একুশে পদকের টাকায় চিকিৎসা!

সুজেয় শ্যাম। ছবি: প্রথম আলো
সুজেয় শ্যাম। ছবি: প্রথম আলো

‘এ বছর একুশে পদকের সঙ্গে দুই লাখ টাকা পেয়েছিলাম। সেই টাকা আর আগের কিছু জমানো টাকা দিয়ে আমার চিকিৎসা চলছে।’ বললেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সুরকার ও সংগীত পরিচালক সুজেয় শ্যাম। গত বছর এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্রীয় সম্মান একুশে পদকে ভূষিত করা হয়।

শারীরিক পরীক্ষার জন্য সপ্তাহ তিনেক আগে ভারতের বেঙ্গালুরু যান ৭৩ বছর বয়সী সুজেয় শ্যাম। প্রয়োজনীয় কিছু পরীক্ষা শেষে সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁর দেহে ক্যানসারের আশঙ্কা করেন। এ ব্যাপারে আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য তাঁকে এমআরআই করার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু তখন এই বরেণ্য সংগীত ব্যক্তিত্বের হাতে প্রয়োজনীয় অর্থ অবশিষ্ট না থাকায় চিকিৎসা অসম্পূর্ণ রেখেই দেশে ফিরে আসেন।

দেশে ফেরার কিছুদিন পর সুজেয় শ্যামের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। ব্যথা যখন চরমে, তখন বাধ্য হয়ে জমানো টাকা থেকে ঢাকার একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে এমআরআই পরীক্ষা করান। এরপর তাঁর প্রোস্টেটে ক্যানসার ধরা পড়ে।

সুজেয় শ্যাম বলেন, ‘আমি কখনো চাকরি করিনি। গান করে আয় করেছি। এই আয় দিয়েই সংসার চালানোর পাশাপাশি কিছু টাকা জমিয়েছি। সেই জমানো টাকায় যতটা সম্ভব চিকিৎসা চালিয়ে নিচ্ছি।’

প্রোস্টেট ক্যানসারের চিকিৎসা করানোর জন্য আগামী ৪ আগস্ট আবার ভারতের কলকাতায় যাওয়ার কথা সুজেয় শ্যামের। সেখান থেকে পরদিন বেঙ্গালুরু যাবেন। প্রোস্টেটে ক্যানসার ধরা পড়লেও বছর খানেক ধরে সুজেয় শ্যাম চোখের সমস্যায় ভুগছেন। চোখের চিকিৎসার জন্য তিন মাস পর পর কলকাতায় যেতে হয় তাঁকে। সুজেয় শ্যাম বলেন, ‘তিন মাস পর পর কলকাতায় গিয়ে একটি করে ইনজেকশন দিয়ে আসতে হয়। প্রতিবার ইনজেকশনের জন্য ২৬ হাজার টাকা খরচ হয়।’

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী হিসেবে দেশ স্বাধীনের ৪৫ বছর পর মুক্তিযোদ্ধার সনদ পেয়েছেন সুজেয় শ্যাম। তবে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কোনো ভাতা পান না বরেণ্য এই সুরকার ও সংগীত পরিচালক। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শেষ গান এবং পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের পর প্রথম গানের সুর করেন সুজেয় শ্যাম। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গীতিকার শহীদুল আমিনের লেখা ‘বিজয় নিশান উড়ছে ওই’ গানের সুর ও সংগীত পরিচালনা করেন তিনি। গানটির প্রধান কণ্ঠশিল্পী ছিলেন অজিত রায়। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত সুজেয় শ্যামের অন্য গানগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি’, ‘রক্ত চাই রক্ত চাই’, ‘আহা ধন্য আমার জন্মভূমি’, ‘আয়রে চাষি মজুর কুলি’, ‘মুক্তির একই পথ সংগ্রাম’ ও ‘শোনরে তোরা শোন’।

ইউনিলিভারের প্রযোজনায় ২০০৯ সালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ৫০টি গান এই প্রজন্মের শিল্পীদের দিয়ে নতুন সংগীতায়োজনে গাইয়েছেন সুজেয় শ্যাম। তাঁকে সহযোগিতা করেন পার্থ বড়ুয়া। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে ২০১৪ সালের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে শুদ্ধ সুরে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। এর সংগীতায়োজন করেন সুজেয় শ্যাম।

সুজেয় শ্যাম ১৯৪৬ সালের ১৪ মার্চ সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে ঢাকার মিরপুরে বসবাস করছেন বরেণ্য এই সংগীত পরিচালক।