নতুন মুখের সন্ধানে নিয়ে যা বললেন কবরী ও ববিতা

চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির উদ্যোগে শুরু হওয়া ‘নতুন মুখের সন্ধানে’ কার্যক্রমকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের দুই বরেণ্য অভিনয়শিল্পী সারাহ বেগম কবরী ও ফরিদা আকতার ববিতা। প্রথম আলোর সঙ্গে আজ বৃহস্পতিবার সকালে আলাপে তাঁরা দুজন এ কথা বলেন। 

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে আশির দশকে শুরু হয় নতুন মুখের সন্ধানে কার্যক্রম। এই কার্যক্রম তিন বছর ছিল। তিনবারের সেই আয়োজনে দেশের চলচ্চিত্র পেয়েছিল দারুণ কয়েকজন চিত্রনায়ক-নায়িকা ও খল চরিত্রের অভিনয়শিল্পীকে। যাঁরা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে সুপারস্টার খেতাব অর্জন করেন। উপহার দেন ব্যবসাসফল ও জনপ্রিয় অনেক চলচ্চিত্র। এঁদের মধ্যে যাঁদের নাম না বললেই নয়, তাঁরা হলেন মান্না, দিতি, মিশা সওদাগর, আমিন খান, অমিত হাসান প্রমুখ।

২৮ বছর পর শুরু হচ্ছে ‘নতুন মুখের সন্ধানে’ কার্যক্রম। এবার এ উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি। এর আগে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থার (বিএফডিসি) উদ্যোগে ১৯৮৪, ১৯৮৮ ও ১৯৯০ সালে ‘নতুন মুখের সন্ধানে’ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। ১৪ জুলাই রাজধানীর ঢাকা ক্লাব মিলনায়তনে নতুন মুখের সন্ধানে কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু হয়। এদিন পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হয় চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির। এবারের আয়োজনে সহযোগিতায় থাকছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি)

ষাটের দশকে সুভাষ দত্তের ‘সুতরাং’ ছবি দিয়ে চলচ্চিত্রে নাম লেখান কবরী। অভিনয়নৈপুণ্যে বাংলাদেশের মানুষ তাঁকে নিজেদের মনে মিষ্টি মেয়ের আসন দিয়েছে। বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের মিষ্টি মেয়েখ্যাত অভিনেত্রী কবরী বলেন, ‘এটা অবশ্যই সুন্দর উদ্যোগ। এমন একটি উদ্যোগের জন্য চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি সাধুবাদ পেতেই পারে। তবে কোনো অবস্থায় যাতে আয়োজন প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, সেদিকে কঠোর নজরদারি রাখতে হবে। এমন কিছু নতুন মুখ তুলে আনা উচিত, যাঁরা সত্যিকার অর্থেই মেধাবী। পাশাপাশি পরিচালকদের আধুনিক চিন্তাভাবনার অধিকারী হতে হবে। যেসব তরুণ-তরুণী নতুন মুখের সন্ধানে কার্যক্রমের মাধ্যমে উঠে আসবে, তাদের নিয়ে ভালো মানের চলচ্চিত্র বানাতে হবে। তরুণদের অনেক বেশি কাজ করতে দিতে। পুরোনো যাঁরা আছেন, তাঁরাও কাজ করবেন। এভাবে এগোবে চলচ্চিত্র।’

সত্তরের দশকে ‘অশনিসংকেত’ ছবিতে ববিতা অভিনয় করেছিলেন। সত্যজিৎ রায়ের এই ছবির মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র অঙ্গন চিনে নেয় তাঁকে। সেই থেকে সবার কাছে তিনি অনঙ্গ বউ। জহির রায়হান পরিচালিত ‘সংসার’ ছিল তাঁর প্রথম ছবি। এরপর এই পরিচালকই ‘জ্বলতে সুরুজ কা নিচে’ নামে একটি উর্দু ছবি শুরু করেন। কিন্তু সে ছবিটি শেষ হয়নি। ১৯৬৯ সালে জহির রায়হানের ‘শেষ পর্যন্ত’ ছবিটিতে নায়িকা হিসেবে প্রথম অভিনয় করেন।

বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের গুণী অভিনয়শিল্পী ববিতাও মনে করেন, ‘নতুন মুখের সন্ধানে’ একটি সময়োপযোগী ও চমৎকার উদ্যোগ। তিনি বলেন, ‘বর্তমান সময়ে আমি দেখছি, নতুনেরাই বেশ ভালো করছেন। তরুণ অনেক প্রতিভাবান আমাদের দেশে ছড়িয়ে আছে। গানে তো এখন যাঁরা কাজ করছে, তাঁদের বেশির ভাগই এসেছে রিয়্যালিটি শো থেকে। আমি মনে করি, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি একটা শুভ উদ্যোগ নিয়েছে। সফলভাবে এই আয়োজন শেষ করতে পারলেই চলচ্চিত্র কিছু নতুন মুখ পাবে। আমরা বাইরের দেশে দেখি, পুরোনোরা যেমন দাপটের সঙ্গে কাজ করেন, তাঁদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অনেক তরুণ নায়ক-নায়িকাকেও কাজ করানো হয়।’

কিছুদিন আগে ‘নতুন মুখের সন্ধানে’ কার্যক্রমের সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এবারের এই আয়োজন উৎসর্গ করা হয়েছে প্রয়াত সোহেল চৌধুরী, দিতি আর মান্নাকে।

চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার জানান, আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে ‘নতুন মুখের সন্ধানে’ কার্যক্রমের নিবন্ধনপ্রক্রিয়া শুরু হবে। রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে গ্র্যান্ড ওপেনিংয়ের মধ্য দিয়ে শুরু হবে নিবন্ধন কার্যক্রম। একই সঙ্গে নায়ক, নায়িকা, খল অভিনেতা, পার্শ্ব অভিনেতা, কৌতুকশিল্পী, শিশুশিল্পী খুঁজে বের করা হবে।