে কাজ করছি। সব ভিন্ন ধারার চরিত্রে অভিনয় করেছি। আর আমার মনে হয় এখন হিন্দি ছবির জন্য দারুণ এক সময়। এখন কনটেন্টের ওপর বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। খুব ভালো ভালো ছবি হচ্ছে। পরিচালক, অভিনেতা, লেখক—সবার জন্য সোনালি সময়। আর আবার বায়োপিকে অভিনয় করব কি না, সেটা এখনই বলতে পারব না। চরিত্র এবং চিত্রনাট্যের ওপর সবকিছু নির্ভর করছে। আর আমি সব সময় চরিত্রকে বেশি গুরুত্ব দিই।

প্রশ্ন: পর্দার ‘সঞ্জু’ রণবীর কাপুরের সঙ্গে অভিনয় করলেন। আর বাস্তবের সঞ্জুর সঙ্গেও একাধিক ছবি করেছেন। এই দুই অভিনেতার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?

মনীষা: রণবীর দারুণ এক ছেলে। ভীষণই ভদ্র ব্যবহার ওর। রণবীর খুবই প্রতিভাবান অভিনেতা এবং কঠোর পরিশ্রমী। খুব ভালো লেগেছে ওর সঙ্গে কাজ করে। আর সঞ্জয় দত্ত তো ইন্ডাস্ট্রির সবার আদরের ‘সঞ্জু বাবা’। আমাদের দুনিয়ায় সবাই ভালোবাসে ওকে। সঞ্জু হাসি-মজায় মাতিয়ে রাখতে পারে। আমরা খুব মজা করে কাজ করতাম। তবে সঞ্জুকে সিরিয়াস হতে কম দেখেছি। আর ভীষণই ভালো মনের মানুষ ও। সঞ্জয় ছোটদের যেমন ভালোবাসা দিতে পারে, তেমনি বড়দের সম্মান দিতে পারে। ওর জীবনে যখন সমস্যা এসেছিল আমরা সবাই ওর জন্য প্রার্থনা করতাম। তবে সঞ্জয় কখনো সেটে এসব নিয়ে আলোচনা করত না।

 প্রশ্ন: আপনাকে প্রথম নার্গিস দত্তের রূপে দেখে সঞ্জয়ের কী প্রতিক্রিয়া ছিল?

মনীষা: সঞ্জয় আমাকে পোস্টারে প্রথম দেখে। ও আমায় বলেছিল যে নার্গিস জির সঙ্গে আমার চেহারার প্রচুর মিল আছে।

প্রশ্ন: শুধু পর্দায় নয়। জীবনযুদ্ধেও আপনি বড় চ্যালেঞ্জ নিয়ে জয়ী হয়ে এসেছেন। এত শক্তি কোথা থেকে পেয়েছিলেন?

মনীষা: এই সময়ে মানুষ কোথাও না কোথাও থেকে শক্তি পেয়ে যায়। আমার যখন ক্যানসার হয়েছিল, আমিও এই রোগের সঙ্গে যুদ্ধ করার শক্তি পেয়েছি। আমার পরিবার, ভক্ত, শুভানুধ্যায়ী, ডাক্তার সবাই আমাকে শক্তি জুগিয়েছেন।

প্রশ্ন: আপনার জীবন আলো-অন্ধকারে ভরা। আপনাকে নিয়ে বায়োপিক হতে পারে বলে মনে হয় না?

নার্গিস দত্তের চরিত্রে অভিনয় করেছেন মনীষা কৈরালা
নার্গিস দত্তের চরিত্রে অভিনয় করেছেন মনীষা কৈরালা

মনীষা: এ ব্যাপারে এখনো কিছু ভাবিনি। তবে পরে হয়তো হতে পারে।

প্রশ্ন: ‘তুলসী’ ছবিতে আপনার সহ-অভিনেতা ইরফান খান আপনারই মতো জীবন-মৃত্যুর যুদ্ধে নেমেছেন। তাঁর এই সংগ্রামকে কীভাবে দেখছেন?

মনীষা: আমি রোজ ইরফানের জন্য প্রার্থনা করি। ওর এবং পরিবারের জন্য খুবই কঠিন সময়। কদিন আগে ইরফান খুব সুন্দর একটা আর্টিকেল সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে। যেখানে জীবনের চরম সত্যগুলো ও তুলে ধরেছে। ইরফান দুর্দান্ত মানুষের পাশাপাশি অসাধারণ এক অভিনেতা। আমি চাই ও পুরোপুরি সুস্থ হয়ে আবার ওর দুনিয়ায় ফিরে আসুক। আর আমাদের আরও ভালো ভালো ছবি উপহার দিক।

প্রশ্ন: অনেকের মতে, সঞ্জয় দত্ত কোনো মহান ব্যক্তিত্ব নন যে তাঁর ওপর বায়োপিক হয়েছে। এ ব্যাপারে আপনার কী অভিমত?

মনীষা: সব সময় মহান ব্যক্তিত্বের ওপরই বায়োপিক হবে তার কোনো মানে নেই। সঞ্জয়ের জীবনের কাহিনি ভীষণই ইন্টারেস্টিং। ওর জীবন ভুলে ভরা। আর সঞ্জুর জীবন আর পাঁচজনের জীবনের মতো নয়। আর এই ছবির মাধ্যমে কখনোই তাকে মহান হিসেবে দেখানো হয়নি। সঞ্জু ছবির মাধ্যমে বাবা-ছেলে, দুই বন্ধুর সম্পর্কের কথা তুলে ধরা হয়েছে। এটা একজন মানুষের জীবনের খুব সুন্দর একটা গল্প। তাই সঞ্জুকে নিয়ে বায়োপিক বানানো কোনো অন্যায় নয়। এটা নিয়ে অযথা জটিলতা করার কোনো মানে হয় না।

প্রশ্ন: প্রায় তিন দশক ধরে আপনি হিন্দি ছবির দুনিয়ায়। কতটা পরিবর্তন দেখেছেন এই দুনিয়ায়?

মনীষা: আমার মনে হয় এই প্রজন্ম অনেক বেশি ফোকাসড এবং পেশাদার। আমি এই প্রজন্মের অভিনেতাদের খুবই পছন্দ করি।

প্রশ্ন: এই প্রজন্মের অভিনেতাদের উদ্দেশে কিছু বলতে চান?

মনীষা: আমি কখনোই উপদেশে বিশ্বাস করি না। মানুষের অভিজ্ঞতাই তাকে ধীরে ধীরে সবকিছু শিখিয়ে দেয়। আমিও জীবনে অনেক ভুল করেছি। আর এই ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়েছি।

প্রশ্ন: ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘খেলা’ ছবিতে আপনি অভিনয় করেছেন। ঋতুদার কথা বলতে আপনার স্মৃতিতে কী আসে?

মনীষা: ঋতুদার অভাব ভীষণভাবে বোধ করি। তিনি দারুণ একজন মানুষ ছিলেন। ঋতুদার জীবন একটা কবিতার মতো ছিল। তিনি আপাদমস্তক শিল্পী মানুষ। শুধু তাঁর ছবিতে নয়, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ছিল শিল্পের ছোঁয়া। ঋতুদার রুচিবোধ ছিল অসাধারণ। যার পরিচয় তাঁর সব ক্ষেত্রে পাওয়া যেত।