নেপালের শিল্পীদের নাচে মুগ্ধ দর্শক

নেপালের শিল্পীদের নাচে মুগ্ধ হয়েছে দর্শক
নেপালের শিল্পীদের নাচে মুগ্ধ হয়েছে দর্শক

নেপালের সঙ্গে বাংলাদেশের ঐতিহ্য আর সংস্কৃতিতে কিছুটা মিল আছে। আবার দুই দেশের সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মধ্যে কিছু পদ্ধতিগত পার্থক্য আছে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ও নেপালের সমসাময়িক শিল্পমাধ্যমের সম্মিলন ঘটেছে। এখানে দুই দেশের সংস্কৃতির মিল আর অমিলের বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে।

এই আয়োজনের উদ্দেশ্য, দুই দেশের বন্ধুত্ব। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের সময় থেকেই বন্ধু হয়ে পাশে আছে নেপাল। এখনো দুই দেশের বন্ধুত্ব অক্ষুণ্ন। নেপাল দূতাবাস গতকাল বৃহস্পতিবার সেই বন্ধুত্ব আবারও উদ্‌যাপন করেছে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে। দুই দেশের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক পরিবেশনার এই আয়োজন করা হয় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় সংগীত, আবৃত্তি ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে।

মঞ্চের একপাশে প্রদীপ প্রজ্বালন করে আয়োজনের উদ্বোধন করেন নেপালের রাষ্ট্রদূত অধ্যাপক চুপ লাল ভূষাল ও ডেপুটি চিফ অব মিশন ধন বাহাদুর অলি। উদ্বোধনী পর্বের সংক্ষিপ্ত আনুষ্ঠানিকতার পর মুগ্ধ হওয়ার পালা। শুরুতেই নেপালের ঐতিহ্যবাহী কুমারী নৃত্য নিয়ে মঞ্চে আসেন সুশীলা থাপা। নৃত্যের ছন্দে তিনি তুলে ধরেন স্রষ্টার প্রতি আনুগত্য। পরে নেপালের দুই শিল্পী পরিবেশন করেন কউরা নৃত্য, টপ্পা নৃত্য, ভোজপুরি নৃত্য ও জাউর নৃত্য। এর মধ্যে কউরা নৃত্য মূলত নেপালের আদিবাসী নাচ, যে নৃত্যের ছন্দে শিল্পীরা তুলে আনেন নেপালের মাগার, গুরাং ও দূরা সম্প্রদায়ের বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান। আর টপ্পা নৃত্যে নেপালের মাগার, ছেত্রী ও ঠাকুরি সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়। ভোজপুরি নৃত্যে ভোজপুরিদের উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা তুলে ধরেন শিল্পীরা। তবে দর্শকের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল জাউর নৃত্য। উপস্থাপনার আগে জানানো হয়, এটি নেপালের সবচেয়ে জনপ্রিয় নৃত্যধারার একটি। জাউর নৃত্যে শিল্পীরা তুলে ধরেন নেপালের স্থানীয় সংস্কৃতির বিভিন্ন দিক। মাদল, বাঁশি ও আঞ্চলিক বাদ্যযন্ত্রের সাহায্যে পরিবেশিত এ নৃত্য দর্শকদের দারুণ আনন্দ দেয়।

অনুষ্ঠানে নেপালের বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী নৃত্য পরিবেশিত হয়
অনুষ্ঠানে নেপালের বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী নৃত্য পরিবেশিত হয়

বাংলাদেশি শিল্পীদের মধ্যে অংশ নেন তনুশ্রী মাঞ্জি ও আমিনুল আশরাফ। তনুশ্রীর পরিবেশনার শুরুতেই ছিল রবীন্দ্রনাথের প্রেম পর্যায়ের গান ‘তুমি রবে নীরবে’র সঙ্গে নাচ। এরপর মণিপুরী নৃত্যে ছন্দে রাধা-কৃষ্ণের প্রেম আখ্যান তুলে ধরেন দুই শিল্পী। সব শেষে ছিল লোকজ নৃত্য। তারা ‘ঘাটে লাগাইয়া ডিঙ্গা’ ও ‘বকুল ফুল বকুল ফুল সোনা দিয়া হাত কেন বান্ধাইলি’ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন।

নেপাল শিল্প-সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ একটি দেশ। বৃহস্পতিবার দেড় ঘণ্টার এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে নেপালের শিল্প-সংস্কৃতির বৈচিত্র্যময় দিক যেমন ঢাকার দর্শকেরা জানতে পেরেছেন, তেমনি দুই দেশের শিল্পীরা পারস্পরিক মতবিনিময়ের সুযোগ পেয়েছেন। আয়োজকদের মতে, এ ধরনের আয়োজন দুই দেশের শিল্প-সংস্কৃতির উন্নয়ন আর বিকাশে সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখবে।