'আমাকে দেখে কাঁদলেন, হাসলেন' - পপি

হাসপাতালে এটিএম শামসুজ্জামানের পাশে চিত্রনায়িকা পপি। ছবি: সংগৃহীত
হাসপাতালে এটিএম শামসুজ্জামানের পাশে চিত্রনায়িকা পপি। ছবি: সংগৃহীত

‘হাসপাতালে আমাকে দেখামাত্রই হাউমাউ করে কেঁদে ফেললেন বাবা (এ টি এম শামসুজ্জামানকে বাবা বলেই ডাকেন পপি)। কিছুক্ষণ পর স্বাভাবিক হন। এরপর হাসাহাসি, আড্ডা, কত কি স্মৃতিকথা।’ বললেন চিত্রনায়িকা পপি। বরেণ্য অভিনয়শিল্পী এ টি এম শামসুজ্জামানকে হাসপাতালে দেখতে গেলে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়।

আজ রোববার সকাল ১০টার দিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এ টি এম শামসুজ্জামানকে দেখতে যান পপি। বেশ কিছুক্ষণ তিনি তাঁর পাশে ছিলেন। গল্প করেছেন। তাঁর সঙ্গে কাটানো মুহূর্তের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। ছবির সঙ্গে অনুভূতিও ব্যক্ত করেছেন।
১৯৯৭ সালে মনতাজুর রহমান আকবরের ‘কুলি’ সিনেমায় অভিনয় দিয়ে চলচ্চিত্রজীবন শুরু পপির। পরের বছর দিলীপ সোমের ‘তোমার জন্য ভালোবাসা’ ছবিতে অভিনয় করতে গিয়ে এ টি এম শামসুজ্জামানের সঙ্গে পরিচয় হয়। প্রথম পরিচয়ে এ টি এম শামসুজ্জামানের সঙ্গে বাবা–মেয়ের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাঁরা একসঙ্গে ৫০টির মতো সিনেমায় অভিনয় করেছেন বলে জানান পপি। নাটক আর টেলিছবিতেও অভিনয় করা হয়েছে তাঁদের। ২১ বছর ধরে তাঁদের মধ্যে বাবা–মেয়ের সম্পর্কই রয়েছে।
পপি বলেন, ‘এত দিন কেন দেখতে যাইনি, তা নিয়ে বাবা খুব অভিমান করেছেন। তবে আমাকে দেখে তিনি ভীষণ খুশি হয়েছেন। আমি কিন্তু হাসপাতালে যেতে না পারলেও নিয়মিত খোঁজখবর রেখেছি।’
এ টি এম শামসুজ্জামান একজন অসাধারণ অভিনেতাই শুধু নন, তাঁকে শিক্ষক, গুরুজন, বাবা উল্লেখ করে পপি বলেন, ‘আমার ভালোবাসার একজন প্রিয় মানুষ। তাঁর হাসি আমার কাছে হাজার কোটি টাকার চেয়ে বেশি দামি। আমি অনেক ভাগ্যবান, তিনি বাবা হিসেবে সব সময় আমার পাশে থেকেছেন। আমার সব প্রাপ্তি ও ভালো কাজে খুশি হয়েছেন, উৎসাহ দিয়েছেন,অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন। এ জন্য আমি তাঁর কাছে চিরকৃতজ্ঞ।’
এ টি এম শামসুজ্জামান যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে বাসায় ফেরেন—সেটাই কামনা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কাপ্রাপ্ত এই চিত্রনায়িকার। তিনি বলেন, ‘গুরুতর অসুস্থ বরেণ্য এই অভিনয়শিল্পীকে আমরা আর এই অবস্থায় দেখতে চাই না, তিনি সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসুন। সবাই আমার বাবার জন্য দোয়া করবেন, আল্লাহ যেন তাঁকে তাড়াতাড়ি সুস্থ করে দেন। বাবার পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে, তিনি সব সময় শিল্পীদের ভালোবাসেন ও পাশে থাকেন। তাঁর প্রতি অনেক ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা।’

তিন সপ্তাহ ধরে রাজধানীর পুরান ঢাকায় গেন্ডারিয়ার আসগর আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এ টি এম শামসুজ্জামান। হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মতিউল ইসলামের তত্ত্বাবধানে তিনি চিকিৎসাধীন।

এ টি এম শামসুজ্জামান বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা, পরিচালক, কাহিনিকার, চিত্রনাট্যকার, সংলাপ লেখক ও গল্পকার। অভিনয়ের জন্য পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। শিল্পকলায় অবদানের জন্য পেয়েছেন একুশে পদক।

নোয়াখালীর দৌলতপুরে নানাবাড়িতে এ টি এম শামসুজ্জামান ১৯৪১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার ভোলাকোটের বড়বাড়ি আর ঢাকায় থাকতেন দেবেন্দ্রনাথ দাস লেনে। পড়াশোনা করেছেন ঢাকার পোগোজ স্কুল, কলেজিয়েট স্কুল, রাজশাহীর লোকনাথ হাইস্কুলে। তাঁর বাবা নূরুজ্জামান ছিলেন নামকরা উকিল এবং শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের সঙ্গে রাজনীতি করতেন। মা নুরুন্নেসা বেগম। পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে শামসুজ্জামান ছিলেন সবার বড়।

এ টি এম শামসুজ্জামানের চলচ্চিত্র জীবনের শুরু ১৯৬১ সালে পরিচালক উদয়ন চৌধুরীর ‘বিষকন্যা’ চলচ্চিত্রে সহকারী পরিচালক হিসেবে। প্রথম কাহিনি ও চিত্রনাট্য লিখেছেন ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রের জন্য। ছবির পরিচালক ছিলেন নারায়ণ ঘোষ মিতা, এ ছবির মাধ্যমেই অভিনেতা ফারুকের চলচ্চিত্রে অভিষেক। এ পর্যন্ত শতাধিক চিত্রনাট্য ও কাহিনি লিখেছেন। প্রথম দিকে কৌতুক অভিনেতা হিসেবে চলচ্চিত্র জীবন শুরু করেন তিনি। অভিনেতা হিসেবে চলচ্চিত্র পর্দায় আগমন ১৯৬৫ সালের দিকে। ১৯৭৬ সালে চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেনের ‘নয়নমণি’ চলচ্চিত্রে খলনায়কের চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে আলোচনায় আসেন তিনি। ১৯৮৭ সালে কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘দায়ী কে?’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। রেদওয়ান রনি পরিচালিত ‘চোরাবালি’ ছবিতেও অভিনয় করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে পার্শ্বচরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার সম্মাননা অর্জন করেন।