নাটক ও টেলিছবিগুলো নির্মিত হচ্ছে লাগামহীনভাবে

একরাশ নীল নাটকে মায়া সরকার ও ইরফান সাজ্জাদ
একরাশ নীল নাটকে মায়া সরকার ও ইরফান সাজ্জাদ

অনেক দিন পর দেশ টিভিতে সরাসরি প্রচারিত গানের অনুষ্ঠান প্রিয়জনের গান দেখার সুযোগ হলো। লাবণ্যের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানটি প্রচার হলো ২৯ জুন শুক্রবার বেলা ৩টায়। এবারে শিল্পী ছিলেন অনিমা মুক্তি গোমেজ। অনিমা মুক্তি গোমেজ মূলত লোকসংগীত শিল্পী। তিনি একটানা দুই ঘণ্টারও অধিক সময় গান করেছেন। সবগুলোই লোকসংগীত। তিনি বিভিন্ন শিল্পীর বিভিন্ন ধারার লোকসংগীত পরিবেশন করার চেষ্টা করেছেন, এটি খুব ভালো লেগেছে। কেননা, এর মধ্য দিয়ে দর্শক-শ্রোতা আমাদের লোকসংগীতের বৈচিত্র্য অনুধাবনের সুযোগ পেয়েছেন। যেমন তিনি লালন সাঁইয়ের ‘বাড়ির কাছে আরশিনগর’ দিয়ে শুরু করেছেন, তারপর একে একে পরিবেশন করেছেন জসীমউদ্‌দীনের ‘আমার হাড় কালা করলাম রে’, রাধারমণের ‘জলের ঘাটে দেইখ্যা আইলাম কী সুন্দর শ্যাম রাই’, শাহ আবদুল করিমের ‘দরদিয়া রে বন্ধু দরদিয়া রে’, আব্বাস উদ্দীনের ‘ওকি ও বন্ধু কাজল ভ্রমরা রে’ ইত্যাদি। তাঁর কণ্ঠ খুব আকর্ষণীয় না হলেও আন্তরিক উপস্থাপনা ও দরদি পরিবেশনায় গানগুলো দর্শকদের কাছে বেশ ভালো লেগেছে। অনুষ্ঠানটি হয়েছে উপভোগ্য। অনুষ্ঠান চলাকালে তাঁর অগ্রজ শিল্পীদের মধ্যে ফেরদৌসী রহমান, ইন্দ্রমোহন রাজবংশী, বুলবুল মহলানবীশ প্রমুখ ফোন করে শুভাশীষ জানিয়েছেন, এটিও ভালো লেগেছে। আমাদের পক্ষ থেকেও শিল্পীর জন্য রইল অফুরন্ত শুভকামনা।

২৮ জুন রাত ১১টায় এটিএন-এ প্রচারিত হলো টেলিছবি মনিহার। রচনা মান্নান হীরা। পরিচালনা করেছেন বি ইউ শুভ। অভিনয় করেছেন অরুণা বিশ্বাস, মৌসুমী হামিদ, তানভীর, নওবিমা প্রমুখ। টেলিছবির গল্পটি সংক্ষেপে এ রকম—আবির তার প্রেমিকাকে নিয়ে বেড়ানোর উদ্দেশ্যে আসে অরুণা বিশ্বাসের গেস্ট হাউসে। একই সময় পোশাককর্মী ও তার তালাকপ্রাপ্ত মেয়ে মৌসুমীও আসে ঢাকা থেকে। স্থানীয় মাস্তান ও মৌসুমীর তালাক দেওয়া স্বামী রাজা মা ও মেয়েকে চাপ দিতে থাকে মৌসুমীর মনিহারটি তাকে দেওয়ার জন্য। কিন্তু মৌসুমী জানায়, ওই হার সে বিক্রি করে দিয়েছে তার কারখানার মালিকের কাছে। এদিকে তার মায়ের অতিথি আবিরই যে সেই মালিক, তা জানে না সে। আবির মনিহারটি উপহার দেয় তার প্রেমিকাকে। একদিন মেয়েটির গলায় মনিহার দেখে মা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। তারপর বালিশের নিচ থেকে সে লুকিয়ে এক রাতের জন্য হারটি নিয়ে যায় মেয়ের গলায় পরানোর জন্য। মেয়ে বিছানা ঝাড়তে গিয়ে মনিহার দেখে আঁতকে উঠলে মা কেঁদে বলে, ‘আমি চোর না।’ এই হলো গল্প।

টেলিছবিটি দেখার পর কী মন্তব্য লিখব, সেটাই বুঝতে পারছিলাম না। যেমন দুর্বল গল্প, তেমনি দুর্বল চিত্রনাট্য, সংলাপ এবং অভিনয়। গল্পের কোনো আগামাথা নেই, ঘটনার কোনো পারম্পর্য নেই, লোকেশনেরও কোনো বিশ্বস্ততা নেই। যে গেস্ট হাউস দেখানো হয়েছে তা একবারও গেস্ট হাউসের মতো মনে হয়নি। অরুণা বিশ্বাসই মালিক, কেয়ারটেকার এবং বাবুর্চি। এত বড় গেস্ট হাউস অথচ আর কোনো কর্মচারী নেই। আবার আবিররা বেড়াতে এসেছে, অথচ বেড়ানোর কোনো দৃশ্য নেই। আবার যে মনিহার নিয়ে গল্প এবং গল্পের নামকরণ, তা দেখে হাস্যকরই মনে হয়েছে। মাঝে মাঝে কিছু টেলিছবি ও নাটক দেখে মনে হয়, এগুলো কীভাবে নির্মিত হচ্ছে, কীভাবে প্রচার হচ্ছে, তা যেন দেখার কেউ নেই। বলা যায়, মনিহার টেলিছবিটি তারই অনন্য উদাহরণ।

এবারে নাটক। ২৯ জুন রাত ১০টায় একুশে টিভিতে প্রচারিত হলো এ সপ্তাহের নাটক একরাশ নীল। রচয়িতার নাম নেই, নির্মাতা সঞ্জয় কান্ত। অভিনয় করেছেন সাদিয়া ইসলাম মৌ, আবদুল্লাহ রানা, ইরফান সাজ্জাদ, মায়া সরকার প্রমুখ। নাটকের শুরুতেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছে ইরফানের প্রেমিকা শান্তা, কিন্তু ইরফান তাকে বিয়ে করতে চাইছে না। আবার বাড়িতেও পাঠাতে পারছে না। এসব নিয়ে যখন তারা পথের মধ্যে বচসা করছে, তখন মৌ পাশের বাসার বারান্দা থেকে তা শুনে তাদের নিজ বাসায় ডেকে নেয়। মেয়েটাকে সাময়িক আশ্রয় দেয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে মৌয়ের অনৈতিক ক্রিয়াকর্ম ও জীবনযাপন দেখে মেয়েটি ক্ষুব্ধ ও রাগান্বিত হয়ে বাসা ছেড়ে চলে যেতে চায়। কিন্তু তার প্রেমিক সাজ্জাদ তাকে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। কারণ ইতিমধ্যে তার চাকরি চলে গেছে। এরপর মেয়েটির সঙ্গে ক্ষমতার চ্যালেঞ্জে মৌ চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ইরফানকে বশ করে। তখন মেয়েটি আত্মহত্যা করতে গেলে আবার মৌই তাকে রক্ষা করে। এরপর মৌ তার প্রেমিক রানাকে দিয়ে ইরফানের চাকরি পুনঃস্থাপন ও মেয়েটির সঙ্গে তার বিয়ের আয়োজন করে।

এককথায় বলা যায়, গল্পের বিষয়টি ভালোই ছিল, কিন্তু বুননটি দুর্বল। আর চিত্রনাট্যটি ছিল দুর্বলতর। কিছু কিছু বিষয় তো রীতিমতো হাস্যকর মনে হয়েছে। যেমন শিক্ষিত সমাজের একটি মেয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসে পথের মধ্যে দাঁড়িয়ে বিয়ের জন্য দর-কষাকষি করছে, কোনো পূর্বপরিকল্পনা নেই। খুবই হাস্যকর। আবার ছেলেটির চাকরি আছে, তবু সে বিয়ে করতে চাইছে না, কারণ চাকরি পারমানেন্ট হয়নি, এটা কোনো যুক্তি হলো! আবার দুটি ছেলেমেয়ের জীবনে এত বড় সংকট সংলাপে জানা যায় এতে তাদের পরিবারেও যথেষ্ট ভূমিকা আছে, অথচ তাদের কোনো উপস্থিতি নেই। এভাবে দর্শকের অনেক প্রশ্ন এবং কৌতূহল অমীমাংসিতই থেকে গেছে। শেষে গল্প সম্পর্কে শুধু এটুকু বলব, গল্পটি গতানুগতিক হলেও যথেষ্ট শক্তি ও সম্ভাবনা ছিল, কিন্তু নির্মাতা তার সন্ধানই পাননি।