প্রিয়জন হারিয়ে ফেলার বেদনা এই সময়েও প্রাসঙ্গিক

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী

নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এখন হাতে বেশ কিছু কাজ নিয়ে অপেক্ষায় আছেন। তাঁর বনানীর বাসায় সেসব নিয়ে আলাপ হলো। জানালেন, ১১ বছর পর আবার টেলিভিশনের জন্য নাটক নির্মাণ করবেন। সেটা দেখা যাবে সামনের ঈদেই। আনিসুল হকের লেখা আয়েশামঙ্গল উপন্যাস অবলম্বনে তিনি বানাবেন নাটকটি। এর আগেও এই উপন্যাস নিয়ে কাজ করেছেন ফারুকী। আবারও সেই একই গল্প দিয়ে তিনি স্পর্শ করতে চান দর্শকমন। পাশাপাশি সিনেমা নিয়ে তো কথা হলোই।

১১ বছর পর টেলিভিশনে ফিরছেন। কেন?
প্রথম কারণ, মাথায় অনেক গল্প খেলা করে, যার সবই তো সিনেমা বানানো হবে না। তাই একটি টিভি চ্যানেলের সঙ্গে বেশ কিছুদিন ধরে কথা হচ্ছিল। ব্যাটে-বলে মিলে গেল, কাজ শুরু করে দিলাম। এখন খুবই আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি টেলিভিশনের দর্শকের সঙ্গে ড্রইংরুমে মোলাকাতের।

এ সময়ে আবারও ‘আয়েশামঙ্গল’ নিয়ে কাজ করার প্রয়োজনীয়তা কেন বোধ করলেন?
আমার সিনেমা বা টেলিভিশন প্রযোজনাগুলো যদি খেয়াল করেন তাহলে দেখবেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আমার পক্ষপাতিত্ব সর্বহারার প্রতি, পরাজিত অথবা পরাজয়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতি। বিজয়ীর প্রতি আমি কোনো টান বোধ করি না। আয়েশামঙ্গল-এ একজন নারীর কাছ থেকে হুট করেই গায়েব করে দেওয়া হয় তাঁর স্বামীকে। তারপর তাঁকে রাষ্ট্রের মতো বিশাল একটা শক্তির মুখোমুখি দাঁড়াতে হয়। আর রাষ্ট্রের মুখোমুখি যখন আপনাকে দাঁড়াতে হয়, তখন তো আপনাকে পরাজয়ের মুখোমুখিই দাঁড়াতে হয়। আমি দেখতে চাই সেখান থেকে একজন একা মানুষ কীভাবে ভীষণ শক্তিশালী হয়ে ওঠেন, কীভাবে ঘুরে দাঁড়ান। প্রিয়জন হারিয়ে ফেলার এই বেদনা তো এই সময়েও প্রাসঙ্গিক। কদিন আগে কাউন্সিলর একরামকে যে তাঁর প্রিয়জনেরা হারিয়ে ফেললেন, তার বেদনা আর আমাদের গল্পের আয়েশার বেদনা তো একই। ঘটনাচক্রে একরাম সাহেবের স্ত্রীর নামও আয়েশা কিন্তু।

টেলিভিশনের জন্য আবার কাজ করতে যাচ্ছেন। কোনো বিশেষ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে?
আমার সব কাজেই আমি একই সঙ্গে উদ্দীপ্ত এবং নার্ভাস থাকি, যেমন শিশুরা বৃত্তি পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগের রাতে বোধ করে। ফলে সেই অর্থে এটা আলাদা কোনো চ্যালেঞ্জ না। যদি টেলিভিশনে ফেরা অর্থে বলে থাকেন, তাহলে বলব, কাজটা তো একই। তা ছাড়া গত বছরই ছবিয়াল রিইউনিয়ন সিরিজ শোটা ডেভেলপ করেছি। এই এক বছরে ‘হাওয়াই মিঠাই প্রেমের গল্প’ থেকে সরে এসে মধ্যবিত্ত জীবনের গল্প যে হঠাৎ করে ট্রেন্ড হয়ে উঠল টেলিভিশনে, সেটার পেছনে আমাদের সেই সিরিজের আদনান আল রাজিব পরিচালিত বিকাল বেলার পাখির কিছুটা হলেও ভূমিকা আছে। ফলে টেলিভিশন থেকে একদমই যে দূরে ছিলাম, তা নয়।

সিনেমা নিয়ে নতুন পরিকল্পনা কী? শনিবার বিকেল কবে আসছে? শনিবার বিকেল-এর পর কী?
শনিবার বিকেল ছবির কাজ প্রায় শেষ। এটা এই পর্যন্ত করা আমার কাজের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন ছিল। শুধু কারিগরি দিক থেকেই না, গল্পের দিক থেকেও। আমরা অসাধারণ একটা শিল্পী-কুশলী দল পাওয়ায় পুরো কাজটা খুব ভালোভাবে শেষ করা গেছে। আশা করি, এই বছরই মুক্তি পাবে। এরপর জানুয়ারি থেকে আবার নতুন ছবির শুটিং।

নিজের ব্যাপারে যে সমালোচনা সবচেয়ে বেশি শুনেছেন।
সব শেষ করে দিল ছেলেটা।

‘টেলিভিশন’, ‘পিঁপড়াবিদ্যা’ নাকি ‘ডুব’-ফারুকীর সবচেয়ে পাকা কাজ কোনটি?
যদি দেশের এবং বিশ্বের শীর্ষ সমালোচকদের রায়ের দিকে তাকাই, তাহলে অবশ্যই ডুব। আমার বিবেচনায়ও ডুব সিনেমাটিক্যালি অনেক পরিণত। তবে টেলিভিশন-এর সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত আবেগের যোগ থাকায় এটার প্রতি একধরনের পক্ষপাতিত্ব আছে।

কোন ধরনের মানুষ থেকে আপনি ১০০ হাত দূরে থাকেন?
মুখোশ পরা মানুষ থেকে দূরে থাকি।